‘আলো আসবেই’ নামক শোবিজ অঙ্গনে আওয়ামী লীগপন্থি শিল্পীদের তৈরি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ‘রাজাকারদের আন্দোলন’ মন্তব্য করে তা প্রতিহতের ডাক দেন চিত্রনায়ক রিয়াজ। প্রোফাইল লাল করা ফেসবুক ব্যবহারকারী ও আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার গায়ে গরম পানি ঢেলে দেখে নেওয়ার হুমকি চিত্রনায়িকা অরুণা বিশ্বাসের।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে আওয়ামীপন্থি শিল্পীদের এমন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ মনোভাব ব্যক্ত করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্ট শিল্পী-কলাকুশলীরা। আওয়ামী কুশীলবদের রাজাকার উল্লেখ করে তারা বলেন, নিশ্চয়ই এদের বিচার হবে গণহত্যায় সমর্থক এবং উসকানিদাতা হিসাবে।
গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তার আগে ছাত্র-জনতার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে রাজপথে নেমেছিলেন শোবিজের একদল তারকাশিল্পী। তাদের নেতৃত্ব দেন চিত্রনায়ক রিয়াজ। আলো আসবেই-হোয়াটসঅ্যাপ গ্র“পে ৩ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রিয়াজ লেখেন, বিএনপি-জামায়াত আর রাজাকার পুত্ররা আহ্বান জানাচ্ছে, দেশ বাঁচাতে এগিয়ে আসতে। কোন দেশ সেটা আর বুঝতে বাকি নেই। তাদের বাবারাও ’৭১ সালে দেশ বাঁচানোর ডাক দিয়েছিল। তবে সেটা বাংলাদেশ না, পাকিস্তান। আজ ’৭১ মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে ২৪ দিয়ে। আগস্ট মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে জুলাই দিয়ে, গুজব ছড়িয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমিকে ’৭১-এর বদলে ২৪ এর বধ্যভূমি বানানোর চেষ্টা চলছে।
গ্রুপে অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস শিক্ষার্থীদের গায়ে গরম পানি ঢেলে দিতে বলেছেন। আন্দোলনের পক্ষে যারা প্রোফাইল লাল করেছিলেন তাদের চিনে রাখা এবং পরবর্তী সময়ে ‘সাইজ করার’ হুমকিও দিয়েছেন।
নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে ‘হারামজাদা’, বিভিন্ন ব্যক্তিকে ‘রাজাকার’ তকমা দেওয়া, আবার শিল্পীদের স্ট্যাটাস-কর্মকাণ্ড তুলে ধরে তাদের চিহ্নিত করে রাখতে বলেছেন এই অভিনেত্রী। এর মধ্যে ছাত্রদের পক্ষ নেওয়ায় একজন সংগীতশিল্পীকে উদ্দেশ করে অরুণা বিশ্বাসের একটি মেসেজ ছিল, ‘বয়স যদি কম থাকত, পিটাইতে পিটাইতে বাবা ডাক শিখাইতাম।’
‘আলো আসবেই’ নামের সেই গ্রুপে অভিনেত্রী জোতিকা জ্যোতি নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করেন। গ্রুপে নানা বিষয়ে মন্তব্য করে সরব ছিলেন ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, রোকেয়া প্রাচী, সোহানা সাবা। শিল্পীদের মাঠে নামানোর কার্যক্রমে সরব ছিলেন সাজু খাদেম-ফেরদৌস-তানভীন সুইটি ও শামিমা তুষ্টি।
ঢাকা-১০ আসনের সাবেক এমপি ও চিত্রনায়ক ফেরদৌসের নেতৃত্বে আগস্টের শুরুতেই রাজপথে নেমে আসেন আওয়ামীপন্থি ওই শিল্পীরা। গ্রুপে সক্রিয় ছিলেন সুবর্ণা মুস্তাফা-বদরুল আনাম সৌদ। গ্রুপের স্ক্রিনশটগুলো ফাঁস হতেই অনেক তারকাই গা-ঢাকা দিয়েছেন। কেউ বা এরই মধ্যে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস আগস্টের শেষের দিকে কানাডা চলে গেছেন। সরকার পতনের পর একপ্রকার ‘নিখোঁজ’ চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও রিয়াজ। তাদের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। নিজেদের ফোনও বন্ধ রেখেছেন তারা।
অভিনেতা মিলন ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির প্রভাবের কারণে ওই গ্রুপে কী বলেছেন নিজেও বুঝতে পারছেন না। সেই গ্রুপে নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে এই অভিনেতা বলেন, দুঃখিত, সে সময়ে দেশের অস্থির পরিস্থিতির জন্য। কী যে কথা বলেছি, সত্যিই বলছি ‘মাথা ঠিক ছিল না’।
এদিকে ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের শিল্পীদের এ যুগের রাজাকার মন্তব্য করে বুধবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সেখানে তিনি বলেন, ‘এটা নিশ্চয়ই বেদনার যে আমাদের দেশে শিল্পীর সাইনবোর্ড নিয়ে এমন লোকজন ঘুরে বেড়াত যারা গণহত্যায় প্রত্যক্ষ উসকানিদাতা অথবা কেউ কেউ নীরব সমর্থক ছিল। এরা শুধু শিল্পী হিসাবে না, মানুষ হিসাবেও নীচু প্রকৃতির। তিনি বলেন, একাত্তরে জন্ম নিলে এরা রাজাকারের দায়িত্ব পালন করত। ফলে এদের এ যুগের রাজাকার বলতে পারেন। নিশ্চয়ই এদের বিচার হবে গণহত্যায় সমর্থন এবং উসকানি দেওয়ার অপরাধে।
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাসের ‘গরম জল দিলেই হবে’ কথায় ঘৃণা উগড়ে দিয়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। নিজের ফেসবুক পেজে পরীমনি লিখেছেন, ‘অমানুষ! হিংস্র! লোভী! এত হিংসা নিয়ে কখনই শিল্পী পরিচয় বহন করতে পারেন না আপনি। ধিক আপনাকে। থু...।’