শুক্রবার দেশের দেড় শতাধিক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে নির্মিত সিনেমা ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’।
বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এ সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন ভারতীয় নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল।
চলতি বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটির ট্রেলার প্রদর্শিত হয়। সেটা পরবর্তীতে অনলাইনে প্রকাশ হলে সিনেমাটির নির্মাণশৈলী নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়। অনেকে তখন বলেছেন ৮৩ কোটি বাজেটে নির্মিত এ সিনেমার ট্রেলার এতটা দুর্বল হবে কেন?
অবশ্য পরবর্তীতে মুক্তির আগে যে ট্রেলার প্রকাশ হয় সেটা দেখে দর্শকদের হতাশা কিছুটা হলেও কেটেছে। এবার মুক্তির পর পুরোটাই তৃপ্ত দর্শক।
শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। রাজধানীর প্রতিটি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত সিনেমাটি।
মতিঝিলের মধুমিতা প্রেক্ষাগৃহে শো শেষে বের হওয়া দর্শকের চোখে মুখে তৃপ্তি। শাহিন হোসেন নামে এক দর্শক যুগান্তরকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস যতটা বইতে পড়েছি, পর্দায় জীবন্ত বঙ্গবন্ধুকে কেমন লাগে সেটা দেখতে এসেছি। আমি তৃপ্ত। কিছু ছোট ছোট জিনিস বাদ দিলে দারুণ একটি ইতিহাস তৈরি হয়েছে। যারা বঙ্গবন্ধুকে দেখেনি, তারা পর্দায় তার চরিত্রাভিনেতার (আরেফিন শুভ) মধ্য দিয়ে তাকে উপলব্ধি করতে পারবেন।’
শারমিন সুলতানা নামে এক দর্শক বলেন, বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ এক সূত্রে গাঁথা। তার জীবনী পর্দায় দেখলাম। দারুণ লেগেছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এমন একটি কাজ আরও আগে দরকার ছিল।
এদিকে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের ব্লকবাস্টার সিনেমাসেও প্রদর্শিত হচ্ছে ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’। সিনেমাটি দেখতে সেখানেও দর্শকদের বেশ আগ্রহ দেখা গেছে।
শো শেষে তৃপ্ত হোসেন শাহরিয়ার নামে এক দর্শক বলেন, ‘ইটস অ্যামেইজিং। বঙ্গবন্ধুকে যেন জীবন্ত দেখলাম। সিনেমাটির বিষয়টি বাদ দিলে ইতিহাসের একটি একটি চলমান দৃশ্য সবাইকে মুগ্ধ করবে, এটা আমার বিশ্বাস। আমার মতে, সিনেমাটি সবারই দেখা উচিৎ।
সিনেমাটির প্রিমিয়ার দেখতে স্টার সিনেপ্লেক্সে হাজির হয়েছিলেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আঁখি আলমগীর। পোস্টারের পাশে দাঁড়িয়ে তুলেছেন ছবি। বলেছেন, দারুণ একটি দৃশ্যায়ন। পর্দায় মুগ্ধ হয়ে থাকার মতো। কিছু কিছু বিষয় তো বেশ কষ্ট দেবে এটা সত্যি। যেমন, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড, এটা আপনাকে কাঁদাবে। যারা এ সিনেমাটির পেছনে শ্রম দিয়েছেন অভিনেতা, কলা-কুশলী সবাইকে আমার পক্ষ থেকে অভিনন্দন। দারুণ কাজ করেছেন সবাই।
সিনেমাটি নিয়ে সিনেমা নির্মাতা মেঘ বলেছেন, ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার সিনেমা দেখে মনে হয়েছে ভারতীয় নন্দিত চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল অর্থ সঠিকভাবে খরচ করেছেন।
সিনেমার শুরুতেই তথ্যগত বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, নাটকীয়তার জন্য গল্প সংযোজন করা হয়েছে। দুটি দৃশ্যের তথ্য সমালোচনা বাদ দিলেই এটি অসাধারণ একটি সিনেমা। দলমত নির্বিশেষে এ সিনেমা সবার দেখা দরকার।
এদিকে সিনেমাটির বিশেষ কিছু দৃশ্য নিয়েও দর্শকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে শেখ মুজিবের বিয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান।
এ দৃশ্য প্রসঙ্গে কামরুল হাসান নামের এক দর্শক বলেন, ‘বিয়ের সময় গায়ে হলুদ নামের অনুষ্ঠান দেখা যায় বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে। গ্রামের নারীরা বিভিন্ন লোকসংগীত কণ্ঠে তুলে অনুষ্ঠান জমিয়ে তোলেন। বঙ্গবন্ধুর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানটা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। আরিফিন শুভর মুচকি হাসি, চাহনি, লজ্জা পাওয়ার ব্যাপারগুলো বঙ্গবন্ধুর কথা মনে করিয়ে দেয়। মনে হচ্ছিল বঙ্গবন্ধুর বিবাহ অনুষ্ঠানটা এমন ভাবে উৎসবে মেতে উঠেছিল সবাই, আর তিনি এভাবেই বঙ্গমাতাকে দেখতেন বইয়ের আড়াল থেকে লুকিয়ে।’
উল্লেখ্য, এ সিনেমায় বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ। শেখ হাসিনা চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ফারিয়া এবং বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী ফজিলাতুন নেছা মুজিবের চরিত্রে নুসরাত ইমরোজ তিশা।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন খায়রুল আলম সবুজ (লুৎফর রহমান), দিলারা জামান (সাহেরা খাতুন), সায়েম সামাদ (সৈয়দ নজরুল ইসলাম), শহীদুল আলম সাচ্চু (এ কে ফজলুল হক), প্রার্থনা ফারদিন দীঘি (ছোট রেনু), রাইসুল ইসলাম আসাদ (আবদুল হামিদ খান ভাসানী), গাজী রাকায়েত (আবদুল হামিদ), তৌকীর আহমেদ (সোহরাওয়ার্দী), সিয়াম আহমেদ (শওকত মিয়া), মিশা সওদাগর (জেনারেল আইয়ুব খান), এলিনা (বেগম খালেদা জিয়া) ও জায়েদ খান (টিক্কা খান)।