বিবিএস’র প্রতিবেদন
দেশে বেকার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৬০ হাজারে

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪১ পিএম

দেশে বেকার মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৬০ হাজারে। এক্ষেত্রে নারীর চেয়ে বেশি বেড়েছে পুরুষ বেকারের সংখ্যা। এছাড়া দেশের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
বছরের শুরুতে বেকার মানুষের কম থাকলেও বছর শেষে ধারবাহিকভাবে বেড়েছে। এতে বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার। এই সময়ে কৃষি, শিল্প ও সেবা সবখাতেই কমেছে কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে এসেব তথ্য ওঠে এসেছে এসব তথ্য। রোববার চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিএস।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বর্তমানে দেশে ২৬ লাখ ৬০ হাজার বেকার আছেন। ২০২৩ সালের এই সময়ে গড় বেকারের সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৯০ হাজার। এর মানে গত বছরের তুলনায় এখন দেশে বেকারের সংখ্যা বেশি।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নিয়ম অনুসারে, বেকার জনগোষ্ঠী মূলত তারাই যারা গত সাত দিনের মধ্যে মজুরির বিনিময়ে এক ঘণ্টা কাজ করার সুযোগ পাননি এবং গত এক মাস ধরে কাজ খুঁজেছেন, কিন্তু মজুরির বিনিময়ে কোন কাজ পাননি। তারা বেকার হিসেবে গণ্য হবেন। বিবিএস এই নিয়ম অনুসারেই বেকারের হিসাব দিয়ে থাকে।
তবে বিবিএস এবার দুই ভাবে শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এবিষয়ে বিবিএস জানিয়েছে, শ্রমশক্তির তৃতীয় প্রান্তিকের ফলাফলটি ১৩তম এবং ১৯তম আইসিএলএস (পরিসংখ্যানবিদদের আন্তর্জাতিক সম্মেলন) অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে।
আইএলও কর্তৃক প্রণীত ১৩তম এবং ১৯তম আইসিএলএস এ কর্মে নিয়োজিত প্রাক্কলনে পার্থক্য রয়েছে।
সাধারণত যারা শুধুমাত্র নিজেদের ভোগের জন্য কাজ করেন তাদেরকে আইএলওর ১৩তম গাইডলাইন হিসেবে কর্মে নিয়োজিত হিসেব করা হয়, আর যারা মজুরি বা মুনাফার জন্য কাজ করেন তাদেরকে আইএলও’ র ১৯তম গাইডলাইন হিসেবে কর্মে নিয়োজিত হিসেব করা হয়।
বিবিএসের ১৯তম আইসিএলএস হিসাবে, ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে বেকার মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৬০ হাজারে। আর আগের গাইডলাইন অনুযায়ি, প্রথম প্রান্তিকে বেকার ছিল ২৫ লাখ ৯০ হাজার। তিন মাস পর দ্বিতীয় প্রান্তিকে বেকার বেড়ে হয় ২৬ লাখ ৪০ হাজার। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ২০ হাজার বেকার। আর ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে দেশে বেকার মানুষ ছিল ২৪ লাখ ৯০ হাজার। সেই হিসেবে বছরের ব্যবধানে বেকার বেড়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার।
তৃতীয় প্রান্তিকের হিসেবে অনুযায়ি, দেশে নারী বেকারের চেয়ে পুরুষ বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। বিবিএস হিসাব অনুসারে, গত সেপ্টেম্বর মাস শেষে দেশে পুরুষ বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৯০ হাজার, আর নারী বেকার ৮ লাখ ৭০ হাজার। ২০২৩ সালের একই সময়ে পুরুষ বেকার ১৬ লাখ ৪০ হাজার, আর নারী বেকার ছিল ৮ লাখ ৫০ হাজা।
সেই হিসেবে পুরুষ বেকার বেড়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার, নারী বেড়েছে ২০ হাজার।
বিবিএস বলছে, শ্রমশক্তিতে এখন ৫ কোটি ৯১ লাখ ৮০ হাজার নারী-পুরুষ আছেন। অথচ ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে ছিল ৬ কোটি ১১ লাখ ৫০ হাজার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে শ্রমশক্তি অংশগ্রহনকারী মানুষের সংখ্যা কমেছে ১৯ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫ কোটি ৬৫ লাখ ২০ হাজার লোক কর্মে নিয়োজিত। বাকিরা বেকার।
এ ছাড়া শ্রমশক্তির বাইরে বিশাল জনগোষ্ঠী আছে। তারা কর্মে নিয়োজিত নয়, আবার বেকার হিসেবেও বিবেচিত নয়। এমন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৬ কোটি ২৩ লাখ ৩০ হাজার। তারা মূলত সাধারণ ছাত্র, অসুস্থ ব্যক্তি, বয়স্ক নারী-পুরুষ, কাজ করতে অক্ষম ব্যক্তি, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং কর্মে নিয়োজিত নন বা নিয়োজিত হতে অনিচ্ছুক গৃহিণী।
শ্রম শক্তি জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে যুব শ্রমশক্তি ২ কোটি ৪০ লাখ ২০ হাজার। এরমধ্যে পরুষ ১ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার, আর নারী ১ কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার। বছরের ব্যবধানে যুব শ্রমশক্তি জনগোষ্ঠীর সংখ্যাও কমেছে।
জরিপ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে যুব শ্রমশক্তি ছিল ২ কোটি ৬১ লাখ ৯০ হাজার, যা ২০২৪ সালের একই সময়ে কমে হয়েছে ২ কোটি ৪০ লাখ ২০ হাজার।