‘৪১ বছর ধরে প্রিয়াংকাকে যত না চিনেছি তার থেকেও বেশি সময় কেটেছে ওকে চিনতে’
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১০ পিএম
বছরের শেষ দিন জন্মদিন। যতই প্রিয়জন হোক, পকেট টানের একটা ব্যাপার থাকে। তাই বলে কোনো কিছু থেমে থাকে না। আগে প্রেম তার পর বিয়ে। এরপর সাতপাকে বাঁধা। ৪১ বছর ধরে স্ত্রীকে চেনা-অচেনা, সুখ-দুঃখ আর ভালোবাসার বন্ধন আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি হয়ে তুলে ধরলেন অভিনেতা রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়। এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললেন স্ত্রীর সঙ্গে বসবাসের জীবনকাহিনি, যা যুগান্তর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো—
২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সেই দিনগুলো ফিরে দেখতে গিয়ে উপলব্ধি হলো— ৪১ বছর ধরে প্রিয়াংকাকে যত না চিনেছি তার থেকেও বেশি সময় কেটেছে ওকে চিনতে। আমার চিনতে চিনতে আর দেখতে দেখতে সেই মেয়ে বড় হয়ে গেল। আমার সন্তানের মা হলো। প্রিয়াংকা আরও কম বয়স থেকে চেনার চেষ্টা করছে আমাকে। ওর তখন বয়স কত? ধরুন ১৩ কিংবা ১৪ বছর। সেই থেকে ও আমার।
নিজেকেই একেক সময় নিজে শুধরে নিই— ওকে কি ঠিকমতো চিনতে পারলাম তো? সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা প্রশ্ন তৈরি হয় মনে। আমি কি নিজেকেই আদৌ চিনি? কেউ কি কাউকে সঠিকভাবে চিনতে পারে! চিনে চলেছি। প্রতি মুহূর্তে আবিষ্কারের চেষ্টা করে চলেছি। যেদিন চেনার পালা সাঙ্গ হবে, সেদিন জীবনের সব মজা ফুরিয়ে যাবে। আমি জানি, আগামীকাল প্রিয়াংকা আবারও অবাক করবে। ওর থেকে এই অবাক হওয়ার জন্যই তো বেঁচে থাকা।
ভাবছেন তো, কী এমন অবাক হওয়ার মতো ঘটনা বা কাজ প্রিয়াংকা প্রতি মুহূর্তে করে থাকে? প্রিয়াংকার সঙ্গে সবসময় একটা ব্যাগ থাকে। সেখানে সেফটিপিন থেকে শহিদ মিনার— সব মিলবে! মানে, ‘বিপদে পড়িলে প্রিয়াংকার ব্যাগকে স্মরণ করিলেই হইবে!’ ‘বিপত্তারিণী’ হয়ে যে কোনো সমস্যার সমাধান করে দেবে। দ্বিতীয় চমক— ওর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা। আমি আজীবন শুধু ভুল করে গেছি। আমার থেকে এত ছোট। কিন্তু ওর বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত ঠিক। কিংবা ভুল নিলেও দ্বিতীয়বার পেছন ফিরে দেখে না! উল্টে ভুল সিদ্ধান্ত ওর পাল্লায় পড়ে ঠিক হয়ে যায়।
আর একটা জিনিসের জন্যও ওকে কুর্নিশ, প্রিয়াংকার মাতৃসত্তা। ওর মতো ভালো মা হাতেগোনা দেখেছি। এবার প্রশ্ন উঠবে— ভালো বউ না ভালো মা? রসিকতার লোভ সামলাতে পারছি না। আমার তো একটাই বিয়ে, একটাই বউ। আর বউ নেই যে তুল্যমূল্য বিচার করে ভালো না খারাপ তকমা দেব! কিন্তু ভালো মা সব সময়েই। আর হ্যাঁ, বউ হিসেবেও দারুণ। আবার প্রশ্ন— দারুণ বউ কি সময়ের সঙ্গে বরকে বদলে দেয়? আদতে, আমরা দুজনেই বদলেছি। সময়ের দাবি মেনে।
প্রিয়াংকার এবারের জন্মদিনে নিজের কাছে নিজেই কৌতূহল— ছোট্ট প্রিয়াংকা বেশি ভালো না এখনকার?
আমার কাছে এখনকার প্রিয়াংকা বেশি ভালো। ওর পরিণতমনষ্কতা নিয়ে কোনো কথা হবে না। আমি মুগ্ধ ওতেই। ওর ছোটবেলায় আমিও ছোট ছিলাম। উভয়েই অনেক ভুল করেছি। তার থেকে আমরা দুজনেই শিখেছি। তখনকার সময়টাও বেশ। প্রিয়াংকাকে নিয়ে আমার একটাই আফসোস, ও যত ভালো মা ততটাই ভালো অভিনেত্রী। কিন্তু কেউ ওকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারল না। ঈশ্বরের কাছে আমার বউয়ের জন্য একটাই চাওয়া— নতুন বছর যেন প্রতিভাময়ী প্রিয়াংকা সরকারকে আবিষ্কার করে।