ছবি: সংগৃহীত
বাংলার সঙ্গে তার নাড়ির টান নেই বটে, কিন্তু হয়তো পূর্বজন্মের বন্ধন রয়েছে। তামিল ব্রাহ্মণ পরিবারের কন্যা। সেই ছোট্ট থেকে তামিল ও মালায়ালাম শুনেই বড় হয়েছেন তিনি। বলিউড তার কর্মভূমি ঠিকই, কিন্তু বাংলাতেও অভিনেত্রী বিদ্যা বালান ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে।
গৌতম হালদারের বাংলা ছবি ভালো থেকোর সঙ্গে বড়পর্দায় জার্নি শুরু তার। কাকতালীয়ভাবে বলিউডেও বিদ্যার প্রথম কাজ ‘পরিণীতা’। বাঙালি কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাসের নায়িকা চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন এই সুন্দরী। তাই বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে তার বন্ধন বেশ গাঢ়। আজও হিন্দি ছবির প্রচারে কলকাতায় এলে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঝরঝরিয়ে বাংলায় কথা বলেন বিদ্যা বালান।
অভিনেত্রী বিদ্যা বালান অভিনীত 'ভুল ভুলাইয়া থ্রি' মুক্তি পেয়েছে। দীপাবলিতে মুক্তি পায় ভুষণ কুমার প্রযোজিত ও আনিস বাজমি পরিচালিত এ ছবিটি। 'ভুল ভুলাইয়া থ্রি' আগের মতোই হরর ও কমেডির সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে। ১ নভেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া এ ছবিতে বিদ্যা বালান ছাড়াও অভিনয় করেছেন কার্তিক আরিয়ান, তৃপ্তি দিমরি, বিজয় রাজ, রাজপাল যাদব, সঞ্জয় মিশ্র ও অশ্বিনী কালসেকর প্রমুখ।
‘ভুল ভুলাইয়া’ সিনেমায় অসাধারণ অভিনয় করার পর সিক্যুয়াল ‘ভুল ভুলাইয়া থ্রি’ সিনেমায় নিজেকে প্রমাণ করলেন বিদ্যা বালান। সেখানেও মঞ্জুলিকা চরিত্রটি কিন্তু বাঙালি! সেই ছবির সেটে বসেই সুকুমার রায়ের কালজয়ী কবিতা আবৃত্তি করেন বিদ্যা, সঙ্গী সহ-অভিনেতা রাজেশ শর্মা। সাত বছর আগে অন্য এক ছবির সেটে রাজেশের কাছ থেকেই ‘সৎপাত্র’ কবিতাটি শিখেছিলেন তিনি, সেই স্মৃতি ঝালিয়ে নিতেই ভুলভুলাইয়া ৩-এর সেটে চলল কবিতা পাঠ।
সৎপাত্র আবৃত্তিটি শুরু করেন রাজেশ শর্মা— ‘শুনতে পেলাম পোস্তা গিয়ে….’। চটপট বিদ্যা বলে উঠেন— ‘তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে’। এরপর জমল কবিতার আসর। মাঝেমধ্যে বিদ্যা অল্প-স্বল্প আটকে গেলে ধরিয়ে দিলেন রাজেশ শর্মা। ভিডিও পোস্ট করে বিদ্যা লিখেছেন— ভুল ভুলাইয়া ৩-এর শুটিংয়ের ফাঁকে প্রথম ‘আবোলতাবোল’ থেকে বলা কবিতা বললাম। সেটা আমার প্রিয় সহ-অভিনেতা ও বন্ধু রাজেশ শর্মার কাছ থেকে ৭ বছর আগে শিখেছিলাম।
বিদ্যা-রাজেশের এই ভিডিওতে উপচে পড়ছে লাইক-কমেন্ট। টালিপাড়া থেকে ভালোবাসা জানিয়েছেন— অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী, শ্রুতি দাস, সায়ক চক্রবর্তীরা। বাঙালি অনুরাগীদের অনেকে লিখেছেন— ‘বিদ্যা তো অর্ধেক বাঙালি’। কেউ জানান, ‘বিদ্যা মনেপ্রাণে বাঙালি’। আজ যখন অনেক বাঙালি বাংলা ভুলতে বসেছে, সেখানে সত্যি বাংলা ভাষাকে ভালোবেসে বিদ্যার এই প্রয়াস কুর্নিশযোগ্য। অন্যদিকে যে রাজেশ শর্মার কাছে তিনি এই কবিতা শিখেছেন, তিনিও কিন্তু বাঙালি নন।
বিদ্যার ক্যারিয়ারের ‘কাহানি’র তার জুড়ে কলকাতার সঙ্গে। গত মাসে ভুলভুলাইয়া ৩-এর প্রচারে শহরে এসে আরজি করকাণ্ড নিয়েও সরব হন তিনি। আরজি করের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে তাকেও। বিদ্যা জানিয়েছিলেন—দুঃখ পেয়েছিলাম। আমার ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এই শহর জড়িয়ে রয়েছে। কলকাতা প্রতিবাদের শহর। মায়ের শহরে এই রকম একটা ঘটনা কীভাবে হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না।