Logo
Logo
×

অর্থনীতি

এখনও বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৪ পিএম

এখনও বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট

ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সব দাবি মানার পরও বাজারে এখনও সয়াবিন তেলের সংকট রয়েছে। তদারকি সংস্থার নজরদারির অভাবে মিল থেকে কৃত্রিম সংকট তৈরি করায় ডিলারের কাছে পর্যাপ্ত তেল নেই। ফলে খুচরা পর্যায়ে সরবরাহে টান পড়েছে। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম আরেক দফা বেড়েছে। 

এছাড়া খুচরা বাজারে এখনও মানভেদে আলু বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৫-৮০ টাকা। বাড়তি চালের দামও। সরবরাহ বাড়লেও বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতার ৯০-১২৫ টাকা গুনতে হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। 

বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াবাজার, জিনজিরা বাজার, রামপুরা বাজার, কাওরান বাজার ও মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নভেম্বরের শুরু থেকে বাজারে ভোজ্যতেলের অস্থিরতা শুরু হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি বলে হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি বেশি দামে তেল বিক্রি করতে মিল থেকে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। ডিলারের কাছে সরবরাহ কমিয়ে বাজার থেকে উধাও করা হয় বোতলজাত সয়াবিন তেল। 

পাশাপাশি খোলা সয়াবিন বিক্রি করে আকাশ ছোঁয়া দামে। মূল্য স্বাভাবিক করতে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী আমদানিতে দুই দফায় শুল্ককর কমানো হয়। প্রথম দফায় ১৭ অক্টোবর ও দ্বিতীয় দফায় ১৯ নভেম্বর শুল্ককর কমিয়ে তা নামানো হয়েছে শুধু ৫ শতাংশে। এতে বাজারে সামান্য কমে ভোজ্যতেলের দাম। তবে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে এসে বাজার থেকে উধাও হতে শুরু করে ১ ও ২ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল। 

তবুও দাম সহনীয় না হওয়ায় ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী ৯ ডিসেম্বর লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হয়। তবুও সরবরাহ সংকট কাটেনি। এরপর ১৬ ডিসেম্বর ভোজ্যতেলের দাম সহনীয় রাখতে নতুন বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত আমদানিতে শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি ও অগ্রিম আয়কর শতভাগ অব্যাহতি দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। তারপরও বাজারশূন্য বোতলজাত সয়াবিন তেল।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, বাজারে হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি ভোজ্যতেল নিয়ে কারসাজি করছে। সরকার চাইলে সব নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু তা না করে ব্যবসায়ীদের কথা মানলেও সেই সিন্ডিকেট চক্র এখনও বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়ায়নি। সরকারিভাবে দাম আরও বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে। যে কারণে তারা মিল থেকে ডিলারদের কাছে তেল সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। সরকার তাদের কথা মানলেও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এখনো ক্রেতাকে নাজেহাল করে রেখেছে। তারপরও বাজারে তদারকি সংস্থার এই বিষয়ে জোরালো ভ‚মিকা দেখছি না। যা সন্দেহজনক।

দুপুর ১২টা, জিনজিরা কাঁচাবাজারের ৮টি মুদি দোকান ঘুরেও এক ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল দেখা যায়নি। পাশাপাশি দুপুর ১টায় নয়াবাজারের ৬টি দোকান ঘুরে এই মাপের তেল নেই। পাঁচ লিটারের দু-একটি বোতল দেখা গেছে। এছাড়া দুপুর ২টায় কাওরান বাজারের দোকানগুলোতে চাহিদার তুলনায় তেল পাওয়া যায়নি। দু-একটি দোকানে বোতল সয়াবিন মিললেও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। 

খুচরা বিক্রেতারা জানান, সরকার লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন মূল্য নির্ধারণ করেছে। পাঁচ লিটারের তেল ৮৩৭ টাকা কিনে ৮৫২ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তিন লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৫১৬ টাকায় কিনতে হচ্ছে। বিক্রি করতে হচ্ছে ৫২৫ টাকায়। খোলা সয়াবিন লিটারপ্রতি ১৮৮ টাকায় ডিলারদের কাছে কিনতে হয়। বিক্রি করতে হচ্ছে ১৮৫ টাকায়। পাম অয়েল ১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিনতে হচ্ছে ১৭১ টাকায়। 

বিক্রেতারা আরও জানান, দুই লিটারের তেল মিললেও বিক্রি হচ্ছে ৩৫৫ টাকা। যা ৭ দিন আগেও ৩৪৫-৩৫০ টাকা ছিল। 

জিনজিরা বাজারের মুদি বিক্রেতা সোহেল বলেন, ডিলাররা এখনও তেলের সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক করেনি। সরকারিভাবে মূল্য আরও বাড়ানোর জন্য এখনও বাজারে সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। এক লিটারের তেল এখনও ডিলাররা দেননি। দিনে দুই কার্টন তেলের চাহিদা থাকলেও ডিলাররা সপ্তাহে দুই কার্টন তেল দিচ্ছে। যে কারণে বাজারে এখনও তেল সংকট।

অন্যদিকে বাজারে সরবরাহ বাড়লেও প্রতি কেজি আলু মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৮০ টাকা। তবে দাম নিয়ন্ত্রণে ৫ সেপ্টেম্বর আলু আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করার পাশাপাশি ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফলে আমদানিও বাড়ে। কিন্তু আমদানি করা ২১ টাকার আলুও খুচরা বাজারে ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা। মাঝারি মানের চালের মধ্যে পাইজাম ও বিআর ২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৬২-৬৫ টাকা। আর মিনিকেট প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। কাওরান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ভরা মৌসুমেও চালের দাম বাড়তি। মিলাররা দাম কমাচ্ছে না। বরং নতুন করে মূল্য বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে। মনিটরিংয়ের অভাবে মিলাররা ভোক্তার পকেট কাটছে।

রাজধানীর খুচরা বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। সঙ্গে আমদানি বাড়ায় দামও কমতে শুরু করেছে। তবে যে হারে বেড়েছে সেই হারে কমছে না। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-১২৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১০০-১৩০ টাকা। পাশাপাশি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৯০ টাকা। যা ৭ দিন আগেও ৮০-১০০ টাকা ছিল। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম