উদ্যোক্তা আলেমের গল্প
আলেমরা ব্যবসায় যুক্ত হলে মানুষ ভালো জিনিস পাবে

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১৪ এএম

পড়াশোনা শেষে সখের শিক্ষকতার পেশায় যুক্ত হয়েছিলেন তরুণ আলেম মুফতি হাবিবুল্লাহ জোয়ারদার। কিন্তু বেতন ছিল অস্বাভাবিক কম। যা দিয়ে পরিবারের খরচ চালানোই ছিল কষ্টের। এরপরই তরুণ এই আলেম সিদ্ধান্ত নেন উদ্যোক্তা হওয়ার। ৮ বছর আগে মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় শুরু করা ব্যবসায় এখন উন্নতি হয়েছে।
বর্তমানে এই আলেম উদ্যোক্তার ব্যবসায় বিনিয়োগ রয়েছে ২০ লাখ টাকা। প্রতি মাসে তিনি ৫ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করতে পারেন। শুধু নিজেই স্বাবলম্বী হননি হাবিবুল্লাহ জোয়ারদার, তার অধীনে নিয়মিত কাজ করছে ১৫ জন কর্মী।
ব্যবসায় লাভের টাকা থেকে তিনি গত রমজানে উমরাহ করে এসেছে। মজার বিষয় হলো– এই ব্যবসা করতে গিয়ে কিন্তু তিনি নিজের অত্যন্ত পছন্দের পেশা শিক্ষকতা ছাড়েননি। শিক্ষকতার পাশাপাশিই ব্যবসা করছেন।
যেভাবে ব্যবসায় যুক্ত হলেন
মাওলানা বজলুর রহমান জোয়ারদারের ছেলে মুফতি হাবিবুল্লাহ জোয়ারদারের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া গ্রামে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ব্যবসা করেন। নিজেদের পণ্যের বাহারি বিজ্ঞাপন দিয়ে পণ্য বিক্রি করেন। মাওলানা হাবিবুল্লাহ অনলাইনে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দেখে পণ্য ক্রয় করে প্রতারিতও হন অনেকবার।
বিজ্ঞাপনে পণ্য যেমন দেখেছিলেন, বাস্তবে পণ্যটি তার ধারেকাছেও নেই। সিদ্ধান্ত নেন, তিনিও অনলাইনে ব্যবসা করবেন। কিন্তু, অন্যকে ঠকানোর জন্য নয়, মানুষকে ভালো কিছু দেওয়ার জন্য।
কিন্তু, কী নিয়ে ব্যবসা করবেন। ছোট বয়স থেকে তিনি মাদ্রাসায় থেকেছেন। পড়াশোনা শেষ করেও মাদ্রাসাতেই শিক্ষকতা করছেন। ব্যবসার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতাও নেই। অনেক ভেবেচিন্তে তিনি মধুর ব্যবসার সিদ্ধান্ত নিলেন। কারণ, তার কর্মস্থল খুলনা সুন্দরবনের কাছেই। এখন থেকে মধু সংগ্রহ করা যেমন সহজ, তেমন এই পণ্য সংগ্রহ করতেও অসুবিধা হবে না।
ব্যবসায় পুঁজি ও তড়িৎ সাফল্য
মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ করে ফেসবুকে ‘তাকওয়া শপ বিডি’ নামে পেজ খুলে মধু বিক্রির বিজ্ঞাপন দেন। মাওলানা হাবিবুল্লাহ কল্পনাও করেননি এত তাড়াতাড়ি সাড়া পাবেন। চট্টগ্রাম থেকে একজন ক্রেতা পাঁচ হাজার টাকার মধু অর্ডার করেন। মাওলানা হাবিবুল্লাহ অনেকটা উৎকণ্ঠার মধ্যেই পণ্য চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দেন। ক্রেতা মধু পেয়ে খুব খুশি হন। মাওলানা হাবিবুল্লাহকে উৎসাহ দেন। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, মাদ্রাসায় পড়ানোর পাশাপাশি এই ব্যবসা চালিয়ে যাবেন।
মাওলানা হাবিবুল্লাহ বলেন, আল্লাহ তায়ালা আমার এই ব্যবসায় অনেক বরকত দিয়েছেন। মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পুঁজির ব্যবসায় ছয় মাসে আমার পূঁজি হয় ১০ লাখ টাকার বেশি। আর বর্তমানে পুঁজি আছে ২০ লাখ টাকার বেশি। এখন আমি স্বাচ্ছন্দ্যে চলার পাশাপাশি পরিবারকেও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে পারি। শুধু তা-ই নয় গেল রমজানে আমি ওমরাহও করে এসেছি,আলহামদুলিল্লাহ। যা আমার জন্য অনেক তৃপ্তির একটি বিষয়।
মাওলানা হাবিবুল্লাহ আরো বলেন, আমি শুরু থেকেই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, পণ্যে কখনো ভেজাল মেশাবো না। মধু এমন একটি পণ্য, যা নিয়ে অনেকেই প্রতারণা করে। ক্রেতা যখন আমার কাছ থেকে মধু সংগ্রহ করে, তখন খুব খুশি হয়। কারণ, সে ভালো ও খাঁটি মধু পায়। পরবর্তীতে দেখা যায় সে আমার কাছে থেকে আরো মধু নেয় এবং আরো ক্রেতারও ব্যবস্থা করে দেয়। আমার ব্যবসায় উন্নতির এটিও একটি সিক্রেট দিক।
শিক্ষকতা ঠিক রেখেই যেভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন
আলেম উদ্যোক্তা মাওলানা হাবিবুল্লাহ বলেন, কষ্ট একটু বেশি হয়। তবে, মাদ্রাসায় পড়াশোনার ক্ষতি হতে দেই না।
তিনি বলেন, আলেমরা যদি ব্যবসায় একটু সময় দিতে পারেন। তাহলে মানুষ ভালো জিনিস পাবে। আলেমরাও স্বাবলম্বী হতে পারবেন। তবে, লক্ষ রাখতে হবে তার অদূরদর্শিতা ও অনভিজ্ঞতার কারণে কোনো ক্রেতা যেন না ঠকেন।
অধিকাংশ তরুণ আলেম পড়াশোনা শেষে মাদ্রাসায় শিক্ষকতা বা মসজিদে ইমামতির কাজে খুব সামান্য বেতনে যুক্ত হয়ে যান। অথচ বর্তমান সময় অনুযায়ী এই দুই সেক্টরে যে বেতন দেওয়া হয় তা দিয়ে ঘর-সংসার চালানো শুধু কঠিনই নয় অসম্ভবও। তাই মসজিদ মাদ্রাসায় খেদমতের পাশাপাশি আপনারাও ব্যবসায় যুক্ত হতে পারেন। আপনার আশপাশে যে পণ্যের প্রাচুর্য বেশি প্রয়োজনে সেটি নিয়েই শুরু করে দিন। প্রাথমিক পর্যায়ে স্বল্প পরিসরেই করুন। ইনশাআল্লাহ আর্থিক কষ্ট দূর হয়ে যাবে। তাছাড়া আল্লাহ তায়ালা ব্যবসায় বরকতের ওয়াদা করেছেন।