খেলাপি ঋণের লাগাম টানাই লক্ষ্য
ঋণখেলাপিদের ফের বড় ছাড়

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ১২:২৯ এএম

প্রতীকী ছবি
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নজিরবিহীন লুটপাটের কারণে এখন পাগলা ঘোড়ার গতিতে বেড়ে যাচ্ছে খেলাপি ঋণ। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকের মূলধন, আয় কমে যাচ্ছে, বেড়ে যাচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও বৈরী পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আদায় বাড়িয়ে খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতিতে লাগাম টানতে ঋণখেলাপিদের আবারও বড় ছাড় দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ বিষয়ে সোমবার
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের
কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
সার্কুলার অনুযায়ী,
এখন থেকে বিদ্যমান ঋণস্থিতির ন্যূনতম ৫ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নগদে পরিশোধ করে এক্সিট
সুবিধাপ্রাপ্তির আবেদন করতে পারবে। আগে কমপক্ষে ১০ শতাংশ পরিশোধ করে আবেদন করতে হতো।
এক্ষেত্রে ঋণখেলাপিরা এক্সিট সুবিধা পেতে ৫ শতাংশ কম অর্থ দিয়ে আবেদন করতে পারবে। পাশাপাশি
এ সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। আগে মূল
ঋণ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত এক্সিট সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাহী বা ব্যাংকের
ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ অনুমোদন করতে পারতেন। এখন তারা ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত খেলাপি ঋণের
এক্সিট সুবিধা দেওয়ার আবেদন অনুমোদন করতে পারবেন। এর বেশি অঙ্কের খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে
এক্সিট সুবিধা নিতে হলে পর্ষদ বা নির্বাহী কমিটির অনুমোদন দিতে হবে।
নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত
কারণে যেসব উদ্যোক্তা ঋণখেলাপি হয়েছেন, কেবল তারাই এর আওতায় এক্সিট সুবিধা পাবেন। এছাড়া
অন্যান্য কারণে খেলাপি হয়ে থাকলে তারা এ সুবিধা পাবেন না। এ ধরনের ঋণখেলাপিদের বিশেষ
ছাড় দিয়ে প্রথম সার্কুলারটি জারি করা হয় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের গভর্নর আব্দুর রউফ
তালুকদারের সময় ২০২৪ সালের ৮ জুলাই। ওই সময়ে এই সার্কুলারের আওতায় খেলাপি ঋণ নবায়ন
করেও এর ঊর্ধ্বগতি কমানো সম্ভব হয়নি। উলটো বেড়েই চলেছে, যা এখন আরও বেশি মাত্রায় বাড়ছে।
সার্কুলারে
আরও একটি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়, এক্সিট সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণ হিসাবে গ্রাহক
নির্ধারিত কিস্তি অনুযায়ী পরিশোধ না করলে তা খেলাপি হলে কোনো অবস্থাতেই পুনঃতফশিলীকরণ
বা পুনর্গঠন করা যাবে না। এ সুবিধাপ্রাপ্তির পর গ্রাহক পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে ঋণ
আদায়ে ব্যাংক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আগের সার্কুলারে
এক্সিট সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণ হিসাবে গ্রাহক নির্ধারিত কিস্তি অনুযায়ী পরিশোধ না করলে তা
খেলাপি হলে ব্যাংক গ্রাহকের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবে বলে উল্লেখ থাকলেও ওইসব
ঋণ কোনো অবস্থাতেই পুনঃতফশিলীকরণ বা পুনর্গঠন করা যাবে না বলে কোনো নির্দেশনা ছিল না।
ফলে এখন এ সুবিধা নিলে কেউ আবার খেলাপি হলে সেক্ষেত্রে ওইসব ঋণ পুনঃতফশিল বা পুনর্গঠন
করা যাবে না।
সার্কুলারে
বলা হয়, আগের মতোই ঋণগ্রহীতার আবেদনপ্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে ব্যাংকে তা নিষ্পত্তির
ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সূত্র জানায়,
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। ওইসব তথ্য আড়াল
করে খেলাপি ঋণ কম দেখানো হতো। যে কারণে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায়নি। ওই সরকারের
সময়ে খেলাপি ঋণ ছিল ৯ শতাংশের বেশি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত জুনের
খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ করে বর্তমান সরকার। এ সময়ে খেলাপি ঋণের লুকানো তথ্য প্রকাশ
করায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ শতাংশে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ আরও বেড়ে ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে
গেছে, তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকায়। আওয়ামী লীগের সময়ে শেষ ঘোষিত তথ্যে
খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা।a