Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

গাজা কি এ অঞ্চলের ভাগ্য পরিবর্তন করবে?

Icon

আব্দুর রহমান আল-রাশেদ

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গাজা কি এ অঞ্চলের ভাগ্য পরিবর্তন করবে?

গাজা যুদ্ধ প্রায় শেষ হয়ে আসছে এবং এ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কথা বলার সময় এসেছে। সম্ভবত গাজার মানুষ এত ভয়াবহতা সহ্য করেছে, যা ফিলিস্তিনিদের এবং এ অঞ্চলটির ভাগ্য বদলে দিতে পারে। এ যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূমিকে সহায়তা করা এখন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, যাতে আমরা এই পর্যায়টি অতিক্রম করতে পারি। এই ধরনের সমর্থন একটি ভালো ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুঘটক হিসাবে কাজ করবে, যা গাজায় সৃষ্ট পরিবর্তন ও উন্নয়নের পরে একটি নতুন পর্যায় শুরু করতে সক্ষম হবে।

গাজা যুদ্ধের অপ্রত্যাশিত অর্জনের ক্ষেত্রে এ অঞ্চলে একটি ভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার উত্থানের প্রয়োজন। তা না হলে সিরিয়া, লেবাননের মতো এ অঞ্চলে আরও এক দশক ধরে বিশৃঙ্খলা ও যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করবে। ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘতম এবং কঠিনতম যুদ্ধ শেষ হয়েছে এবং দুই মিলিয়ন মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদান করার সময় এসেছে। গাজার বাস্তবতা শিক্ষা দিচ্ছে, যে কোনো বিষয়কে অকালেই ছেড়ে দেওয়া যায় না, অন্যদের সেটি নিয়ে কাজ করার জন্য রাখতে হয়। ইসরাইলের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠিত করতে হলে প্রতিবেশীদের মধ্যেও শান্তি থাকতে হবে। অন্যথায় প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে আংশিক শান্তিচুক্তি অপ্রতুল তো বটেই, কারণ এটি আংশিক হলে তা যুদ্ধের দিকেই পরিচালিত করবে। গাজার যুদ্ধ হয়তো শেষ হয়েছে, কিছু ছিটেফোঁটা গুলিবর্ষণের ঘটনাও দ্রুতই থেমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। গাজা প্রথমত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শান্তির জন্য একটি প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করতে পারে। ২০০৭ সাল থেকে যে ফাটলটি বিদ্যমান, কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ সংঘাত নিরসনে একটি চুক্তির দিকে নিয়ে যেতে পারলে তা বন্ধ হতে পারে। এটি দ্বিরাষ্ট্রের মতো সমাধানের পথের সূচনার প্রবেশদ্বার হতে পারে। যার ওপর সৌদি আরব কাজ করার কথা বলেছে, যখন ইসরাইল প্রতিরোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রতিটি শান্তি প্রতিষ্ঠার শুরুতে তা প্রত্যাখ্যান হয় এবং শেষ পর্যন্ত তা সমঝোতা ও হাত মেলানোতে শেষ হয়। ২০২৩ সালের অক্টোবরে যা ঘটেছে, তা ১৯৭৩ সালের অক্টোবরের যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে।

গাজার যুদ্ধ অঞ্চলটির পরিবর্তন করেছে, হিজবুল্লাহর অনেক শক্তি ও নেতৃত্বকে মুছে ফেলেছে, বাশার আল-আসাদের প্রশাসনের পতনে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং ইরানের পূর্বে আরব অঞ্চলের ওপর সম্প্রসারণ এবং আধিপত্যের স্বপ্নকে শেষ করেছে। এখন আমাদের একটি নতুন এবং সত্যিকার অঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের সুযোগ সামনে এসেছে। সবার নজর এখন ইরানের দিকে। ইসরাইলের সঙ্গে তেহরানের সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো আমাদের চমকিত করেছে। ইরান এ জন্য চল্লিশ বছর ধরে নিজেদের তৈরি করেছে এবং শক্তি অর্জন করেছে। আজ ইরান নিজেকে নতুন দৃশ্যপটে পুনরায় মূল্যায়নের মধ্যে রয়েছে, যা মিডিয়ায় খোলামেলা আলোচনাতেও প্রতিফলিত হচ্ছে। তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়েও গভীর আলোচনা চলছে। এখন ইরানের সামনে দুটি পথ রয়েছে। প্রথমটি নতুন বাস্তবতার সঙ্গে অভিযোজন করে শান্তির সন্ধান করা এবং আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করে ফিলিস্তিনিদের শান্তি প্রকল্পে সমর্থন করা। এই ধরনের তৎপরতা রক্তপাত, ধ্বংস ও ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই ফিলিস্তিনিদের উদ্দেশ্য অর্জনে সাহায্য করবে।

আর দ্বিতীয় পথ হলো, তাদের সামরিক সক্ষমতা পুনর্গঠন করা ও অঞ্চলে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে সিরিয়া, লেবানন ও গাজা পুনরুদ্ধার করা। যদিও এটি ব্যয়বহুল হবে এবং তেহরান তার জনগণের সমর্থন অর্জনের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। যারা ইতোমধ্যেই গণনৈতিক নিষেধাজ্ঞার বোঝা বহন করছে, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার আসন্ন প্রশাসন তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আসলে নতুন পরিস্থিতিতে, আমাদের বাস্তবভাবে চিন্তা করতে হবে।

উল্লেখ্য, লেবানন একটি নতুন ব্যবস্থার সন্ধান পেয়েছে, সিরিয়ায় নতুন নেতৃত্ব এসেছে, হামাস একটি ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অংশ হতে প্রস্তুত হয়েছে এবং এমন লক্ষণ রয়েছে যে, ইরাক মিলিশিয়াগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার পথ খুঁজতে শুরু করেছে, যদি না তাদের পুরোপুরি নির্মূল করতে পারে।

এই পরিবর্তনগুলো গাজা, লেবানন ও সিরিয়ার গত দুই রক্তাক্ত দশকের মূল্য চুকিয়ে এসেছে। কিন্তু এটি কি বিশৃঙ্খলার পরিসমাপ্তি, অস্থিরতা, দখলদারিত্ব শেষ করার ও আঞ্চলিক সম্মতির অর্জনে ফসল ফলাতে পারবে? গাজার যুদ্ধের আগে, এমন দৃশ্যপট এক প্রকার অসম্ভবই মনে হচ্ছিল। কিন্তু আজ এটি আর অসম্ভব নয়। (আল অ্যারাবিয়া থেকে)

আব্দুর রহমান আল-রাশেদ : আল অ্যারাবিয়ার সম্পাদকীয় পর্ষদের প্রধান

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম