অর্থ উপদেষ্টার ব্রিফিং
বিশেষ ওএমএস কর্মসূচি বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২৬ পিএম
ফাইল ছবি
বিশেষ পরিস্থিতিতে চালু করা ‘বিশেষ ওএমএস’ কর্মসূচি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে আট লাখের বেশি মানুষ এ কর্মসূচি থেকে উপকৃত হয়েছেন। গত ডিসেম্বর থেকে এটি স্থগিত করা হয়েছে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় আবারও শুরু করা হতে পারে। সচিবালয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান অর্থ উপদষ্টো ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
এর আগে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়
সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে ‘বিশেষ ওএমএস’ কর্মসূচির আওতায় সরাসরি কৃষিপণ্য ও সংশ্লিষ্ট
সেবার ভূতাপেক্ষ (অতীতের কোনো সময়ে কার্যকর ধরে) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরপর ক্রয়সংক্রান্ত
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। এতে ইউরিয়া সার ও পল্লী বিদ্যুতের জন্য স্টিল ক্রস আর্ম
কেনার সিদ্ধান্ত হয়। দুটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, বিশেষ ওএমএস কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে অর্থ বিভাগ থেকে টাকাও দেওয়া হয়েছিল। এর বন্ধের কারণ জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, এ কর্মসূচি দিয়ে বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তবে নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে অন্য কৌশল নিয়ে ভাবা হচ্ছে। এ সময় তিনি চালের মূল্য সহনীয় আনতে সরবরাহ চেইন মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানান। কিছুটা চালের মূল্য কমেছে এবং সহনীয় আছে অন্য পণ্যগুলোও এমন দাবিও করেন।
প্রসঙ্গত, ১৫ অক্টোবর সাধারণ
মানুষকে স্বল্পমূল্যে কৃষিপণ্য দিতে বিশেষ কর্মসূচি চালু করা হয়েছিল। ঢাকা মহানগরী,
চট্টগ্রাম, খুলনা মহানগরীসহ সারা দেশে ৫০টি পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকসেলের মাধ্যমে
কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
সাংবাদিকরা ভ্যাট বাড়ানোর প্রসঙ্গে
জানতে চাইলে অর্থ উপদষ্টো বলেন, কেন ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানো হয়েছিল, কিছুদিন পর তা
জানতে পারবেন। তবে আগামী বাজেটে ভ্যাট ও কর ভালোভাবে সমন্বয় করা হবে। এ সময় তিনি আক্ষেপ
করে বলেন, ভ্যাট যে পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে তাতে কি এমন পণ্যের মূল্য বাড়তে পারে। ওষুধ,
মোবাইল ফোন, ফলের রসে কমানো হয়েছে। অথচ দুধের দাম বেড়েছে। এটা তো বাড়ার কথা নয়।
এ সময় সরকারি চাকরিজীবীদের মহার্ঘ
ভাতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ উপদষ্টো কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ক্রয়সংক্রান্ত উপদষ্টো পরিষদ কমিটির বৈঠক : চার দেশ ও স্থানীয় বাজার থেকে ৭৫৬ কোটি টাকার সার আমদানি ও কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয় এ কমিটির বৈঠকে। এ সারের পরিমাণ ১ লাখ ৫০ হাজার টন, যার মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার টন ইউরিয়া ও ৩০ হাজার টন ফসফরিক অ্যাসিড। সার কেনার প্রসঙ্গে অর্থ উপদষ্টো বলেন, সরকারের বাফার মজুত কমে গেলে বেসরকারি পর্যায়ে সারের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়। এজন্য আজকের বৈঠকে আমদানির অনুমতি দিয়ে মজুত আরও বেশি করা হচ্ছে।
জানা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের
ফার্টিগে্লাব ডিস্ট্রিবিউশন লি. থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া আমদানি করা হবে। ব্যয়
হবে ১৩২ কোটি টাকা। এছাড়া সেৌদি আরবের সাবিক অ্যাগ্রো-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে
৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া আনা হবে। ব্যয় হবে ১৩২ কোটি টাকা। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়
চুক্তির মাধ্যমে কাতার এনার্জি মার্কেটিং থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির
প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ১৩৯ কোটি টাকা। কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার
কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশ থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কেনার প্রস্তাব
অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ব্যয় হবে ১২৯ কোটি টাকা। ওই বৈঠকে চট্টগ্রামের টিএসপিসিএলের
জন্য আরব আমিরাতের মেসার্স জেনট্রেড এফজেডইর থেকে ১০ হাজার টন এবং চীনের মেসার্স গুয়াংজি
পেঙ্গুয়ে ইকো-টেকনোলজি কোং লি. থেকে ২০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক অ্যাসিড আমদানি
করা হবে। এতে ব্যয় হবে ২২৪ কোটি টাকা।
এছাড়া পল্লী বিদ্যুতের জন্য ৭০
কোটি টাকার স্টিল ক্রস আর্ম কেনার সদ্ধিান্ত হয়। ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে বাংলাদেশ
পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের (বাপবিবো) বিতরণব্যবস্থার আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ৩ লাখ ১৭ হাজার
৭১২টি স্টিল ক্রস আর্ম কেনা হবে।