হ্যালো...
মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ভাতা নয় সম্মান চাই
নূসরাত অনন্যা
প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
কিংবদন্তি অভিনেতা, নির্মাতা ও মুক্তিযোদ্ধা মাসুদ পারভেজ। যিনি সোহেল রানা নামে পরিচিত। ইদানীং অভিনয় না করলেও রাজনীতিতে সক্রিয়। বিজয়ের বিশেষ দিনে মুক্তিযুদ্ধ এবং সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে আজকের ‘হ্যালো...’ বিভাগে কথা বলেছেন তিনি।
* বিজয়ের বায়ান্ন বছর পূর্ণ হলো। কোনো বিশেষ স্মৃতি মনে পড়ছে?
** সবই বিশেষ স্মৃতি। সবই মনে পড়ে। সেগুলো নিয়ে কথা বলতে গেলে কয়েক ঘণ্টা পার হয়ে যাবে। কিন্তু বিশেষ দিন উপলক্ষ্যে ঘটা করে মনে করা বা তা নিয়ে আলোচনা করা আমার একদম পছন্দ নয়। বিজয়, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ একদিনের নয়। এটা সারা জীবন মনে রাখার বিষয়। কিন্তু এখন আমরা শুধু বিশেষ দিন এলেই এগুলো নিয়ে কথা বলি। এখনকার বেশিরভাগ মানুষ তো এ দিবস বা এর মহাত্ত্বও বোঝে না।
* তাহলে বলছেন আপনার এসব আয়োজন পছন্দ নয়?
** কখনোই না। এভাবে বিশেষ করে খোঁজ নেয়াও পছন্দ না আমার। তখন সময়ের প্রয়োজনে যা দরকার ছিল, আমরা তা করেছি। দেশের জন্য করেছি। তার জন্য দেশের মানুষ বুকে টেনে নেবে, দুটো ভালো কথা বলবে, তাতেই সন্তুষ্ট আমি। কিন্তু একদিনের সম্মান বা ভালোবাসা চাই না। এসবের জন্য যুদ্ধ করিনি। আর মুক্তিযুদ্ধ তো শুধু আমার একার নয়। তখন প্রত্যক্ষ, পরোক্ষভাবে যারা যুদ্ধ করেছে, এটা তাদের সবার। সেই সাত কোটি মানুষের। তাদের সবার একটা চাওয়া, উপযুক্ত সম্মান।
* আপনি কি উপযুক্ত সম্মান পাচ্ছেন না?
** পাচ্ছি। তবে এটাকে ঠিক কতটুকু সম্মান বলে সেটা জানি না। আমরা দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। সেই হিসাবে আমাদের মুক্তিযোদ্ধা উপাধি দিয়েছে। কিন্তু এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে গিয়ে আমরা উপযুক্ত সম্মানটা পাই না। আমাদের যে সনদপত্র দেওয়া হয়েছে, তাতেও লেখা সাময়িক। সরকারি তালিকা অনুযায়ী, আমাদের একটা ভাতা দেওয়া হয়। কিন্তু ভাতা কী হিসাবে আসে? আমরা তো দেশের জন্য চাকরি করি না। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাই মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সম্মান চাই, ভাতা নয়।
* বায়ান্ন বছর পরও কি আমাদের সংস্কৃতি অক্ষত আছে বলে আপনি বলে করেন?
** না। এখন আমাদের সংস্কৃতি বলতে জগা-খিচুড়ি। আমাদের সংস্কৃতি ছিল গান-বাজনা। বিভিন্ন ধরেন গান, যেমন-জারি, সারি, ভাটিয়ালি, ভাওয়ালি, দেহতত্ত্ব ও যাত্রা। কিন্তু মানুষ এখন এসব কতটুকু দেখেন? বর্তমান প্রজন্মের কয়জনইবা জানে এগুলো সম্পর্কে। ভিনদেশি সংস্কৃতি ঢুকে পড়েছে। এখন নারীদের লম্বা চুলে কিংবা শাড়িতে দেখা যায় না। উন্নয়ন হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আমরা হারাচ্ছিও অনেক। আর শিল্প-সংস্কৃতি ছাড়া একটা দেশ অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে।
* এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কোনো উপায় আছে?
** আছে, তবে তা কঠিন। কারণ সমস্যা এক জায়গায় নয়। শিল্প-সংস্কৃতি কিংবা সিনেমা-সবকিছুর বর্তমান জায়গা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু তাই নয়, যে জায়গায় যাকে দরকার, অর্থাৎ যোগ্য লোককে দায়িত্ব দিতে হবে। তখনই ইতিহাস, শিল্প, সংস্কৃতি এবং সিনেমার উন্নয়ন হবে। সর্বোপরি দেশেরও উন্নয়ন হবে।