ক্রমবর্ধমান দুর্ঘটনা
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো জরুরি ক্রমবর্ধমান দুর্ঘটনা
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান দেখলে চোখ কপালে ওঠার অবস্থা হয়। চলতি বছরের অক্টোবরে ৪৬৯ জন নিহত ও ৮৩৭ জন আহত হয়েছেন! তাদের মধ্যে ৪১ দশমিক ৭৯ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছেন ১৫ দশমিক ১২ জন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ৭৪ নারী ও ৬৬ শিশু। নভেম্বরের চিত্রও খারাপ। শুক্র ও শনিবারে সড়ক দুর্ঘটনায় সখীপুরে তিনজন, নান্দাইলে দুজন, দেবহাটা ও কুড়িগ্রাম সদরে একজন করে দুজন নিহত হয়েছেন।
দেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে মানুষ আশা করেছিল সড়ক দুর্ঘটনা কমবে। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা বেড়েই চলেছে। নানা পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও কেন সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে, তা ভালোভাবে খতিয়ে দেখা দরকার।
দেশের সড়কগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হওয়ার অন্যতম কারণ চালকদের বেপরোয়া মনোভাব। কাজেই দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের মনমানসিকতার পরিবর্তনের জন্যও পদক্ষেপ নিতে হবে। সড়কের ত্রুটি দূর করার পাশাপাশি যানবাহনের ত্রুটি দূর করার জন্যও নিতে হবে পদক্ষেপ।
সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে নানা পরামর্শ ও সুপারিশ প্রদান করা হলেও তা যে অরণ্যে রোদনে পর্যবসিত হচ্ছে, দেশে প্রতিদিন ঘটা দুর্ঘটনাগুলোই এর বড় প্রমাণ। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা দরকার। দেশে দক্ষ চালকের অভাব রয়েছে। কাজেই দক্ষ চালক তৈরির জন্য জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। সড়ক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রয়োজনীয় লোকবল কম, এ তথ্য আমরা জানি। তবে দুর্নীতি রোধে কর্তৃপক্ষ কঠোর হলে কম লোকবল নিয়েও বিভিন্ন ধরনের অভিযানে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া সম্ভব।
অভিযোগ আছে, অনেক পরিবহণ মালিক চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ দেন না। ক্লান্ত-শ্রান্ত চালক গাড়ি চালালে স্বভাবতই তাতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। আরেকটি কাজ খুব জরুরি। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পন্ন অথবা মনিটর করতে হবে।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনা এখন এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, একজন যাত্রী নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে প্রতিমুহূর্তে স্বজনদের উৎকণ্ঠায় থাকতে হয়। এ অবস্থায় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। তবে এ সমস্যার সমাধানে যত পরিকল্পনাই গ্রহণ করা হোক না কেন, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দুর্নীতি রোধ করা না গেলে কাঙ্ক্ষিত ফল মিলবে কিনা সন্দেহ। এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্যও নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ।