বিএনপির রাজনীতিতে আমি অতিথি নই: নায়ক উজ্জ্বল
হাসান সাইদুল
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৯ পিএম
চলচ্চিত্রে এক সময় ছিল তার ব্যাপক পদচারণা। চলচ্চিত্রের নানামুখি উন্নয়নে তার ছিলো নিরলস প্রচেষ্টা। তিনি বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের একসময়ের জনপ্রিয় নায়ক এবং পরবর্তীতে পরিচালক-প্রযোজক আশরাফ উদ্দিন উজ্জ্বল।
চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সমিতির নেতৃত্বেও ছিলেন উজ্জ্বল। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত তিনি। চলতি বছরের ৫ আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর এফডিসিসহ সাংস্কৃতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে দেখা গেছে। রাজনীতি, চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নানা দিক নিয়ে কথা হয় উজ্জ্বলের সঙ্গে।
বর্তমানে আপনাকে বিএনপির নানা কর্মকাণ্ডে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও বক্তৃতা দিচ্ছেন। এর কারণ কী?
জবাবে নায়ক উজ্জ্বল বলেন, ‘আমাকে সভা সমাবেশ কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হঠাৎ দেখা যাচ্ছে বিষয়টি এমন নয়। বিএনপির রাজনীতিতেও আমি নতুন নই। ছোটবেলা থেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে আমি জড়িত। এ কথা তো বলাই যায় যে, বিএনপির রাজনীতিতে আমি অতিথি নই। একজন একনিষ্ঠ কর্মী। নানা কৌশলে সব সময় এ দলের সঙ্গে আমি ছিলাম আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। এটা সত্যি যে, এখন আমাদের মিডিয়াতে দেখা যাচ্ছে। কারণ এখন মিডিয়া সব প্রচার করতে পারে। আগে তা পারত না। এখন আমরাও কথা বলতে পারছি। আগে তো আপনারাও লিখতে পারতেন না। চাইলে যে কোনো খবর প্রচার করতে পারতেন না।’
৫ আগস্টের পর চলচ্চিত্রাঙ্গনের অবস্থা সম্পর্কে উজ্জ্বল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই এ দেশের চলচ্চিত্র দৈন্যদশায় আছে। এ অবস্থার পরিবর্তন করা রাতারাতি সম্ভব হবে না। সেই ১৯৫৬ সালে ‘মুখ ও মুখোশ’ সিনেমা দিয়ে এ দেশে চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু হয়। এরপর বিখ্যাত সব মেধাবী নির্মাতার হাত ধরে ধীরে ধীরে এ চলচ্চিত্র একসময় একটা সোনালি সময়ে আসীন হয়। তখন ছিল এনালগ যুগ। আর এখন ডিজিটাল যুগের সূচনা হয়েছে। কিন্তু চলচ্চিত্র নির্মাণের সূতিকাগার খ্যাত এফডিসি এ ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রবর্তনে এখনো পুরোপুরি সক্ষম হয়নি। তাই এক্ষেত্রে আগে উন্নয়ন দরকার। তারপর আমাদের চলচ্চিত্রের প্রকৃত সময় আবার ফিরবে আমার বিশ্বাস।’
বিগত বছরগুলোতে দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনের অবস্থা সম্পর্কে নায়ক উজ্জল বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দীর্ঘ ১৫ বছর রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতিসহ দেশের সব সেক্টর যেমন অন্যায় দুর্নীতিতে নিম্নগামী হয়েছে, চলচ্চিত্রও তার বাইরে নয়। এখানেও যথেষ্ট দলীয়করণ হয়েছে। আসলে তখন চলচ্চিত্রের যোগ্য লোকজনকে কোনো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়নি। এ বিষয়গুলো পত্র-পত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় এসেছে, সবাই দেখেছে। প্রকৃতপক্ষে ক্যামেরার সামনে কোনো কাজ হয়নি। যা হয়েছে পেছনে। এতে করে চলচ্চিত্রের প্রকৃত লোকজনের হাতে কোনো কাজ ছিল না। স্বৈরাচার সরকার দেশে থাকলে দেশের অধঃপতন হয়, চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।’
শিল্পীদের দল থাকতে নেই। এমন প্রবাদ আমরা শুনে আসছি। কিন্তু বিগত এক দশক বা তারও অধিক সময় যে দলাদলি আর রাজনৈতিক বৈষম্য দেখা গেছে সেটি কি আপনি লক্ষ করেছেন। এর ফল কি ভালো হয়েছে?
শিল্পীদের দল থাকতে নেই। এ প্রবাদ নিয়ে আমার দুটি কথা আছে। শিল্পীদের অবশ্যই দল থাকবে। আপনিও হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন প্রতিটি দলের সাংস্কৃতিক একটি সংগঠন থাকে। আমার দলেও একটি ভ্রাতৃপতিম সংগঠন আছেন। আমি সেটির সাধারন সম্পাদক। কথা হচ্ছে আমি দল বা রাজনীতি করবো সেটি রাজনীতির মাঠে। কর্মস্থলে নয়। আপনি আওয়ামী লীগ করেন ঠিক আছে সেটি আপনি গুলিস্তানে গিয়ে করেন। আমি বিএনপি করি ঠিক আছে আমি সেটি পল্টনে গিয়ে করবো। রাজনীতির মাঠেই রাজনীতি এফডিসি তো রাজনীতির জায়গা না। যারা রাজনীতির নামে বৈষম্য এফডিসিতে এনেছে তারা আজ কোথায়? কেউ কেউ তো শুনছি আত্মগোপনে আছে। কেউ কেউ তো শুনছি দেশের বাইরে চলে গেছে। তারা যদি ভালো রাজনীতি করতো তবে কেন পালিয়ে গেলো কেন আত্মগোপনে থাকতো হচ্ছে?
চিত্রনায়ক রিয়াজ-ফেরদৌসের মতো যারা আত্মগোপনে আছেন তাদের নিয়ে আপনি কী বলবেন—এমন প্রশ্নে উজ্জ্বল বলেন, আমি দু চারজনের নাম বলতে চাই না। যারা যে কর্ম করেছে তারা তার ফল পাবে। ভালো কর্ম করলে ফলও ভালো হবে। তবে এটি বলতে চাই, এখানে আত্মশুদ্ধির সুযোগ আছে। কেউ যদি নিজের পিছনের কর্মের কথা নিজেদের ভুল স্বীকার করে নতুন করে আসতে চায় সেটির সুযোগ আছে। কিন্তু দলবাজি তেলবাজি হবে না।’
চলচ্চিত্র নিয়ে পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে নায়ক উজ্জ্বল বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এ দেশে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুদান প্রথা প্রবর্তন, চলচ্চিত্রের মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে কল্যাণ ফান্ড গঠন, একুশে পদক প্রথা চালু থেতে শুরু করে সবই করেছেন। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে চলচ্চিত্র নিয়ে আমার আলাপ-আলোচনা হতো। তিনি দেশের এ প্রধান ও বড় গণমাধ্যমটির উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ মানুষ ছিলেন। তার হাতে গড়া রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে আমি সবসময় যুক্ত ছিলাম। এখন আমি দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মানজনক পোস্ট সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আগামীতে বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে চলচ্চিত্রের সময়োপযোগী সার্বিক উন্নয়নে আমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার প্রত্যাশা করছি।