ডেঙ্গুর ভয়াবহ বাৎসরিক প্রকোপ
সংকট প্রকট, প্রতিবিধান কী
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অতীতে সাধারণত অক্টোবর থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমতে শুরু করত। কিন্তু গত বছর এ ধারায় পরিবর্তন আসে-নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। এ বছর এ পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বছর আগামী দুই মাস ডেঙ্গু নিয়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। দেশে ডেঙ্গুজ্বরে মৃত্যুর পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর চাপ। এ ঊর্ধ্বমুখী ধারায় শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও আটজন মারা গেছেন। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেলেন ৩৫০ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে এক হাজার ১৩৪ জন ডেঙ্গু নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
নানা কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নির্দিষ্ট মৌসুম ছেড়ে বছরজুড়ে বিস্তৃত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টির মৌসুম বেড়েছে। এতে দীর্ঘ সময় ডেঙ্গু ভাইরাসবাহিত এডিস মশা প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাচ্ছে। মশক নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব বাড়ছে। এছাড়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা যত বাড়ছে নতুন করে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও তত বাড়ছে। ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় স্বল্প পরিসরে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চালালেও ঢাকার পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে মশক নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রমে বড় ধরনের দুর্বলতা রয়েছে।
ডেঙ্গু আক্রান্তের শুরুতে সতর্ক না হলে রোগীর শারীরিক অবস্থা জটিল হয়ে শক সিনড্রোম দেখা দেয়। যারা বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তাদের নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে। কাজেই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত সবার দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে। নভেম্বরের প্রথম সাত দিনে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য বিশেষ গবেষণা হওয়া দরকার। এবার কেন এমন ব্যতিক্রম হলো তা নিয়ে গবেষণা না হলে আগামীতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন আক্রান্ত হয়েছিল এবং ১ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। গত বছর এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলার পরও এ বছর ডেঙ্গু প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষ কেন জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে না তা বিস্ময়কর। ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা পেতে বছরব্যাপী মশক নিধন ও অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। যেভাবেই হোক, ডেঙ্গুর উৎস পুরোপুরি নির্মূল করতে হবে।