
প্রিন্ট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৪ এএম

হামিদ বিশ্বাস
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরও পড়ুন
ব্যাংকের কার্ডে লেনদেন দ্রুত বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা প্রায় ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। ২০২০ সালের পর লেনদেন বেড়েছে ১৬০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে দেশ ও বিদেশে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার গত ডিসেম্বরে অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে রমজান ও ঈদকে ঘিরে বড় বড় শপিংমলে ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটা জমে উঠেছে। চলতি মাসে সর্বোচ্চ লেনদেনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর ইস্যু করা ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৬ লাখ ৭৬ হাজার। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে যা ছিল ১৫ লাখ ২৪ হাজার। ওই বছরের জানুয়ারিতে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের পরিমাণ ছিল মাত্র ১ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে তা ৩ হাজার ৫৩২ কোটি টাকায় উঠেছে। কার্ড লেনদেনে আগ্রহী করতে ব্যাংকগুলো নানা প্রচার চালিয়ে আসছে। ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে বাড়তি আকর্ষণের জন্য কেনাকাটার বিল পরিশোধে দেওয়া হচ্ছে মূল্যছাড় বা ক্যাশব্যাক অফার। সবচেয়ে বেশি অফার পেয়ে থাকেন ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকরা।
ডেবিট বা প্রিপেইড কার্ড দিয়েও সব ধরনের লেনদেন করা যায়। এমনকি অনেক ব্যাংকের ডেবিট কার্ড থেকে বিদেশেও পরিশোধ করা যায়। ডেবিট বা প্রিপেইড কার্ডে বিল পরিশোধেও মিলছে নানা ছাড়। গত পাঁচ বছরে কার্ডের সংখ্যা ১৪২ শতাংশ বেড়ে গত ডিসেম্বর শেষে ৪ কোটি ৯৮ লাখে পৌঁছেছে। ২০২০ সালে যা ছিল মাত্র ২ কোটি ৬ লাখের কম। আর ২০২০ সালের তুলনায় কার্ডে লেনদেন ১৬৬ শতাংশ বেড়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কার্ডে মোট লেনদেন ছিল ১৬ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে তা বেড়ে ৪৪ হাজার ৬৯১ কোট টাকা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নগদ লেনদেন কমাতে বিভিন্নভাবে ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করছে। আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে দেশের মোট লেনদেনের অন্তত ৭৫ শতাংশ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
জানা গেছে, ক্রেডিট কার্ডে এখন সবচেয়ে এগিয়ে আছে বেসরকারি খাতের দ্য সিটি ও ব্র্যাক ব্যাংক। পর্যায়ক্রমে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, ইউসিবিএল, ইস্টার্ন, ডাচ্-বাংলা, ন্যাশনাল, সাউথইস্ট ও ব্যাংক এশিয়া রয়েছে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের তালিকায়। ডেবিট কার্ডে এখন শীর্ষে রয়েছে ডাচ্-বাংলা ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। পর্যায়ক্রমে ব্যাংক এশিয়া, দ্য সিটি, সোনালী, ইউসিবিএল, ব্র্যাক, যমুনা, ট্রাস্ট ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক রয়েছে তালিকায়।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যন ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান রোববার যুগান্তরকে বলেন, ‘ক্যাশলেস’ করার জন্য কার্ডভিত্তিক লেনদেন বাড়ানো খুব জরুরি। নগদ বহনের ঝামেলা না থাকায় এটি নিরাপদ এবং সময়ও বাঁচে। সে কারণে কার্ডের প্রতি মানুষের আগ্রহ অনেক বেড়েছে। ব্যাংকগুলোও নানা অফার ও সুবিধার মাধ্যমে কার্ডের প্রতি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। ভবিষ্যতে কার্ডভিত্তিক লেনদেনের চাহিদা আরও বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের বেশিরভাগই তিনটি ব্র্যান্ডের ভিসা, মাস্টারকার্ড এবং অ্যামেক্স ১০ শতাংশ। দেশে ও বিদেশে উভয় ক্ষেত্রেই ক্রেডিট কার্ডের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের বিল পরিশোধে। গত ডিসেম্বরে দেশের ভেতরে মোট ৩ হাজার ২১৫ কোটি টাকা লেনদেনের প্রায় ৪৯ শতাংশই হয়েছে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। দেশের ভেতরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশ গেছে খুচরা আউটলেট সেবার বিলে। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ইউটিলিটি বিল পরিশোধ হয়েছে ৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। এছাড়া ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ নগদ উত্তোলন, কাপড়ের দোকানের বিল পরিশোধে ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ওষুধে ৫ দশমিক ৪০, ট্রান্সপোর্টেশনে ৩ দশমিক ৩৫ এবং সরকারি সেবায় ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আর অর্থ স্থানান্তর হয়েছে ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ, ব্যবসায়িক সেবায় ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং পেশাদারি সেবায় ব্যয় হয়েছে শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ। ২০২৪ সালের মার্চে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। এরপর গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে তা কমে যায়। সরকার পরিবর্তনের পর গত সেপ্টেম্বর থেকে আবার বেড়েছে।
অন্যদিকে গত ডিসেম্বরে ক্রেডিট কার্ডে দেশের বাইরে ৪৯২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে ৩১ শতাংশ গেছে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের বিল পরিশোধে। খুচরা আউটলেট সেবায় ব্যয় হয়েছে ১৭ শতাংশ। ওষুধে ১০ শতাংশ এবং ট্রান্সপোর্টেশনে ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। এছাড়া কাপড়, ব্যবসায়িক সেবা, পেশাদারী সেবা, নগদ উত্তোলন, সরকারি সেবা ও ইউটিলিটি বিল পরিশোধে গেছে বাকি অর্থ।
গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে বড় একটি পরিবর্তন এসেছে। গত জুলাই পর্যন্ত বিদেশে ক্রেডির্ট কার্ডে লেনদেনের ৩০ শতাংশের বেশি হতো ভারতে। এখন তা কমে ৮ শতাংশে নেমেছে। গত কয়েক মাস ধরে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ড। গত ডিসেম্বরে বিদেশে ক্রেডিট কার্ডে মোট ৪৯২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ ব্যয় হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ১৮ শতাংশ খরচ হয়েছে থাইল্যান্ডে। এর পরের অবস্থানে থাকা সিঙ্গাপুরে হয়েছে ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
গত ডিসেম্বরে চতুর্থ অবস্থানে নেমে আসা ভারতে খরচ হয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। পর্যায়ক্রমে যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশ রয়েছে তালিকায়।