Logo
Logo
×

অর্থনীতি

হাসিনা সরকারের শেষ সময়ে মুখ থুবড়ে পড়ে দেশের অর্থনীতি

Icon

মিজান চৌধুরী 

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ০২:০৬ পিএম

হাসিনা সরকারের শেষ সময়ে মুখ থুবড়ে পড়ে দেশের অর্থনীতি

সংকটের মুখে বড় অঙ্কের সুদ ব্যয় আরেক দফা চাপে ফেলছে অর্থনীতিকে। প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় না হলেও গেল অর্থবছরে (২০২৩-২৪) নয় মাসে সুদ ব্যয় গুনতে হয়েছে পৌনে এক লাখ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা বেশি। অর্থবছরের হিসাব শেষে এ ব্যয় আরও বাড়বে। মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের বড় অঙ্কের ঋণ গ্রহণ এবং ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সুদ পরিশোধে ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। একই কারণে সুদ পরিশোধ খাতে বেশি ব্যয় করতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও।

এ ধরনের ব্যয় শেষ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধি ও রিজার্ভে নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা। কারণ প্রত্যাশা অনুযায়ী আয় না বাড়লে টাকা ছাপিয়ে বা ঋণ করেই সুদ পরিশোধ করতে হবে।

সূত্রমতে, একই সময়ে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬২ শতাংশে। প্রসঙ্গত, দেশি-বিদেশি উৎসে দ্রুত ঋণ বৃদ্ধির কারণে চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছর সুদ পরিশোধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে গুনতে হবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু বৈদেশিক ঋণের দায় মেটাতে হবে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার, দেশি মুদ্রায় ৫৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

অবশ্য গত অর্থবছরের (২০২৩-২৪) মূল বাজেটে সুদ পরিশোধে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও সংশোধিত বাজেটে বাড়িয়ে ১ লাখ ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।

সূত্রমতে, ঋণ পরিশোধ ব্যয়, বড় অঙ্কের ঋণ ও দেশি-বিদেশি ঋণের উচ্চমাত্রার সুদ পরিস্থিতি নিয়ে ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে আছে বর্তমান সরকার। সুদ পরিশোধ ব্যয় কমাতে ইতোমধ্যে চীনের রাষ্ট্রদূতকে আহ্বান জানিয়েছে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা।

প্রসঙ্গত, প্রতি তিন মাস অন্তর অর্থ বিভাগ দেশের মোট ঋণ পরিস্থিতির ওপর বুলেটিন প্রকাশ করে। সর্বশেষ বুলেটিনের হিসাবে মোট ঋণের অঙ্ক ১৬ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ৭ লাখ ১৪ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। সাধারণত বাজেট ঘাটতি পূরণে দেশি এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ করা হয়ে থাকে। তবে এখানে ঋণের হিসাবটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-থেকে মার্চ পর্যন্ত। এর মধ্যে বিগত সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিল ৫ লাখ ৬১ হাজার ১৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেওয়া হয়েছে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদের বন্ড ইস্যু করে। সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া হয় ৩ লাখ ৫২ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। মোট ঋণ এখন জিডিপির ৩৩ দশমিক ৭৮ শতাংশের সমান।

আওয়ামী লীগ সরকারের বড় অঙ্কের ঋণ প্রসঙ্গে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ওটা বড় প্রেসার, প্রচণ্ড প্রেসার। কারণ এগুলো দিয়েছে ওরা (দাতা সংস্থা) চুক্তি করে। ডোনারদের (দাতাদের) বলতে হবে এটি আমাদের জন্য বিরাট প্রেসার। আমরা এগুলো রিভিউ করছি, দেখছি। এতবড় ঋণের বোঝা নিয়ে শুরু করেছি, আমাদের জন্য খুব কঠিন। ঋণ নিয়ে ফেরতের বিষয় আছে। এগুলো আমরা সমাধানের চেষ্টা করব।

এদিকে ঋণ ও সুদ পরিশোধ ব্যয় মেটাতে দরকার সরকারের পর্যাপ্ত আয়। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কাক্সিক্ষত মাত্রায় রাজস্ব আহরণ নিয়ে শঙ্কায় আছেন সংশ্লিষ্টরা। আয় না বাড়লে ব্যয় করতে বড় ধরনের চাপের মুখে পড়তে হবে। যদিও ইতোমধ্যে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) মনিটরিংয়ের নির্দেশ দিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা। অন্যদিকে বড় ধরনের ঋণ গ্রহণের ফলে সুদসহ ঋণ পরিশোধ বাবদ মোটা অঙ্কের অর্থ গুনতে হবে। যা অর্থনীতিকে বড় ধরনের চাপে ফেলবে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বুধবার যুগান্তরকে জানান, বৈদেশিক ঋণ ও সুদ পরিশোধে ব্যয় অস্বাভাবিক বেশি হলে রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। এখন ঝুঁকিপূর্ণ স্তরে আছে রিজার্ভ। সেখান থেকে আরও কমলে রিজার্ভের আন্তর্জাতিক রেটিং কমে যাবে। আর সেটি কমলে বিদেশ থেকে সহজে ঋণ মিলবে না, বেশি সুদে ঋণ নিতে হবে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে এফডিআই (বিদেশি বিনিয়োগ) হ্রাস পাবে। তিনি আরও বলেন, দেশি ঋণ ও সুদ পরিশোধে ব্যয় মোকাবিলা করতে সরকারের আয় বাড়াতে হবে। কিন্তু সেটি সম্ভব না হলে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে বা বাধ্য হয়ে টাকা ছাপতে হবে। আর টাকা ছাপানোর পথে গেলে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকবে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে দেশি উদ্যোক্তারা ঋণ পাবে না। তখন বিনিয়োগ কমবে।

অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এই ঋণ নিয়ে মূল টাকা পরিশোধে ব্যয় হয় ১৬ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা। ফলে এ খাতে নিট ঋণের অঙ্ক দাঁড়ায় ৪১ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা। এটি অর্থবছরের শেষের হিসাবে আরও বাড়বে। এ ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধে গেছে ১১ হাজার ৬০২ কোটি টাকা, এটি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬২ শতাংশ বেশি।

ওই প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, একই সময়ে দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়া হয় ৫৩ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। সেখান থেকে বকেয়া এবং সঞ্চয়পত্র ঋণ পরিশোধ দেওয়ার পর নিট ঋণ হিসাবে থাকছে ৩৮ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। একই সময়ে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হয় ৫৫ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা।

সূত্রমতে, বর্তমান সরকার সুদ ব্যয় কমানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। এরই মধ্যে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের চীনা ঋণের সুদ কমানোর জন্য ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনকে প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা। তবে রাষ্ট্রদূত এ প্রস্তাব চীনের বেইজিংয়ে তুলবে বলে আশ্বস্ত করেছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম