রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা চলছে, নিরাপত্তা চান দিতির মেয়ে

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:০৭ পিএম

হামলার ঘটনায় নতুন তথ্য দিয়েছেন চিত্রনায়িকা পারভীন সুলতানা দিতির মেয়ে লামিয়া চৌধুরী। লামিয়া তার ফেসবুকে লিখেছেন- আমি গভীর দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, কিছু ব্যক্তি এ ঘটনাকে রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং আমাকে রাজনীতিতে জড়ানোর অপচেষ্টা করছে।
সোমবার দুপুরে তিনি এ কথা জানান।
‘আমি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিনীত অনুরোধ করছি, দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। আমি আমার এবং আমার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতা চাই।’
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আত্মীয়দের সঙ্গে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে হামলার শিকার হন লামিয়া। গত শনিবার ঘটনার সময় তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করেন। সেই লাইভে লামিয়ার গাড়ি ভাঙচুর করতে দেখা যায়। ভিডিওতে লামিয়া বলছিলেন, তার পা ভেঙে ফেলা হয়েছে। তিনি হাঁটতে পারছেন না। তার গাড়িও ভাঙা হয়েছে।
ঘটনার দুই দিনের মাথায় নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন লামিয়া চৌধুরী।
সেখানে তিনি লিখেছেন, গত পরশু আমার মায়ের (প্রয়াত চিত্রনায়িকা পারভীন সুলতানা দিতি) গ্রামের বাড়ি সোনারগাঁয় আমাদের পারিবারিক জমি দখলের উদ্দেশ্যে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আমার ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। লাঠি, দেশীয় অস্ত্র এবং ইট-পাথর নিয়ে তারা আমার ওপর নির্মম আঘাত করে, যার ফলে আমি গুরুতর আহত হয়েছি এবং ইমিডিয়েট সার্জারি করানো লাগবে।
লামিয়ার মতে, এ হামলা তাদের জমি দখল এবং তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এ নিয়ে তিনি তার নিরাপত্তা দাবি করেছেন এবং প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলত শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চিত্রনায়িকা দিতির পাঁচ ভাই ও তিন বোন। তার ৪ নম্বর ভাই লামিয়ার মামা টিপু সুলতান নয় বছর আগে মারা গেছেন। তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে লামিয়াদের জমিসংক্রান্ত বিরোধ চলছে। এ নিয়ে আদালতে একটি মামলাও চলমান।
ঘটনার দুজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, শনিবার লামিয়ার নানাবাড়িতে জমি নিয়ে বিচার-সালিশ বসানো হয়। সালিশে লামিয়ার পক্ষে ঢাকা থেকে আসা কয়েকজন ছিলেন।
অপরদিকে লামিয়ার মামির পক্ষে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেনের লোকজন অংশ নেন। সালিশের একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। একপর্যায়ে দুইপক্ষই হাতাহাতিতে জড়ায়। তখন লামিয়ার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। লামিয়ার ওপর হামলায় বিএনপি নেতা মোশাররফ হোসেনের লোকজন অংশ নেন।
জানতে চাইলে শনিবার বিকালে বিএনপি নেতা মোশাররফ হোসেন বলেন, আমার লোকজন কোনো হামলার সঙ্গে জড়িত না। মহিলারা মহিলারা এটা করছে। আমিও গিয়েছি ঘটনার অনেক পরে। সেখানে গিয়ে শুনেছি, লামিয়া লোকজন নিয়ে তার মামিকে মারধর করেছেন।
একই দিনে লামিয়ার মামি লায়লা লুৎফুন্নাহারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তিনি সেদিন বলেছিলেন, আমার মৃত স্বামীর নামে ৩৮ শতাংশ জমি আছে। সেখানে আমি আমার দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করি। আমার একটি ছেলে অটিস্টিক। আমার স্বামীর জমি দখল করতে চায় লামিয়ারা। এ নিয়ে সালিশ বসলে লামিয়া ঢাকা থেকে লোকজন নিয়ে এসে আমার ওপর হামলা চালায়। এতে আমি আহত হই।
লায়লা লুৎফুন্নাহারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কথা হয় লামিয়া চৌধুরীর সঙ্গে। গত শনিবার সন্ধ্যায় তিনি জানান, তার মামির এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
লামিয়া চৌধুরী বলেন, আমি তো আমাদের জায়গার দখলই নিতে পারছি না, সেখানে অন্যের জমি দখল করতে কেন যাব! অদ্ভুত তো। আশ্চর্য। এটা কেমন মিথ্যাচার! আমার ছোট মামি শান্তি মতো থাকেন, তাকে কেউই ডিস্টার্ব করে না। আমার মামার মৃত্যুর পর কোথায় শোক প্রকাশ করবেন, তা না করে এই মামি সম্পত্তি নিয়েই ওঠেপড়ে লেগেছেন।
লামিয়া বলেন, তিনি তার স্বামীর সম্পত্তি নিয়ে যা ইচ্ছা করুক, তাতে কোনো সমস্যা নেই; কিন্তু আমাকে, আমার পরিবারকে তো এভাবে সবার সামনে অসম্মান করতে পারেন না। লোকজন ডেকে এনে আমার ওপর হামলা করতে পারেন না। আমার গাড়ি ভাঙচুর করতে পারেন না। পা ভেঙে দিতে পারেন না। আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না। ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা আমার গা থেকে ওড়না টেনে ফেলে দিয়েছে! আজকের ঘটনার অনেক ভিডিও ফুটেজ আছে। তাতে আমার সঙ্গে কী কী ঘটেছে তার স্পষ্ট প্রমাণও আছে। আমার অন্য আত্মীয়স্বজনও সেখানে ছিলেন। তারা সবাই দেখেছেন।