লুব্রিকেন্টের বাড়তি শুল্ক ডলার পাচারের সুযোগ সৃষ্টি করেছে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৪, ১২:৫৭ এএম
ছবি সংগৃহীত
আমদানিকৃত লুব্রিকেন্ট অয়েলের আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দাম আমদানি শুল্কায়নমূল্য নির্ধারণ করায় দেশ থেকে ডলার পাচারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এইচএস কোড প্রণয়ন করায় হয়রানির শিকার হবেন ব্যবসায়ীরা।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে লুব্রিকেন্টস ইম্পোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (লিয়াব) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে প্রতিকার দাবি করেন সংগঠনের নেতারা।
সংগঠনের সভাপতি জমসের আলী লিখিত বক্তৃতায় বলেন, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানি করা সব ধরনের লুব্রিকেন্টস অয়েলের এনবিআর আমদানি শুল্কায়ন মূল্য (অ্যাসেসমেন্ট) অস্বাভাবিক হারে নির্ধারণ করায় বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ ডলার পাচারের পথ উন্মুক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটে সব ধরনের ফিনিশড লুব্রিকেন্টস একটিমাত্র এইচএস কোড ব্যবহার করা হতো। যার শুল্কায়ন মূল্য প্রতি মেট্রিক টন ২০০০ ডলার নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আগের এইচএস কোড ২৭.১০.১৯.৩১ সঙ্গে আরও নতুন দুটি এইচএস কোড ৩৪.০৩.৯৯.২০ এবং ৩৪.০৩.৯৯.৩০ সংযোজন করা হয়েছে।
এই সংযোজিত ৩৪ সিরিয়াল এইচএস কোড আন্তর্জাতিক বাজারে প্রচলিত ফিনিশড লুব্রিকেন্টস এইচএস কোডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই বাজেটে এইচএস কোড ২৭.১০.১৯.৩১ মিনারেল প্রতি মেট্রিক টন ২৫০০ ডলার। এইচএস কোড ৩৪.০৩.৯৯.২০ সেমি সিনথেটিক প্রতি মেট্রিক টন ৩২০০ ডলার, এইচএস কোড ৩৪.০৩.৯৯.৩০ সিনথেটিক প্রতি টন ৫০০০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ওই মিনারেল, সেমি সিনথেটিক, সিনথেটিক লুব্রিকেন্টসের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রকৃত মূল্য যথাক্রমে ১৬০০, ১৭০০, ২০০০ ডলার। সেই হিসাবে মিনারেল লুব্রিকেন্টস শুল্কায়ন মূল্য ৫৭ শতাংশ, সেমি সিনথেটিক ৮৯ শতাংশ, সিনথেটিক ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্কায়ন মূল্য (অ্যাসেসমেন্ট) বাড়ানো হয়েছে।
বাজারমূল্য থেকে শুল্কায়ন মূল্য অতিরিক্ত ধার্য করার ফলে প্রতি মেট্রিক টন মিনারেলে ১২০০ ডলার, সেমি সিনথেটিক ১৫০০ ডলার ও সিনথেটিক ৩০০০ ডলার পাচার হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে সরকারি সুবিধায় ওভার ইনভয়েসের সুযোগ থাকায় নিশ্চিতভাবে ডলার পাচার বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, ফিনিশড লুব্রিকেন্টসের ওপর অতিরিক্ত শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণের ফলে পরিবহণ, শিল্প-কলকারখানা, বিদ্যুৎ পাওয়ার প্ল্যান্ট, কৃষি উৎপাদন, গার্মেন্টশিল্পে খরচ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। সরকারের বর্তমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ চেষ্টা নিশ্চিতভাবে ব্যর্থ হবে। লুব্রিকেন্টস মূল্যবৃদ্ধি হলে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে সব নিত্যপণ্য সামগ্রীতে। তাছাড়া নিম্নমানের লুব্রিকেন্টে বাজার সয়লাব হয়ে যাবে এবং মেশনারিজের জীবনকাল কমে আসবে। তিনি এই সেক্টরকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান মো. মোবারক হোসেন, পরিচালক আবুল কাশেম জামাল, মো. দেলোয়ার হোসেন, আসলাম পারভেজ, সানোয়ার হোসেন, জাকির হোসেন ও আবু সাঈদ প্রমুখ।