হজ ফাইন্যান্সে অস্থিরতা: ডিএমডিসহ শীর্ষ ৮ কর্মকর্তা বরখাস্ত
হামিদ বিশ্বাস
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৪ পিএম
নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান হজ ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের (এইচএফসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) তার দিলকুশার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে জোরপূর্বক পদত্যাগের জন্য হুমকি দেন প্রতিষ্ঠানটির ডিএমডি মসি উদ-দৌলাসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। এ সময় এমডি মো. মোফাজ্জল হোসাইনকে পদত্যাগ না করলে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষার্থে মোফাজ্জল হোসাইন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে লিখিত আবেদনপত্রের মাধ্যমে প্রতিকার চেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান।
এদিকে এইচএফসিএলের ডিএমডি মসি উদ-দৌলাসহ প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ ৮ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। হজ ফাইন্যান্স কর্তৃপক্ষের ১১০তম জরুরি পর্ষদ সভায় তাদের বরখাস্তের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরে সংশ্লিষ্ট সবাইকে পৃথক চিঠিতে বরখাস্তের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো প্রতিষ্ঠানটির এমডির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, হজ ফাইন্যান্সের প্রধান কার্যালয়ে বুধবার দুপুরে ডিএমডি মসি উদ-দৌলা, ইভিপি ও প্রিন্সিপ্যাল ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মো. ফারুক হোসেন, ইভিপি ও রিকভারি হেড মনির হোসেন, ইভিপি ও সিএফও শফিউদ্দিন ফরহাদ, এফএভিপি বৃতি সুন্দর দেবনাথ, এফএভিপি ফারহানা নাসরিন, এফএভিপি নাদিম জাহাঙ্গীর, এসপিও হোসেন আল মাসুদসহ আরও কয়েকজন এমডির কক্ষে উচ্ছৃঙ্খলভাবে প্রবেশ করেন। এর মধ্যে ইভিপি মো. ফারুক হোসেন ও ইভিপি মনির হোসেন এমডির ফোন কেড়ে নেন এবং ডিএমডি মসি উদ-দৌলাসহ অন্যরা একটি লিখিত পদত্যাগপত্র সামনে দিয়ে পদত্যাগের জন্য স্বাক্ষর করতে চাপ দেন। পদত্যাগে অস্বীকৃতি জানালে এমডি মোফাজ্জল হোসাইনকে অবরুদ্ধ করা হয়। একপর্যায়ে এমডিকে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়।
পরে খবর পেয়ে মতিঝিল থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্যের উপস্থিতি টের পেয়ে অভিযুক্তরা এমডির কক্ষ ত্যাগ করলে মোফাজ্জল হোসাইন মুক্ত হন। পরে তিনি বুধবার সন্ধ্যায় মতিঝিল থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জিডি করেন। বৃহস্পতিবার তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে লিখিতভাবে নিরাপত্তা চেয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রধান অভিযুক্ত ডিএমডি মসি উদ-দৌলার সঙ্গে দেখা করলে তিনি বলেন, অফিসে কর্মকর্তাদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে এমডি স্যারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। এ সময় কিছু বিষয় নিয়ে তর্ক হয়। এটা অবরুদ্ধের বিষয় না। এমডি স্যার তো অফিস করছেন। তবে পুলিশ কেন এসেছিল-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কারও মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ এসেছিলেন। তারা পরে কথা বলে চলে গেছেন। আর থানায় কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ দাখিলের বিষয়ে জানা নেই।
গ্রাহক সেজে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সিকিউরিটি গার্ড মো. খালেদ হোসেন জানান, বড় স্যারদের নির্দেশে প্রধান কার্যালয়ের শাটার নামিয়ে রাখা হয়েছে। উপরে এমডি স্যারের কী যেন হয়েছে। তিনি বিকালে নির্ধারিত সময়ের আগেই অফিস ত্যাগ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডিএমডি মসি উদ-দৌলাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে আর্থিক অস্বচ্ছতার অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরে বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভিপি গোলাম সওগাতুল করিমকে প্রদান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের দিনক্ষণ বিষয়ে জ্ঞাত হয়ে বিবাদীরা নিজেদের রক্ষা করতে এমডিকে জোরপূবর্ক পদত্যাগ করানোর চেষ্টা করেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ডিএমডি মসি উদ-দৌলাসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অস্বচ্ছতার অভিযোগ রয়েছে। সেজন্য তদন্ত করতে বলা হয়েছে। এখন তারা এমডিকে অপসারণের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ প্রসঙ্গে এমডি মো. মোফাজ্জল হোসাইন বলেন, আমাকে হুমকি দেওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকে বিষয়টি অবহিত করেছি। মতিঝিল থানায় জিডি করেছি। এখনো জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছি।