গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেল। সারা ঘরে বাবার চেনা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু আমি ঘুরে তাকালাম না, যেন ঘোরের মধ্যে থেকে গেলাম। — এ যে কেবলমাত্র কল্পনা, তা নিজেও জানেন টালিউড অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। কিন্তু নিজেই ঘোর কাটাতে চাইছেন না তিনি। বিশ্বাস করতে চাইছেন— সত্যিই বাবা এসেছিলেন।
জীবনের দুটো অধ্যায় থাকে। প্রথমটা বাবা-মায়ের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা। দ্বিতীয়টা তাদের স্মৃতি আঁকড়ে এগিয়ে যাওয়া। মাথার ওপর থেকে যে কোনো একটা স্তম্ভ সরে গেলেই বদলে গেল জীবনের বহু সমীকরণ। তার মধ্যেই কখনো স্বপ্নে বা কখনো ভাবনায় বারবার ফিরে আসে তাদের স্মৃতি। এমনই এক মন ভার করা লেখা লিখলেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। জানিয়েছে আনন্দবাজার অনলাইন।
২০২০ সালের ১১ মার্চ বাবাকে হারিয়েছিলেন অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। একটা সময় সন্তু মুখোপাধ্যায় স্টুডিও থেকে বাড়ি এলে ঘরে একটা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ত। সেই গন্ধই হঠাৎই শনিবার রাতে ছড়িয়ে পড়ে স্বস্তিকার বাড়িতে। ঘুম ভেঙে যায় অভিনেত্রীর। রবিবার স্মৃতিতে ডুব দিয়ে স্বস্তিকা লিখলেন— কাল রাতে ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে গেল। সেই চেনা গন্ধটা নাকে আসতেই উঠে পড়লাম। গন্ধটা পেয়ে জেগে গিয়েছিলাম, নাকি জেগে গিয়ে গন্ধটা পেলাম ঠিক ঠাহর করতে পারলাম না। বাবা স্টুডিও থেকে বাড়ি ফিরলেই বাড়িটা যেমন ব্যস্ত হয়ে উঠত, কাল রাতে ঠিক তেমনটাই হলো। আর সেই ঘাম, পারফিউম, ইউডি কোলন মেশানো গন্ধটা বাড়িময় ঘুরপাক খাচ্ছিল। আমি বালিশে মাথা রেখেই ভাবছি— আচ্ছা বাবা কি সত্যি বাড়ি ফিরেছে?
স্মৃতি হাতড়ে মনের কথা লিখেছেন স্বস্তিকা। বাড়ি ফিরে রোজ শৌচালয়ে ঢুকে পা ধুতেন সন্তু। তন্দ্রা অবস্থায় সেই ঘোরেই ডুবে ছিলেন তিনি। অভিনেত্রী লিখেছেন— তার পরই বাথরুমে ঢুকল বাবা, রোজ যেমন যেত পা ধুতে। জল পড়ার আওয়াজও পেলাম। ফুলকি পায়ে পায়ে ঘুরছিল বলে আবার ফুলকিকেও স্বভাববশত কত কিছু বলল। এমনিতে ফুলকি গলা দিয়ে নানান স্বর বের করে আদুরে ভাসায় কথা বলে— কিন্তু কাল রাতে বলল না। বা বলেছে হয়তো আমি শুনতে পেলাম না।
সেই ঘোর নিয়ে স্বস্তিকা আরও লেখেন— গাঢ় গেরুয়া রঙের পাঞ্জাবিটা পরে ছিল বাবা। বাথরুম থেকে বেরিয়ে বলল, দাঁড়া একটু বসতে দে, মামনি আমার বড় গ্লাসটায় জল দে তো! বলে নিজের ঘরে চলে গেল।’আমি সেই একইভাবে ডান পাশ ফিরে বালিশে মাথা দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবছি— আমি কখন বাড়ি ফিরেছি জিজ্ঞেস করল না তো? তাহলে কী ভুলে গেল যে আমি বাড়িতেই আছি? কত কিছু ভাবলাম! ওই চেনা গন্ধটা নাকে নিয়েই, কিন্তু ডান পাশ থেকে আর বা পাশে ফেরা হলো না। বাড়িতে পূজা। সকাল সকাল উঠে পড়েছি, তখনো গন্ধটা নাকে লেগে আছে। আমি তো ঘুমাচ্ছিলাম না। আমার পরিষ্কার মনে আছে, আমি জেগে ছিলাম। খালি কোনো একটা অজ্ঞাত কারণে পাশ ফিরিনি, উঠেও যাইনি। ঘরের দরজা খোলা, তাকালেই বাবা কে দেখতে পেতাম। কিন্তু তাকালাম না। অথচ পাঞ্জাবির রঙটা তো ঠিক মনে আছে।
কেন এমন ঘোরে ছিলেন। কেন এমন ভাবনা ঘিরে ধরল, তা নিয়ে পরের দিন ভাবলেন স্বস্তিকা। তিনি লিখলেন— দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার আগে ছাদে উঠে খুব মন দিয়ে ভাবলাম। রাত হতে চলল এখনো ভাবছি। একবার ঘুরে তাকালেই বাবাকে দেখতে পেতাম। কত বছর দেখিনি। তাকালাম না কেন? উঠে গেলাম না কেন? স্বপ্ন হলে সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর বাবার গায়ের গন্ধটা পেতাম।
এটা শুধু যে কল্পনা, তা নিজেও জানেন স্বস্তিকা। কিন্তু নিজেই ঘোর কাটাতে চাননি তিনি। কিন্তু বিশ্বাস করতে চাইছেন, সত্যিই বাবা এসেছিলেন। তাই স্বস্তিকা লিখেছেন— মাসি কে একটা কথাও জিজ্ঞেস করিনি।
যদি মাসি বলে, না কেউ আসেনি তো! কী জানি, পূজার কটা দিন আমার কাছে থাকবে বলে বাড়ি ফিরল হয়তো। আবার যদি আসে, আমি যদি আবার দেখতে না পাই, যদি ডাকে শুনতে না পাই, এই ভয়ে ঘুমোতে পারি না। কত ওষুধ খাই তাও পারি না। যদি বাবা এসে ডাকে, আমি ভুলে গিয়েছি আর অপেক্ষা করি না ভেবে যদি সাড়া না পেয়ে চলে যায়!”
কল্পনা থেকে বেরোতে চান না স্বস্তিকা। এই ঘোরেই রয়েছে বাবার হদিশ। এই কল্পনাতে ডুব দিলেই জীবন্ত হয়ে ওঠেন বাবা। ঠিক যেন সব আগের মতো। শুধু তাকে ছোঁয়া যায় না। অভিনেত্রীর পোস্টে আকুতি, আর তো দেখতে পাব না। সবার বাবারা ভালো থাকুক। সন্তানেরা তাদের আগলে রাখুক। চলে গেলে সব ছাই।