Logo
Logo
×

বিনোদন

অস্কারে সেরা চলচ্চিত্রসহ ৫টি পুরস্কার জিতল যে সিনেমা

Icon

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৫, ০৮:১৫ পিএম

অস্কারে সেরা চলচ্চিত্রসহ ৫টি পুরস্কার জিতল যে সিনেমা

স্বাধীন চলচ্চিত্র ‘আনোরা’, যা এক রুশ ধনকুবেরের ছেলের সঙ্গে এক যৌনকর্মীর বিয়ে ও তার করুণ পরিণতির গল্প নিয়ে নির্মিত। এ সিনেমাটিই এবারের অস্কারে বড় সাফল্য অর্জন করেছে। কেবল সেরা চলচ্চিত্র-ই নয়, পাঁচটি বিভাগে পুরস্কার জিতেছে চলচ্চিত্রটি।

মার্কিন স্বতন্ত্র পরিচালক শন বেকার পরিচালিত এই সিনেমাটি যৌনকর্মের বাস্তবতা ও হৃদয়বিদারক দিকগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি হাস্যরসের মিশেলে দর্শকদের মন জয় করেছে।

মাত্র ৬ মিলিয়ন বা ৬০ লাখ ডলারে নির্মিত চলচ্চিত্রটিতে বিতর্কিত বিষয়বস্তু থাকা সত্ত্বেও অ্যাকাডেমি পুরস্কারজয়ীদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে। সিনেমাটি সেরা পরিচালক এবং সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যসহ পাঁচটি পুরস্কার জিতেছে।

পুরস্কার নেওয়ার সময় পরিচালক বেকার বলেন, ‘আমি অ্যাকাডেমিকে ধন্যবাদ জানাই একটি সত্যিকারের স্বাধীন চলচ্চিত্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য। এই সিনেমাটি অসাধারণ স্বাধীন শিল্পীদের রক্ত, ঘাম ও পরিশ্রমের ফসল। দীর্ঘজীবী হোক স্বাধীন চলচ্চিত্র!’

কান থেকে অস্কার পর্যন্ত ‘আনোরা’র যাত্রা

‘আনোরা’ সিনেমাটি প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসে কান চলচ্চিত্র উৎসবে। যেখানে এটি স্বর্ণপাম (Palme d’Or) জিতে নেয়। এটি ছিল ২০১১ সালে টেরেন্স মালিকের ‘দ্য ট্রি অফ লাইফ’ এর পর প্রথম কোনো মার্কিন চলচ্চিত্র, যা কান উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার জেতে।

তবে অস্কার জেতার পথটি সহজ ছিল না।

বেকারের আগের চলচ্চিত্রগুলো, যেমন ‘রেড রকেট’ (২০২১) যৌনকর্মীদের জীবন তুলে ধরলেও, যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার সিনেমা হলগুলোতে সাফল্য পায়নি।

এছাড়া জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত গোল্ডেন গ্লোবসে ‘আনোরা’ কোনো পুরস্কার জিততে ব্যর্থ হয়। ফলে অনেকেই ভেবেছিল সিনেমাটির পুরস্কারের দৌড় শেষ।

কিন্তু এরপর যখন প্রতিদ্বন্দ্বী সিনেমাগুলো, যেমন- ‘এমিলিয়া পেরেজ’ বিতর্কের মুখে পড়ে। তখন ‘আনোরা’ দর্শকদের প্রশংসা অর্জন করতে থাকে। বিশ্বব্যাপী এটি ৪০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করে এবং পরিচালক, লেখক ও সমালোচকদের সংগঠনগুলো থেকে একাধিক পুরস্কার জিতে নেয়।

অবশেষে রোববার রাতে সিনেমাটি হলিউডের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার—সেরা চলচ্চিত্র—জিতে নেয়।

যৌনকর্মের বাস্তব চিত্রায়ন

‘আনোরা’ সিনেমাটির গল্প নিউ ইয়র্কের এক স্ট্রিপ ক্লাব থেকে শুরু হয় এবং এটি বেকারের পঞ্চম চলচ্চিত্র, যা যৌনকর্মের বাস্তবতা নিয়ে কাজ করেছে।

