চলতি বছর নতুন নতুন অনেক গান প্রকাশ হলেও এ অঙ্গনে ছিল না কোনো প্রাণ। সিনেমার দু-একটি গান আওয়াজে থাকলেও অডিও অঙ্গন ছিল নীরব। কিছু গানে দেখা গেছে সিনিয়র শিল্পীদের। বিস্তারিত লিখেছেন রিয়েল তন্ময়

বছর কয়েক আগেও গান নিয়ে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল মুখরিত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় শিল্পীরা যখন নিজেরাই ইউটিবে চ্যানেল খুলে মিউজিক ভিডিও বানিয়ে গান প্রকাশ শুরু করল, তখন যেন ক্রমান্বয়ে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠাগুলো তাদের জৌলুস হারাতে শুরু করল। গানের অন্যতম শীর্ষ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ধ্রুব মিউজিক স্টেশন কিছুটা আলোচনায় ছিল। জি সিরিজ, সিএমভি, গানচিল, সুরঞ্জলী, অনুপম মিউজিক, লেজার ভিশনসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে এ বছর গান প্রকাশ করা হয়েছে। তবে তেমন একটা আওয়াজ ওঠেনি। চলতি বছর যেসব গান আলোচনায় ছিল-

* দুষ্টু কোকিল ও উড়াধুরা: ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘তুফান’র গান ‘দুষ্টু কোকিল’। গেয়েছেন দিলশাদ নাহার কণা ও কলকাতার আকাশ সেন। এটি বেশ ভাইরাল হয়। একই সিনেমার দেবশ্রী অন্তরার গাওয়া ‘উড়াধুরা’ শিরোনামের একটি গানও আলোচনায় ছিল।

* রঙে রঙে রঙিন হবো: ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে গানটি গেয়েছেন তাহসান খান ও তাসনিয়া ফারিণ। এ গান দিয়ে অভিনেত্রী ফারিণ আনুষ্ঠানিকভাবে গানে আত্মপ্রকাশ করেন। প্রচারের পর গানটি শ্রোতাপ্রিয় হয়।

* আওয়াজ উডা বাংলাদেশ : ছাত্র আন্দোলনের সময় প্রকাশ হয় গানটি। এটি গেয়েছেন র্যাপার হান্নান হোসাইন শিমুল। গানটি ব্যাপক আলোচিত হলে র্যাপার হান্নানকে গ্রেফতার করা হয়। ৫ আগস্টের পর তিনি মুক্তি পান।

* ভয় বাংলায় : ছাত্র আন্দোলনের সময় গানটি প্রকাশ করে ছাত্রদের সাহস দেন ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান। এটি যদিও ২০১৯ সালে নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের স্মৃতিতে বেঁধেছিলেন তিনি। তবে চলমান সময়ের সঙ্গেও এ গানের সামঞ্জস্য রয়েছে বিধায় আবারও এটি প্রকাশ করেছেন।

* চলো ভুলে যাই : তরুণ সংগীতশিল্পী পারসা মেহজাবিন পূর্ণি ২৭ জুলাই প্রকাশ করেন গানটি। মাত্র দশ মিনিটে তৈরি করা এ গান আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতা লুফে নেন; যা রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়।

* কথা ক : হিপহপ গানের শিল্পী মুহাম্মদ সেজান। ১৬ জুলাই উন্মুক্ত করেন এ গান। বৈরী সময়েও তার গানটি অভূতপূর্ব সাড়া পায়।

* আন্দোলন নিয়ে আরও কিছু গান

ছাত্র আন্দোলন নিয়ে আরও কিছু গান আলোচিত হয়। ‘ছাত্র’, ‘বায়ান্ন’, ‘দেশ সংস্কার’, ‘রক্ত’, ‘স্লোগান’, ‘ইনকিলাব’, ‘আবু সাঈদ’, ‘জবাব দেনা’, ‘পাল্টে দে ইতিহাস’, ‘রাজাকার’, ‘দেশ কার’সহ আরও কিছু গান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বড় অস্ত্র হয়ে ওঠে। এছাড়া মৌসুমী-ইথুন বাবুর ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’ এবং নব্বই ও শূন্য দশকে প্রকাশিত মাকসুদ ও ঢাকার ‘আবার যুদ্ধে যেতে হবে’, আর্কের ‘আর কত মৃত্যু’, ওয়ারফেজের ‘জনস্রোত’ গানগুলো প্রতিবাদী জনতার মাঝে নতুন করে সাড়া ফেলে।

চলতি বছর নতুন গান প্রকাশ করেছেন অনেক জনপ্রিয় শিল্পী। তাদের মধ্যে আলোচনায় ছিলেন-

* মনির খান : জনপ্রিয় এ শিল্পী বছরজুড়েই গান প্রকাশ করেছেন। বলা যায়, প্রতিমাসেই এসেছে তার নতুন গান।

* আসিফ আকবর : চলতি বছর নতুন গান প্রকাশের পাশাপাশি, বছর শেষে স্টেজ শো নিয়ে মেতেছিলেন আসিফ আকবর। গান গাওয়ার পাশাপাশি মিউজিক ভিডিওর মডেল হিসাবেও উপস্থিত হয়েছেন। এছাড়াও ‘ইচ্ছেরা’ শিরোনামে প্রকাশ করেছেন দুই ভাষায় (বাংলা ও হিন্দি) গাওয়া তার একটি গান।

* হাবিব ওয়াহিদ : একাধিক নতুন গান প্রকাশ করে আলোচনায় ছিলেন হাবিব ওয়াহিদ। কাজ করেছেন সিনেমার গানেও। তবে সেগুলো আলোচনায় আসেনি।

* দিলশাদ নাহার কণা : চলতি বছর একক গান প্রকাশের পাশাপাশি নাটকের গানে বেশ ব্যস্ততা কেটেছে শিল্পী কণার। তবে বেশি আলোচনায় ছিলেন ‘দুষ্টু কোকিল’ শিরোনামের সিনেমার গান দিয়ে।

* হৃদয় খান : একাধিক গান প্রকাশ করলেও চলতি বছর নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি হৃদয় খান। বছর শুরু করেন ন্যান্সির সঙ্গে দ্বৈত গান ‘আলিঙ্গন’ দিয়ে। বছর শেষ করেন সেই ‘আলিঙ্গন’র পিয়ানো ভার্সন প্রকাশ করে।

* নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি : ‘মৌনতা’ শিরোনামের গান দিয়ে বছর শুরু করে এরপর একাধিক গান গেয়েছেন ন্যান্সি। বছরের শেষ দিকে এসে স্টেজ শো নিয়ে ব্যস্ততা ছিল তার। চলতি বছরে তার গাওয়া ‘নিন্দুকে’ (সিনেমার গান) গানটি আলোচনায় ছিল।

* ইমরান মাহমুদুল : প্লেব্যাক, নাটকের গান ও মিউজিক ভিডিও নিয়ে ছিল তার ব্যস্ততা। ভাষার গণ্ডি পেরিয়ে ‘টুটি মোহাব্বত’ শিরোনামে হিন্দি গানও উপহার দিয়েছেন তিনি।

* আরফিন রুমি : বিরতি থেকে ফিরে চলতি বছর একাধিক গান প্রকাশ করেছেন আরফিন রুমি। এছাড়াও চলতি বছর প্রথমবার অন্যের সুরে নাটকের একটি গান করেছেন। একক গান প্রকাশের পাশাপাশি নাটকের গানে ছিল তার ব্যস্ততা।

* মৌসুমি আক্তার সালমা : চলতি বছরে নতুন গান প্রকাশের ধারাবাহিকতায় এগিয়ে ছিলেন সালমা। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে অনেক গান প্রকাশ হয়েছে।

অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণের মতো জয়া আহসানও গান নিয়ে চলতি বছর ¡আলোচনায় এসেছিলেন। জয়া গেয়েছেন ‘তাঁতি’ শিরোনামের একটি গান। বছরের শেষদিকে প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চুও এসেছেন আলোচনায়। ১ ডিসেম্বর প্রকাশ হয় তার অপ্রকাশিত গান ‘ইনবক্স’। এছাড়াও নতুন কোনো গান নিয়ে আলোচনায় না থাকলেও বছরজুড়ে দেশ-বিদেশে ঠিকই স্টেজ শো নিয়ে আলোচনায় ছিলেন আঁখি আলমগীর। বছরের শেষদিকে দেশে ফিরেছেন ব্ল্যাক ডায়মণ্ডখ্যাত সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন। ব্যস্ত হয়ে উঠছেন রাজনীতিতে। জানিয়েছেন নতুন বছরে নতুন গান নিয়ে হাজির হবেন। সংগীতশিল্পী বালাম ‘তুমি আমার রাজকুমার’ শিরোনামের সিনেমার একটি গান নিয়ে দিনকয়েক আলোচনায় ছিলেন। এছাড়া গান প্রকাশে নিয়মিত ছিলেন সামিনা চৌধুরী, বাপ্পা মজুমদার, লিজা, কাজী শুভ, মিলাসহ নতুন-পুরোনো অনেকেই। এছাড়া কয়েকটি ব্যান্ড তাদের নতুন গান প্রকাশ করেছে। তবে আলোচনায় থাকার মতো কোনো গান চোখে পড়েনি।