Logo
Logo
×

অর্থনীতি

শীত আর ঘন কুয়াশায় বাণিজ্য মেলায় দর্শনার্থীরা

Icon

রাসেল মাহমুদ, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৪ পিএম

শীত আর ঘন কুয়াশায় বাণিজ্য মেলায় দর্শনার্থীরা

তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায়ও ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীরা এসেছেন। তবে তারা কেনাকাটার চেয়ে বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়ন ঘুরে ঘুরে পছন্দের পণ্য দেখেই সময় পার করছেন। 

গত বছর মেলার উদ্বোধনের দিন ৩ হাজার ক্রেতা-দর্শনার্থী টিকিট কেটে মেলায় প্রবেশ করেন। এবার মেলার উদ্বোধনের দিন গত ১ জানুয়ারি ১১ হাজার ৭৪৩ জন দর্শনার্থী টিকিট কেটে মেলায় প্রবেশ করেন। তাতে গত বছরের তুলনায় এবার ব্যবসা সফল মেলা হবে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন। এখন ঘুরে ঘুরে পণ্য দেখলেও খুব শিগগিরই পুরোদমে বেচাকেনাও শুরু হবে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা অনুকূলে থাকায় ব্যবসায়ীরা এবার লাভের আশা করছেন।  

মেলায় প্রবেশের টিকিট ইজারাদারের ডিজি ইনফোটেক লিমিটেডের হেড অব অপারেশন এসএম আমিনুল ইসলাম বলেন, তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত টিকিট কেটে ৪ হাজার ৩৭২ জন দর্শনাথী মেলায় প্রবেশ করেছেন। এবার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়বে।

 সরেজমিন দেখা গেছে, মেলার স্টল এখনো নির্মাণাধীন। শেষ মুহূর্তে কারিগররা স্টল নির্মাণে ব্যস্ত। হাতুরির টুং-টাং আওয়াজ বিদ্যমান। কারিগরদের কথা বলার সুযোগ নেই। কেউ কাঠ ও বোর্ড সাজাচ্ছেন। কেউ কাঠে তারকাটা মারছেন। কেউবা স্টল নির্মাণে বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রীর মাপ নিচ্ছেন। কথা বলার কারিগরদের ফুরসত নেই। মেলা প্রাঙ্গণ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। এমন সুন্দর পরিবেশে দর্শনার্থীদের কেউ ছবি তুলছেন। কেউ ভিডিও লাইভে এসে স্বজনদের দেখাচ্ছেন। 

মনোমুগ্ধকর এই পরিবেশের স্থায়িত্ব চান ক্রেতা, বিক্রেতা ও দর্শনার্থীরা। মেলার সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত ঢাকা বাইপাস সড়ক ধুলি আর বালুতে পরিপূর্ণ। গাড়ি চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই অধিকাংশ স্টল তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। শুরু থেকেই দোকানপাট সাজিয়ে বসছেন ব্যবসায়ীরা। 

যমুনা ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড অটোমোবাইল লিমিটেডের ম্যানেজার রাজিব সাহা বলেন, বিগত বছরের মত এবারও বাণিজ্য মেলায় আমাদের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী নিয়ে এসেছি। রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশন, মোটরসাইকেলের পাশাপাশি বেশ কিছু নতুন সাইজের টেলিভিশন এবার মেলায় নিয়ে এসেছি। যমুনা ইলেকট্রনিক্স সব সময় ক্রেতারদের কথা মাথায় রেখে তাদের চাহিদার পণ্য বাজারে নিয়ে আসছে। বিদেশি যত উন্নতি প্রযুক্তি আছে সেগুলো মাথায় রেখে আমাদের কোম্পানি নিজস্ব কারখানায় আধুনিক পণ্য তৈরি করছে। এছাড়া মেলায় যমুনার সব পণ্যের উপর বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে।

মেলাকে প্রাণবন্ত ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সর্ব্বোচ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মেলার আয়োজক রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মেলায় যে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭ শতাধিক পুলিশ। থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের একাধিক দল। আইনশৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি গেইট ইজারাদারের পক্ষ থেকে থাকছে স্বেচ্ছাবেক দল। 

রাজধানীর উপকন্ঠ নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরের ৪নম্বর সেক্টরের স্থায়ী ভেন্যু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিউশন সেন্টারে চতুর্থবারের বসছে বাণিজ্য মেলা। 

এবার মেলার প্রধান প্রবেশদ্বার ৩৬ জুলাইয়ের স্মৃতির আদলে তৈরি করা হচ্ছে। মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে থাকছে দেশি-বিদেশী ৩৬১টি স্টল। মেলার প্রধান প্রবেশদ্বারের পূর্ব পাশে থাকছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদের প্রতি সম্মান রেখে তৈরি করা হচ্ছে শহীদ আবু সাঈদ কর্নার ও মূল ভবনের উত্তর পাশে থাকছে ৩৬ চত্বর। 

ভেতরে থাকছে ইয়ুথ প্যাভিলিয়ান (তারুণের বাংলাদেশ) পূর্ব পাশে জুলাই চত্বর। দর্শনার্থীদের বসার জন্য থাকবে ৩টি সিটিং জোন। ব্যাংকিং লেনদেনের জন্য থাকছে ডাচ বাংলা ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের একাধিক বুথ।

মেলায় আসা শিশুদের জন্য থাকছে শিশুপার্ক। মেলা পর্যবেক্ষণের জন্য ২৩৪টি সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি থাকছে ৫টি ওয়াচ টাওয়ার। সতর্ক অবস্থায় থাকবে একাধিক পুলিশের টিম। রাজধানীসহ নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলার লোকজন যেন নির্বিঘ্নে মেলায় আসতে পারেন সেজন্য অন্যান্য বছরের মত থাকছে বিআরটিসি বাস সার্ভিস। 

মিস্টার নুডুলসের সাইফুল ইসলাম বলেন, গত বছর তেমন সুবিধা করতে পারেনি। এ বছর যেহেতু দেশ নতুনভাবে স্বাধীন হয়েছে, তাই এবার ভালো কিছু আশা করছি।

নাভানা ফার্নিচারের বিক্রয় প্রতিনিধি আরিফুল আলম বলেন, স্টল নির্মাণে রাত দিন ২৪ ঘণ্টা আমরা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছি। বেশিরভাগ কাজ হয়ে গেছে। আশা করছি, উদ্বোধনের আগেই কাজ শেষ করে মালিকের কাছে স্টল বুঝিয়ে দিতে পারবো।

ভারত থেকে আসা শীতের কাপড় বিক্রির স্টলের কর্মচারী দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, স্টল ও প্যাভিলিয়নের কর্মচারীদের থাকা খাওয়ার সমস্যা। কম দামে খাবারের ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হতো। বাড়তি দাম এড়াতে কেউ কেউ বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে খাচ্ছেন। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব(রপ্তানি) আবদুর রহিম খান বলেন, মেলা এলাকায় ধুলোবালুর সমস্যা সমাধানে প্রতিনিয়ত পানি দেওয়া হচ্ছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়মিত কাজ করছেন। মেলার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পরিবেশ অনুকূলে থাকায় কেনাবেচার ধুম পড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। 

এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ১ জানুয়ারি সকাল ১০টায় মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলার ২৯তম আসর অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম