
প্রিন্ট: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫০ পিএম

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

প্রতীকী ছবি
আরও পড়ুন
পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিরাজমান অস্থিতিশীলতায় রপ্তানিমুখী শিল্প খাত কঠিন সময়ের মুখে পড়েছে। সোমবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে শ্রম অসন্তোষের কারণে অনেক কারখানা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে, ফলে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন কার্যক্রম। এরই মধ্যে আবার শিল্পপ্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের বেতন ও ঈদের বোনাসের বিশাল চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রপ্তানি খাতের প্রণোদনার ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আটকে গেছে। যদিও সরকারের অর্থ সংকটের কারণে ঈদের আগে এ টাকা ছাড় করা নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। প্রণোদনার টাকা না মিললে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে বড় ধরনের চাপের মুখে পড়তে হবে রপ্তানিমুখী শিল্পের মালিকদের। ইতোমধ্যে শিল্পমালিকরা তাদের এ উদ্বেগের কথা অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে জানিয়েছেন।
জানা যায়, পোশাকশিল্পের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন এলএফএমইএবির পক্ষ থেকে প্রণোদনার অর্থ দ্রুত ছাড় করার জন্য চলতি মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে প্রণোদনার বকেয়া পাওনার তথ্য তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, জুলাই থেকে মার্চ-এ নয় মাসে পোশাকশিল্পে বকেয়া প্রণোদনা ৫২২৭ কোটি, নিটওয়্যার শিল্পে ৭০০০ কোটি এবং চামড়া-চামড়াজাত পণ্য শিল্পে ৩০৫ কোটি টাকা জমা হয়েছে। এ অর্থ দ্রুত ছাড় করার দাবি জানানো হয়। এদিকে অর্থ উপদেষ্টা প্রণোদনার বিষয়ে অবহিত আছেন জানিয়ে বলেছেন, কিছু ক্ষেত্রে রপ্তানি শিল্পের নগদ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে শিল্প খাত সচল রাখার চেষ্টা চলছে।
শিল্প খাত সচল রাখার জন্য প্রণোদনার অর্থ দ্রুত ছাড় দেওয়াই কাম্য। এমনিতেই রপ্তানি খাতের নগদ সহায়তার অঙ্ক খুব বেশি নয়। তার ওপর এ অর্থ পেতে অতীতে নানা জটিলতার মুখে পড়ার অভিজ্ঞতা রপ্তানিকারকদের রয়েছে। পোশাকশিল্পের মালিকরা বলছেন, ঈদের আগে তারা বহুমুখী আর্থিক চাপের মধ্যে থাকেন। শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, বোনাস ছাড়াও বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল এবং অন্যান্য খরচ পরিশোধ করতে হয়। ফলে স্বল্পসময়ের মধ্যে প্রচুর অর্থের প্রয়োজনে তারল্য সংকটের সম্মুখীন হতে হয় তাদের। সেক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে ঈদের আগে প্রণোদনার অর্থ মিললে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-বোনাস নিয়ে মালিকপক্ষের দুশ্চিন্তা অনেকটাই কেটে যাবে। একই সঙ্গে পাওনা মজুরি মিললে শ্রমিক-কর্মচারীরাও পরিবার নিয়ে আনন্দের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে পারবেন।
প্রণোদনার অর্থছাড় নিয়ে বিলম্বের কিছু কারণ রয়েছে। যেমন, প্রণোদনার অর্থ অন্য খাতে খরচের অভিযোগ অতীতে উঠতে আমরা দেখেছি। এমনকি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ উত্তোলনের মতো জাল-জালিয়াতির ঘটনা ঘটার অভিযোগও আছে। দেশি পণ্য রপ্তানিকে উৎসাহিত করতে প্রতিবছর সরকারের দেওয়া নগদ সহায়তার শর্ত ভঙ্গ করে রপ্তানির প্রমাণপত্র উপস্থাপন না করেই কোনো কোনো অসৎ প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছে, এমন প্রতিবেদন যুগান্তরেই প্রকাশিত হয়েছে। তবে সব পক্ষ আন্তরিক হলে এ ধরনের অসততা বন্ধ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সেক্ষেত্রে সরকারকে প্রণোদনার অর্থ দেওয়ার সময় নজরদারি বাড়াতে হবে। শিল্প খাত মালিকদেরও নিশ্চিত করতে হবে, এ অর্থ অপাত্রে যাচ্ছে না। ঈদ সামনে রেখে এবং আপৎকালীন রপ্তানি শিল্পকারখানাগুলোকে সচল রাখার স্বার্থে প্রণোদনার অর্থছাড়ে সরকার কার্যকর উদ্যোগ নেবে-এটাই প্রত্যাশা।