ব্যাংক ঋণের ২৭ শতাংশ দিতে হবে ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তাদের

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৪:০৩ এএম

ছবি: সংগৃহীত
কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্প খাতে কী পরিমাণ অর্থ ঋণ দেওয়া হবে তার নতুন লক্ষ্য ঠিক করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ব্যক্তি পর্যায়ে প্রান্তিক অপ্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোক্তারাও পাবেন জামানতবিহীন ঋণ। ট্রেড লাইসেন্স নেই এমন উদ্যোক্তাদের পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের ঋণের আওতা বাড়াতে নীতিগত পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোমবার কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগামস ডিপার্টমেন্ট আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ
লক্ষ্যমাত্রার কথা জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক
রোকন উদ্দিন, সংশ্লিষ্ট বিভাগের পরিচালক নওশাদ মুস্তফা, সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকীসহ
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। একই দিনে এ সংক্রান্ত একটি মাস্টার সার্কুলার জারি করে দেশের
সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর কাছে
পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নির্দেশনায়
বলা হয়, ২০২৯ সালের মধ্যে ব্যাংকের মোট ঋণ স্থিতির ২৭ শতাংশ সিএমএসএমই খাতে দিতে হবে।
যদিও বর্তমানে ২৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এ খাতে বিতরণ হয়েছে মোট ঋণের ১৯ শতাংশ।
একই সঙ্গে প্রতি বছর এ খাতে ঋণের পরিমাণ দশমিক ৫ শতাংশ করে বাড়াতে নির্দেশনা দেওয়া
হয়েছে। চলতি ২০২৫ সালের মধ্যে ব্যাংকের মোট ঋণ স্থিতির চলমান লক্ষ্যমাত্রা সিএমএসএমই
খাতে ২৫ শতাংশ অর্জন হবে বলেও জানানো হয়।
নির্দেশনা মতে,
সিএমএসএমই খাতে মেয়াদি ঋণ পাঁচ বছরের স্থলে সর্বোচ্চ সাত বছর করা হয়েছে। এছাড়া পাঁচ
বছর বা তার বেশি মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে প্রকল্প ভেদে যেমন কারখানা নির্মাণ ইত্যাদি ব্যাংক-গ্রাহক
সম্পর্কের ভিত্তিতে ৬ থেকে ১২ মাস গ্রেস পিরিয়ড প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে
৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সহায়ক জামানতবিহীন ঋণ প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ব্যাংক-গ্রাহক
সম্পর্কের ভিত্তিতে এ খাতে সহায়ক জামানত ব্যতিরেকে পাঁচ লাখ টাকার অধিক পরিমাণ ঋণ প্রদান
ও নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্ক বিবেচনায় সহায়ক জামানত ব্যতিরেকে
২৫ লাখ টাকার বেশি ঋণ প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের
নির্বাহী পরিচালক আমির উদ্দিন জানান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে অর্থনীতির
চাকা ঘোরাতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ লক্ষ্যে নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষ সুবিধার আওতায়
আনা হয়েছে। বর্তমানে ২২ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা মাত্র সাত শতাংশ ঋণ পাচ্ছেন। এখন থেকে
জামানত ছাড়াই ২৫ লাখ টাকারও বেশি ঋণ পাবেন নারী উদ্যোক্তারা।
এসএমই অ্যান্ড
স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টের পরিচালক নওশাদ মুস্তফা বলেন, জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২
মোতাবেক উদ্যোক্তা নির্ণয়ের মানদণ্ড হালনাগাদ করা হয়েছে এবং মাঝারি শিল্প উদ্যোগে ব্যবসা
খাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন অংশীজন তথা ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানি, চেম্বার
ও গ্রাহকদের সুপারিশের ভিত্তিতে সিএমএসএমই ঋণের সর্বোচ্চ সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। অপ্রাতিষ্ঠানিক
বা প্রান্তিক উদ্যোগে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা এবং কুটির, ক্ষুদ্র, মাইক্রো ও মাঝারি
উদ্যোগের উৎপাদনশীল খাতে সর্বোচ্চ (কুটির উদ্যোগে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা, মাইক্রো
উদ্যোগে সর্বাচ্চ ২ কোটি টাকা, ক্ষুদ্র উদ্যোগে সর্বোচ্চ ২৫ কোটি টাকা এবং মাঝারি
উদ্যোগের সর্বোচ্চ ১০০ কোটি টাকা) ঋণ সীমা প্রদান করা হয়েছে।
ক্লাস্টার অর্থায়নে
মাঠপর্যায়ের চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে পূর্বে প্রদত্ত লক্ষ্যমাত্রা ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে
১০ শতাংশ পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। নারী উদ্যোক্তা খাতে অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা ১৫ শতাংশ
অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। সেবা খাতের ঋণ স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা পূর্বের ২৫ শতাংশ থেকে
কমিয়ে ২০ শতাংশ এবং ব্যবসা খাতে সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে।