Logo
Logo
×

অর্থনীতি

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা

খণ্ডকালীন চাকরিতে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন শিক্ষার্থীদের

Icon

রাসেল মাহমুদ, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১৮ পিএম

খণ্ডকালীন চাকরিতে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন শিক্ষার্থীদের

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার এবারের আসরে ৩৬১টি স্টল ও প্যাভিলিয়নের বেশির ভাগ বিক্রয়কর্মীই শিক্ষার্থী। প্রতিবছরই মাসব্যাপী এ মেলায় খণ্ডকালীন এই কাজ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করছে। 

তবে এক মাস ধরে চলা এই মেলায় চাকরি করার ফলে কেউ কেউ আবার উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। এবার প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থী খণ্ডকালীন কাজ করছেন মেলায়। এদিকে দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটিতে ভিড় থাকার পর রোববার মেলা প্রাঙ্গণ ছিল অনেকটাই সুনসান।

সরেজমিন দেখা গেছে, চলতি বছর পহেলা জানুয়ারি মেলার উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। উদ্বোধন হলেও মেলার কিছু স্টলের নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। তবে বেশির ভাগ স্টল নির্মাণের কাজ এবার আগেভাগেই সম্পন্ন করেন ব্যবসায়ীরা। ছুটির দিনের মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড় থাকলেও রোববার ভিড় ছিল না সে রকম। 

এবার মেলায় প্যাভিলিয়নসহ মোট ৩৬১টি স্টল বরাদ্দ দিয়েছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান নিজেদের প্রচার বাড়াতে বাণিজ্যমেলায় অংশগ্রহণ করেন। এ কারণে তারা মেলায় নিজেদের স্টলে এক মাসের জন্য খণ্ডকালীন নিয়োগ দেন। 

আর এদিকে জানুয়ারি মাসে শিক্ষার্থীদেরও তেমন লেখপড়ার চাপ থাকে না। এতে করে শিক্ষার্থীরাও এক মাসের জন্য কাজ করতে আগ্রহী হন। এতে কিছু বাড়তি আয়ও হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ড ও বিভিন্ন স্টলে কাজের মধ্য দিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারছেন। আর এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন বোনে অনেকে। এবারের বাণিজ্যমেলার আসরে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী কাজ করছেন বলে ব্যবসায়ীরা জানান। 

এদিকে পূর্বাচলে বাণিজ্যমেলার আসর হওয়ার পর থেকেই মেলাকে ঘিরে এক মাসের জন্য রূপগঞ্জ ও তার আশপাশ এলাকা কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে। মেলার আশপাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন দোকানপাট। 

মি. নুডলসের বিক্রয় প্রতিনিধি সুমাইয়া বলেন, আমি মিরপুর-১ এ পরিবারের সঙ্গে থাকি। স্থানীয় একটি কলেজে লেখাপড়া করছি। বাণিজ্যমেলা হলেই মনের মাঝে অন্যরকম এক আনন্দ বিরাজ করে। আমি এ নিয়ে দ্বিতীয়বার মেলায় চাকরি করছি। তবে মেলার পরিবেশ আমার অনেক ভালো লাগে। আমার আশা উদ্যোক্তা হয়ে দেশের জন্য কিছু করব।

কথা হয় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনে চাকরি করা রুমা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি প্রতিবছরই মেলায় এক মাসের জন্য চাকরি করি। হস্তশিল্পের বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতে আমার ভালো লাগে। ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা আছে। একটি বুটিকস হাউজের স্বপ্ন দেখি আমি।

কথা হয় প্রাণ কোম্পানির বিক্রয়কর্মী মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি মতিঝিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে মার্কেটিংয়ে লেখাপড়া করছি। জানুয়ারি মাসে লেখাপড়ার চাপ কিছুটা কম থাকায় বাণিজ্যমেলায় চাকরি করছি। এতে করে বাড়তি আয়ের পাশাপাশি আমি অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারছি। যেহেতু আমি মার্কেটিংয়ের শিক্ষার্থী এটি আমার জন্য একটি সুযোগ ক্রেতার সঙ্গে সরাসরি কানেক্ট করার।

বিক্রয়কর্মী পারভেজ থাকেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। তিনি বলেন, আমি স্থানীয় একটি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পরীক্ষার দেরি আছে তাই মেলায় এক মাসের জন্য বিক্রয়কর্মীর চাকরি নিয়েছি। সামনে পড়াশোনা শেষ করে ব্যবসা দেওয়ার ইচ্ছা আছে। নিজেকে ঝালিয়ে নিচ্ছি এখান থেকে। আশা করছি নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় এ অভিজ্ঞতা কাজে দেবে।

কথা হয় রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জ এলাকার মেলায় আসা দর্শনার্থী ফেরদৌস রহমান পুলকের সঙ্গে। তিনি বলেন, তীব্র শীত থাকার পরও মেলায় পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছি। অন্যান্য বছর মেলা শুরুর দিকে না জমলেও এবার শুরু থেকেই মেলা জমে উঠেছে। 

যমুনা ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড অটোমোবাইল লিমিটেডের ম্যানেজার রাজিব সাহা বলেন, বিগত বছরের মতো এবারও বাণিজ্যমেলায় আমাদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী নিয়ে এসেছি। রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশন, মোটরসাইকেলের পাশাপাশি বেশকিছু নতুন সাইজের টেলিভিশন এবার মেলায় নিয়ে এসেছি। যমুনা ইলেকট্রনিক্স সব সময় ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে তাদের চাহিদার পণ্য বাজারে নিয়ে আসছে। বিদেশি যত উন্নত প্রযুক্তি আছে সেগুলো মাথায় রেখে আমাদের কোম্পানি নিজস্ব কারখানায় আধুনিক পণ্য তৈরি করছে। এছাড়া মেলায় যমুনার সব পণ্যের ওপর বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে।

লামিসা সুজের মালিক মাসুম আহমেদ স্বপন বলেন, আমার দোকান ঢাকার এলিফ্যান্ড রোড মার্কেট এলাকায়। এবারই প্রথম মেলায় অংশগ্রহণ করেছি। এখানে শুনলাম নাকি ঢাকার মতো বেচাবিক্রি হয় না। তবে এবারের মেলায় ভিন্নরূপ দেখছি। এবার শুরু থেকেই জমে উঠেছে। রোববার স্কুল-কলেজ খোলা হওয়ায় মেলায় প্রত্যাশার চেয়ে দর্শনার্থী কম ছিল। 

এঞ্জেল কসমেটিকসের মালিক আকবর বলেন, আমার ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় দোকান রয়েছে। আমি প্রতিবছরই মেলায় কসমেটিকসের দোকান নিয়ে অংশগ্রহণ করি। মেলায় এবার প্রথমদিকেই অনেক বেশি দর্শনার্থী দেখতে পাচ্ছি। আশা করি আমাদের বিক্রিও এবার ভালো হবে।

ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, এবারের মেলায় ভারত, পাকিস্তান, হংকং, তুর্কিসহ ৭টি দেশ থেকে ১১টি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহণ করেছে। এ আসরে বাণিজ্যমেলার প্রধান ফটক করা হয়েছে জুলাই ও আগস্টের আন্দোলনের পটভূমিতে। বাণিজ্যমেলার ২৯তম আসর সফল করতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) কঠোরভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে মেলার প্রতিটি অংশে। দর্শনার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে এবার আসরে ই-টিকেটিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া স্টল ও প্যাভিলিয়নও পুরোপুরি অনলাইনে বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

মেলায় প্রবেশের টিকিট ইজাদারদের ডিজি ইনফোটেক লিমিটেডের (হেড অব অপারেশন) আমিনুল ইসলাম (হৃদয়) বলেন, শীত ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে দর্শনার্থীরা মেলায় আসছে। বুঝতে পারছি, আগামী দিনগুলোতে বহু লোকের সমাগম হবে।

ইপিবি সচিব বিবেক সরকার বলেন, ব্যবস্থাপনা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থাকায় এবার মেলায় পরিবেশ অনুকূলে রয়েছে। তীব্র শীত উপেক্ষা করে দর্শনার্থীরা মেলায় আসছেন। মেলায় ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে প্রায় প্রতিটি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম