বিনোদন জগতের দক্ষিণী সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় অভিনেতা সারাভানন শিবকুমার। যাকে রুপালি পর্দায় আমরা সুরিয়া নামেই চিনি। তার বাবা বর্ষীয়ান অভিনেতা শিবকুমার। তবে অভিনেতা হওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না সুরিয়ার। একটি পোশাক কারখানায় কর্মজীবন শুরু করেন এ অভিনেতা।
ইচ্ছা ছিল টাকা জমিয়ে ও বাবার থেকে কিছু অর্থ নিয়ে নিজের একটা ব্যবসা শুরু করবেন তিনি। তবে তা আর হয়ে ওঠেনি। পরিবারের এক আর্থিক পরিস্থিতি তাকে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে বাধ্য করেছিল। শেষে মায়ের থেকে নেওয়া ঋণের টাকা মেটাতে অভিনয় শুরু করেছিলেন বলে জানান সারাভানন শিবকুমার ওরফে সুরিয়া কুমার।
তিনি বলেন, আমি টাকার জন্যই ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছি। আমি আমার মায়ের ঋণ শোধ করার উদ্দেশ্য নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করি। এভাবেই আমি আমার ক্যারিয়ার শুরু করি এবং এভাবেই আমি সুরিয়া হয়ে উঠি।
সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম পিঙ্কভিলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুরিয়া কুমার জানান, অভিনয়ের ইচ্ছা না থাকলেও কীভাবে অভিনয় পেশায় আটকে যান তিনি, তা খোলামেলা আলোচনা করেন। তিনি বলেন, একটি পোশাক কারখানায় প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে চাকরি শুরু। প্রথম ১৫ দিনে ৭৫০ রুপি পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন। বছর তিনেক চাকরির পর যেটা মাসে আট হাজার রুপি হয়েছিল। সুরিয়া বলেন, ইচ্ছা ছিল সঞ্চয় করে এবং বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নিজে একটা ব্যবসা শুরু করবেন। তবে বাবা এত বড় অভিনেতা হওয়ার পরও সঞ্চয় বলতে কিছুই ছিল না পরিবারের।
এ অভিনেতা বলেন, বাবাকে না জানিয়ে ২৫ হাজার রুপি ধার করে মা আমাকে দেন। আর এই ধার পরিশোধে মাকে হিমশিম খেতে দেখি, যা তাকে অনেক আঘাত করে। এরপরই মনের জেদ থেকে অভিনয় শুরু করেন তিনি।
সেদিনের ঘটনা মনে করে সুরিয়া বলেন, একদিন আমি নাশতা করছিলাম, এমন সময় মা বললেন—আমি তোমার জন্য ২৫ হাজার রুপি ধার করেছি, যা তোমার বাবা জানে না। মায়ের এ কথা শুনে আমি বেশ হতবাক হলাম। আমি বললাম, কী বলছেন মা? আমার বাবা একজন অভিনেতা। আপনি কেন টাকা ধার করছেন? আমাদের সঞ্চয়ের কী হয়েছে? আমাদের ব্যাংক ব্যালান্স কত? তিনি তখন বললেন— এটা কখনো এক লাখের বেশি হয়নি।
বাবা সম্পর্কে সুরিয়া বলেন, বাবা সব সময়ই এমনই। তিনি কখনই তার পারিশ্রমিক চান না। নির্মাতারা তার অর্থ পরিশোধ না করা পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করেন। আর ঘটনাটি যে সময়ের ছিল, যখন বাবা ১০ মাস কাজ থেকে দূরে ছিলেন। তখন আমি আমার মাকে ২৫ হাজার রুপির মতো সামান্য পরিমাণ অর্থের জন্য হিমশিম খেতে দেখেছি, তখন এটি আমাকে খুব আঘাত করেছিল। আমি নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলাম—আমি কী করছি?
সুরিয়া বলেন, নিজের একটি পোশাক কারখানা শুরু করার পরিকল্পনার পর তিনি ভেবেছিলেন বাবার থেকে কমপক্ষে এক কোটি রুপির বিনিয়োগ পাবেন। নিজস্ব কিছু শুরু করার অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যই পোশাক কারখানায় চাকরি করেছিলেন তিনি। কিন্তু মায়ের সঙ্গে একটি কথোপকথন সবকিছু বদলে দিয়েছিল তার।
কখনো ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর ইচ্ছা ছিল না তার উল্লেখ অভিনেতা বলেন, আমি অনেক প্রস্তাব পেতাম, কিন্তু আমি কখনই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অংশ হতে চাইনি কিংবা ক্যামেরা ফেস করতে চাইনি। ক্যামেরার মুখোমুখি হওয়ার পাঁচ দিন আগপর্যন্ত আমি কখনই ভাবিনি যে আমি এটি করব।
সুরিয়া বলেন, যখন আমি আমার প্রথম দৃশ্যটি করি, তখন সেটের কাছে হাজার হাজার লোক দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের কোনো ধারণা ছিল না যে আমি কে, তবু দৃশ্যটি শেষ হওয়ার পর আমি হুট করে তাদের হাততালি দিতে শুনি। সেই থেকে, প্রজন্ম বদলেছে, দর্শক বদলেছে, কিন্তু আমি নিঃশর্ত ভালোবাসা পেতে থাকি। তাই তাদের জন্যই আমি সিনেমা করতে থাকি। এখন— এমনকি ৪৯ বছর বয়সেও আমি একটি সিনেমা করেছি, যার জন্য সিক্স-প্যাক প্রয়োজন।