
মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সঙ্গে মারাঠি রাজা সম্ভাজি মহারাজের তুমুল লড়াইয়ের কাহিনী নিয়ে তৈরি ‘ছাবা’ সিনেমা। ছাবা মানে সিংহ শাবক। এই সিনেমায় সম্ভাজিকে ছাবা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। পর্দায় এ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভিকি কৌশল। তাই এ সিনেমাটিকে পুরোপুরি ভিকিরই বলা যায়। এতে আওরঙ্গজেবের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অক্ষয় খান্না।
একটি মারাঠি ভাষার উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন পরিচালক লক্ষ্মণ উতেকার।
সিনেসাটিতে মূলত মারাঠা রাজা শিবাজি মহারাজের ছেলে সম্ভাজি মহারাজের বীরত্ব, তার যুদ্ধের কাহিনী ও আত্মত্যাগ উঠে এসেছে। রায়গড়, নাসিক, পুনের যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অ্যাকশন ও নাটকীয়তায় ভরপুর সিনেমাটিতে।
সম্ভাজি মহারাজের চরিত্রে ভিকি কৌশলের অভিনয়ই সিনেমাটির একমাত্র দেখার বিষয়। বাকি সবটাই চোখ ধাঁধানো ক্যামেরার খেলা। বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য চিত্রনাট্যে মহারাষ্ট্র ও সমগ্র মারাঠি জাতির প্রাণপুরুষ শিবাজি উপস্থিত না থেকেও বিভিন্ন সংলাপের মধ্যে বারে বারে উঠে এসেছেন।
সিনেমার কাহিনীতে দেখা যায়, সপ্তদশ শতকে বাবা শিবাজির পদাঙ্ক অনুসরণ করেই তরুণ সম্ভাজি মোঘলদের দাসত্ব স্বীকার না করে মারাঠা স্বরাজের পক্ষে লড়াই করেছিলেন। দিল্লিতে তখন আওরঙ্গজেবের রাজত্ব। সম্ভাজি সিংহাসনে বসেই বুরহানপুরে মোঘলদের সেনা ছাউনিতে আক্রমণ করে ধ্বংস করলে তৎকালীন মোঘল সম্রাট প্রতিশোধ নিতে শুরু করেন পালটা আক্রমণ। মোঘলদের প্রতিটি আক্রমণ সম্ভাজি তার অনুগত সৈনিক এবং সেনাপতি হাম্বিররাওয়ের লড়াই কৌশলের মাধ্যমে রুখে দেন। একেবারে যাকে বলে গেরিলা যুদ্ধ, প্রায় সেইরকম।
নির্মাতা লক্ষ্মণ উতেকার দেখিয়েছেন, জলে, স্থলে এমনকি উপর থেকেও সম্ভাজির সেনারা কীভাবে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছেন। তারা মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছেন। আখের ক্ষেতে ছদ্মবেশে আখ গাছ হয়েছেন। আবার আকাশ থেকে হঠাৎ হঠাৎ নেমে এসেছে রামায়ণ মহাভারতের সময়ের মতো। অবশ্য, এই ছবির দর্শনীয় এটুকুই।
সম্ভাজি ও আওরঙ্গজেবের মধ্যে ফাইনাল যুদ্ধটি হয় পুণের কাছে ভীম নদীর পাড়ে তুলাপুর নামের একটি জায়গায়। যেখানে আওরঙ্গজেব সম্ভাজি ও তার অন্যতম অমাত্য কবি কালাশকে বন্দি করে নিয়ে যান। বন্দিদশায় কবির জিভ কেটে দেওয়া হয়। আর চোখ উপড়ে নেওয়া হয় সম্ভাজির। মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত মারাঠিরাজ একা লড়ে যান শতাধিক মোঘল সৈন্যের সঙ্গে। সেই লড়াই সত্যিই অসম্ভব এবং অকল্পনীয়।
যদিও ভিকি কৌশল পুরো সিনেমাজুড়ে শরীর ও বাচিক অভিনয়ে হাততালি কুড়িয়ে নেন দর্শকদের, তবে তিনি খুব কৌশল করেই সরাসরি হিন্দুত্বের জয়গান করে যান নানাভাবে। এক সংলাপে সম্ভাজি বলেই ফেলেন, তুমি আমার সঙ্গে যোগ দিয়ে মারাঠি হয়ে যাও, তোমাকে সেজন্য ধর্ম ত্যাগ করতে হবে না। সুখে থাকবে! সেই প্রেক্ষিতে দেখতে গেলে, প্রচ্ছন্নভাবে মারাঠি মহানেতার পাশাপাশি হিন্দুত্বেরও প্রচার হলো এই সিনেমায়।
শুক্রবার মুক্তির প্রথম দিনেই সিনেমাটি ৩১ কোটি রুপি ঘরে তুলেছে। সেই হিসেবে এটি ২০২৫ সালের প্রথম হিট করা বলিউড সিনেমা। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত ভিকি কৌশলের ক্যারিয়ারে এটিই সবচেয়ে বড় সিনেমা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।