বেকার তার আগের চলচ্চিত্রগুলোর মতো এবারও বাস্তব জীবনের নৃত্যশিল্পী ও যৌনকর্মীদের অভিনয়ে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তারা শুধু পর্দায় উপস্থিতই ছিলেন না, বরং চরিত্রগুলোর সংলাপ ও দৃশ্যগুলোর বাস্তবধর্মী উপস্থাপনাতেও পরামর্শ দিয়েছেন।

চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্র আনি (অস্কার বিজয়ী মিকি ম্যাডিসন) এক বিত্তশালী রুশ যুবক ইভান (মার্ক আইডেলস্টেইন)-এর সঙ্গে আকস্মিকভাবে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন এবং লাস ভেগাসে তারা গোপনে বিয়েও করেন।

তবে এই গল্পটি ‘প্রিটি ওম্যান’-এর রূপকথার মতো নয়।

বিয়ের পরপরই ইভান বুঝতে পারেন যে, তার ধনী বাবা-মা বিষয়টি জানতে পেরেছেন এবং এতে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে যান।

এরপর তোরাসের (কারেন কারাগুলিয়ান) নেতৃত্বে একদল গুন্ডা এসে আনি-কে আটকে রাখে। ফলে শুরু হয় নাটকীয় মোড়।

হাস্যরস ও হৃদয় ভাঙার সংমিশ্রণ

বেকার তার চলচ্চিত্রে নব্য-বাস্তববাদী শৈলী ব্যবহার করেন এবং গল্পে হাস্যরসও যোগ করেন।

‘আনোরা’-এর দ্বিতীয় অংশে রয়েছে একটি উন্মাদনাপূর্ণ অনুসন্ধান। যেখানে ইভানকে খুঁজতে গিয়ে নানা হাস্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।

বেকার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি সত্যকে তুলে ধরতে চাই, বাস্তবতাকে যতটা সম্ভব কাছ থেকে দেখাতে চাই। আর সত্যের অংশ হিসেবে হাস্যরস প্রয়োজন। কারণ অনেক সময় আমরা কষ্ট লুকোতে হাসি ব্যবহার করি’।

কিন্তু শেষ দৃশ্যে এসে সেই হাস্যরস উধাও হয়ে যায়। আনি বুঝতে পারে তার স্বপ্নময় জীবন মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে পড়েছে এবং প্রথমবারের মতো সে তার বাহ্যিক শক্তিমত্তার আড়াল থেকে প্রকৃত দুর্বলতাকে প্রকাশ করে।

যৌনকর্মীদের অধিকারের পক্ষে বার্তা

পুরস্কার গ্রহণের সময় পরিচালক বেকার এবং অভিনেত্রী মিকি ম্যাডিসন যৌনকর্মীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন এবং তাদের অবস্থানকে স্বীকৃতি দেওয়ার ও আইনগতভাবে সুরক্ষা দেওয়ার আহ্বান জানান।

বেকার বলেন, যারা তাদের জীবন কাহিনি আমার সঙ্গে ভাগ করেছেন, আমি তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

অন্যদিকে অস্কারজয়ী অভিনেত্রী মিকি ম্যাডিসন বলেন, ‘আমি অসাধারণ সব নারীদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছি, যারা এই সমাজের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমি তাদের পাশে থাকব এবং তাদের অধিকারের পক্ষে আওয়াজ তুলব’।

মূলত এবারের অস্কারে সেরা চলচ্চিত্রসহ পাঁচটি পুরস্কার জিতে ‘আনোরা’ প্রমাণ করেছে, স্বাধীন সিনেমা ও সাহসী গল্প বলার শক্তি এখনো বিদ্যমান। যৌনকর্মের বাস্তবতা, হাস্যরস এবং মানবিক সম্পর্কের জটিলতা তুলে ধরে এটি দর্শকদের হৃদয়ে স্থায়ী ছাপ ফেলেছে। সূত্র: হুরিয়েত ডেইলি নিউজ

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম