অর্থনীতিবিষয়ক টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন
চাপ বাড়ছে চড়া সুদের ঋণ পরিশোধে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:১০ পিএম
সুদ বেশি হওয়ায় ঋণ পরিশোধে উদ্যোক্তাদের ওপর চাপ বাড়ছে। বাড়তি সুদের কারণে দেশে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, যা দেশি পণ্যকে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিচ্ছে। রপ্তানিকারকরা বিদেশে অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ছেন। এসব কারণে ঋণের সুদহার ১৫ শতাংশের নিচে রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়। বৃহস্পতিবার টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বরে ড. কেএএস মুর্শিদের নেতৃত্বে এ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। অর্থনৈতিক খাতে বৈষম্য রোধ এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সহজ করতে প্রয়োজনীয় সুপারিশের জন্য এ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতির সামনে বিশাল চ্যালেঞ্জ। এগুলো অপ্রতিরোধ্য কিছু নয়। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ নিয়ে এসব সমাধান সম্ভব। এতে দেশের অর্থনীতিতে বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হবে। এজন্য স্থায়ী একটি সংস্কার কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে স্বল্পমেয়াদি বেশকিছু সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স। এর মধ্যে আছে ব্যবসার পরিবেশ নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন। এজন্য একটি বিশেষ সেল গঠন করতে বলা হয়েছে। যাতে চাঁদাবাজি তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করা যায়। পাশাপাশি তারা চলতি অর্থবছরের জন্য সহনীয় কিন্তু কঠোর মুদ্রানীতি অনুসরণ করতে বলেছে। ডিজিটাল খাত বিকাশের জন্য এর ওপর আরোপিত বাড়তি কর প্রত্যাহারের সুপারিশ এবং ব্যাংক খাতে ঋণের সুদহার সহনীয় পর্যায়ে রাখতে উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণে হয়রানি বন্ধ করতে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, নতুন সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক অস্থিরতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয় মোকাবিলা করে এগোচ্ছে। এগুলো একদিনে সমাধান সম্ভব নয়। এজন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। সরকারি খাতের দক্ষতা বাড়াতে হবে। অর্থনৈতিক কূটনীতিতে আরও জোর দিতে হবে।
প্রতিবেদনে সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, উদ্যোক্তা এবং বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে নিয়ন্ত্রণ কাঠামোকে আরও সহজ করতে বলা হয়েছে। তাৎক্ষণিক খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা সংকট মোকাবিলায় সরকারকে আরও দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। জোর দেওয়া হয়েছে অর্থনৈতিক উন্নয়নে, প্রশাসন সংস্কার, আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং ন্যায়সংগত মানবসম্পদ উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল গ্রহণের ওপর। ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে চাঁদাবাজি ও ঘুস লেনদেন বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এজন্য একটি কমিশন বা সেল গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চ সুদের হার দেশীয় উৎপাদন খাতকে ব্যয়বহুল করে তোলে। এজন্য সুদের হার কমাতে হবে। এজন্য অতি কঠোর মুদ্রানীতি গ্রহণের পরিবর্তে সহনশীল মুদ্রানীতি গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। যাতে বেসরকারি খাত চাহিদা অনুযায়ী ঋণের জোগান পায় এবং সুদের হারও নমনীয় থাকে।
এতে বলা হয়, ঋণের সুদহার বেশি হওয়ায় ঋণ পরিশোধে বড় ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। রপ্তানিকারকরা নেতিবাচক পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন।
এতে আরও বলা হয়, সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তাসহ আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আনতে আরও সতর্কভাবে এগোতে হবে। মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাংক খাতকে শক্তিশালী করতে একটি স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক অপরিহার্য। সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে টাকা ছাপিয়ে তরলতা সহায়তা দেওয়ায় মূল্যস্ফীতিতে কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারে কি না, তা পর্যালোচনা করা প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। এছাড়া ইন্টারনেটের ওপর ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ২ শতাংশ সারচার্জ প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।