সত্যজিৎ বলেছিলেন—বেড়ালকে অভিনয় শিখিয়ে ছবি হয় না: অপর্ণা
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৫ পিএম
গৌতম ঘোষ থেকে অঞ্জন দত্ত— এই তথ্যচিত্রে সবাই দাবি করেছেন, অনেক ‘ভুল’ ছবিতে অপর্ণা সেন কাজ করেছেন। অভিনেত্রী অপর্ণা সেনকে নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনে প্রতিবেদন লিখেছেন সাংবাদিক স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়, যা হুবহু তুলে ধরা হলো।
‘৩৬ চৌরঙ্গী লেন’-এর চিত্রনাট্য শোনাতে সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি গিয়েছিলেন টালিউড অভিনেত্রী অপর্ণা সেন। সে চিত্রনাট্য পড়ে সত্যজিৎ বলেছিলেন—শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে ও রকম চিত্রনাট্য অনেক লেখা যায়। বেড়াল নিয়ে ছবি করা কি চাট্টিখানি কথা! অভিনেতাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, বেড়ালকে প্রশিক্ষণ?
অপর্ণা থামেননি। তৈরি হয় ‘৩৬ চৌরঙ্গী লেন’। এ ঘটনার কথা শুনতে শুনতে দর্শকের সামনে ভেসে উঠল ‘৩৬ চৌরঙ্গী লেন’-এর ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় ও দেবশ্রী রায়ের ঘনিষ্ঠ দৃশ্য। যার উল্টো দিকে কালো হুলো লেজ নাড়ছে।
দৃশ্য ও কথন বেঁধে দিলেন পরিচালক সুমন ঘোষ তার তথ্যচিত্র ‘পরমা: আ জার্নি উইথ অপর্ণা সেন’-এ। সুমন অপর্ণার ‘৩৬ চৌরঙ্গী লেন’ তথ্যচিত্রের মধ্য দিয়ে তার দেখা অভিনেত্রী পরিচালিকাকে খুঁজতে বেরিয়েছেন। সেখানে উঠে এসেছে অপর্ণার ছবি নির্মাণের নানা মন্তাজ। অন্যদিকে সমসাময়িক অপর্ণা খুঁজে বেড়িয়েছেন ‘রিনা’কে।
একবার মেয়ে কঙ্কনার অভিনয় সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, মেয়ে তার চেয়ে ভালো অভিনেত্রী। সত্যিই কি তাই? মেয়ের সামনে প্রশ্ন রেখেছেন পরিচালক সুমন ঘোষ। কঙ্কনা জানিয়েছেন, তার মায়ের সময়ই ছিল আলাদা। ছবি তৈরির পদ্ধতি থেকে চরিত্র নির্মাণ— অপর্ণাকে অনেক ক্ষেত্রেই আপস করতে হয়েছে। কঙ্কনা বলেন, মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার’ থেকে ‘গহনার বাক্স’ মা যখনই আমাকে অভিনয় করতে বলেছেন, আমি প্রথমে বলেছি ‘না’। অভিনয়ের সময় মায়ের কাছেই শিখেছি, আমার অংশটি মা অভিনয় করে দেখিয়ে দিতেন। অনুকরণ করতাম না, বুঝে যেতাম মা ঠিক কী চাইছেন। অপর্ণার বড় মেয়ে কমলিনী যেমন অন্য এক অপর্ণাকে এই তথ্যচিত্রের মাধ্যমে সামনে এনেছেন। সংসার চালানোর জন্য মাকে সেই সময় প্রচুর কাজ করতে হতো। আমি দাদু, দিদিমার কাছে বড় হয়েছি। আমি খুবই জ্বালাতন করতাম মাকে। তবু মা অনেকটা সামলেছে।
প্রথাগত মায়েরা যেমন হন, অপর্ণা সে রাস্তায় হাঁটেননি। তথ্যচিত্রে স্বীকার করে নিলেন নিজেই। তবে সন্তানদের বই পড়া, নিয়মিত সারা বিশ্বের ছবি দেখার প্রতি তিনি বিশেষ নজর দিয়েছিলেন। কমলিনী, কঙ্কনার ওপর নির্দেশ ছিল জনপ্রিয় ছবি না দেখার। মা হিসেবে সফল অপর্ণা মেনে নিয়েছেন বিয়ের জায়গায় তিনি সফল নন। সমাজের বাঁধন ভাঙতে পেরেছেন রিনাদি। তাই ‘পরমা’ নাম দিয়েছিলাম। ওর কাজের জায়গায় গিয়ে মানুষ অপর্ণাকে খোঁজা, বললেন সুমন। ভেসে উঠল ‘জাপানিজ ওয়াইফ’-এর অদেখা দৃশ্য। সংগ্রাহক নীল বি মিত্রের সৌজন্যে।
গৌতম ঘোষ থেকে অঞ্জন দত্ত— এই তথ্যচিত্রে সবাই দাবি করেছেন, অনেক ‘ভুল’ ছবিতে অপর্ণা কাজ করেছেন। একসময় উৎপল দত্তের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নেওয়া এই অভিনেত্রী কি পারতেন বেছে কাজ করতে? আবার সেই সময়ের কথা উল্লেখ করেই অপর্ণা বললেন, সেই সময় একজন অভিনেত্রী যদি বাণিজ্যিক না করেন তা হলে তিনি থমকে যাবেন। এটা সম্ভব ছিল না।
অসম্ভবকে অনেক সময় সম্ভবও করেছেন তিনি। রাজনীতির ময়দানে নির্দিষ্ট ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সরকারবিরোধী কণ্ঠস্বর বারবার উঠে এসেছে। তা হলে কি অপর্ণা সেন, ঘটনার বাইরে গিয়ে কোনো রাজনীতির কথা বলেন না?— প্রশ্ন রেখেছিলেন সুমন ঘোষ। উত্তরে অপর্ণা বলেন—সভ্যসমাজে যদি এমন কোনো ঘটনা ঘটে, যা গণতন্ত্রবিরোধী, সেখানে কথা বলাই তো আমার কাজ। তাই একসময় দেশের সাম্প্রদায়িক অশান্তি রোধে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়ে পদক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
এমন করেই তথ্যচিত্রের নানা চেহারায় ভিন্ন ভিন্ন অপর্ণা। রাজনীতির অপর্ণা, চিদানন্দ দাশগুপ্তের মেয়ে অপর্ণা, কমলিনী-কঙ্কনার মা অপর্ণা ফিরে ফিরে যেন তার অতীত ঘাঁটছেন এই তথ্যচিত্রে। তাকে একান্তে শিল্পী হিসাবে, সঙ্গী হিসাবে দেখেছেন কল্যাণ রায়। বন্ধু হিসেবে পেয়েছেন শাবানা আজমি। আরও অনেক মানুষ… সুমন নিজের মতো করে তাকে দেখেছেন। আর অপর্ণা? তার সৃষ্টির মধ্যেই নিবিড় অস্তিত্ব।