Logo
Logo
×

অর্থনীতি

বছরে ৯৩ হাজার কোটি টাকা পাচারেই চরম ডলার সংকট

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৪, ১১:৪৮ পিএম

বছরে ৯৩ হাজার কোটি টাকা পাচারেই চরম ডলার সংকট

প্রতি বছর ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৯৩ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। এ কারণে দেশে ডলার সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। সেই সঙ্গে মোট ঋণের প্রায় ২২ শতাংশ খেলাপি ঋণ। ফলে ব্যাংকগুলোর পরিচালন খরচ বেড়ে যায়, ব্যাংকিং খাত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। 

এসব সমস্যা সমাধানে ব্যাংক কমিশন গঠন করতে পারলে ভালো। সেটি করা না গেলে জ্ঞানীদের দিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা জরুরি। এসব সমস্যা সমাধানে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে অজনপ্রিয় অর্থমন্ত্রী হয়ে আপনি দেশকে বাঁচান। তাহলে ইতিহাসের পাতায় আপনি (অর্থমন্ত্রী) অমর হয়ে থাকবেন।

বৃহস্পতিবার ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতি : প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে এর আয়োজন করে বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি। 

সংসদ সদস্য ও কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এবং জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বাংলাদেশ প্রতিনিধি জিয়াকুন সাই। মুখ্য আলোচক ছিলেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। বক্তব্য রাখেন- সমিতির মহাসচিব ড. মোহাম্মদ মিজানুল হক কাজল এবং সেমিনার আয়োজক কমিটির আহবায়ক শুভঙ্কর সাহা। 

মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে ড. শামসুল আলম বলেন, দেশীয় ঋণের ২২ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ব্যাংকের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এর রাশ টানতে হবেই। কর ন্যায়পাল নিয়োগ, এনবিআর ও আইআরডির কাজ আলাদা করা এবং এডিপি বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। মূল্যস্ফীতি কমাতে আমদানি নীতি সহজীকরণ করা জরুরি। তিনি আরও বলেন, সংসদ-সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে করমুক্ত সুবিধা প্রত্যাহারের মতো প্রস্তাব সাহসী। ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে কর ১ শতাংশ কমানো মূল্যস্ফীতি কমাতে ভ‚মিকা রাখবে। সামষ্টিক অর্থনীতির ইতিবাচক দিকও আছে, ব্যাংকে সঞ্চয় বেড়েছে, রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ, বোরো ধানের বাম্পার ফলন, শাকসবজি, প্রবাসী আয় ভালো এবং কিছু পণ্যের দাম কমছে এসব ভালো লক্ষণ। আমাদের পাইপলাইনে প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুত অর্থ আছে। সেগুলোর ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে। 

সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাজেটের পর কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি, এটা ভালো লক্ষণ। এছাড়া মে পর্যন্ত ১১ মাসে প্রবাসী আয় দুই বিলিয়ন বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল হচ্ছে। অফশোর ব্যাংকের মাধ্যমে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ সুদে বিদেশি মুদ্রার আমানত আসবে বলে আশা করা যায়। সব মিলিয়ে এখন অর্থমন্ত্রী বেশ কিছু অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আপনার জনপ্রিয় হওয়ার দরকার নেই। মুদ্রা পাচার রোধ ও খেলাপি ঋণ কমানোর ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিয়ে অজনপ্রিয় হয়েই ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবেন। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, বাজেট সবেমাত্র দিয়েছি। বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশ ভালো আছে। বিশ্বব্যাংক যা বলছে, আমাদের শুনতে হবে। কারণ তারা আমাদের টাকা দেয়। আমাদের টাকা লাগবে। যারা সমালোচনা করে বলেন বিশ্বব্যাংকের কথায় আমরা চলি, তাদের বলছি আপনি কি টাকা দেন? আপনি টাকা দেন, আপনার কথা শুনব। তিনি বলেন, যারা বলছেন সরকার পড়ে যাবে, দেশ দেউলিয়া হয়ে যাবে, কই সরকার তো পড়ে না। দেশ দেউলিয়া তো হলো না। 

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বাজেট জনবান্ধব। কোনো কিছু বিষয়ে সুপারিশ থাকলে তা এখনো পুনর্বিবেচনা করার সম্ভাবনা আছে, সেটি সম্ভবও। কারণ এখনো বাজেট পাশ হয়নি, এটা প্রস্তাবিত বাজেট। বাজেট দিলাম, এটা দেখেন। না বুঝে মন্তব্য করবেন না। এ ঈদে যেভাবে পশু কুরবানি হয়েছে এটা একটা ভালো ইন্ডিকেটর, সব পশু আমাদের দেশের। প্রায় ১ কোটি মানুষ কুরবানি করেছেন। মানুষের হাতে টাকা না থাকলে সেটি সম্ভব ছিল না। 

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি দুটির মধ্যে গভীর সম্পর্ক। প্রবৃদ্ধি বাড়লে মূল্যস্ফীতি অটোমেটিক বাড়বে। দেশে শুধু ধান নয়, সব শস্যের উৎপাদনই বেড়েছে। সেই সঙ্গে সরকার ১ কোটি মানুষকে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির মাধ্যমে নিত্যপণ্য দিচ্ছে। তবে লাইনে দাঁড়িয়ে নিতে অনেক লজ্জাবোধ করেন। এছাড়া সময়ও নষ্ট হয়। তাই আমরা চলতি মাস থেকে ট্রাক সেলের পরিবর্তে বর্তমানে সাড়ে ৭ হাজার ডিলার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার ডিলারের মাধ্যমে স্থায়ী দোকানের ব্যবস্থা করব। যাতে কার্ডধারীরা যেকোনো সময় পণ্য কিনতে পারেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছিল। এগুলো হাওয়ায় চলে যায়নি। এর মধ্যে ১৪ বিলিয়ন ডলার দিতে হয়েছে সার ও তেল আমদানির জন্য। বাজারে যাতে পণ্যের সংকট না থাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সে প্রচেষ্টাই করছে। ২৬টি দেশের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট করা হচ্ছে। যাতে সেসব দেশের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি ঠিকমতো করা যায়। 

তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণের পর আমাদের চ্যালেঞ্জ থাকলেও এতে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য এনে কীভাবে সরাসরি ভোক্তাদের হাতে পৌঁছানো যায় এ নিয়ে অর্থনীতিবিদেরা গবেষণা করে আমাদের সহায়তা করতে পারেন। এদিকে আমাদের প্রবাসী আয় সরাসরি গ্রামে চলে যাওয়ার কারণে শহরের চেয়ে এখন গ্রামীণ অর্থনীতি বেশি চাঙ্গা।

সভাপতির বক্তব্যে সাজ্জাদুল হাসান বলেন, এ আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আমাদের নির্বাচনি ইশতেহার হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। সরকার সে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সারের ক্ষেত্রে ভর্তুকি বাড়াতে হবে। এটাকে বিনিয়োগ হিসাবে ধরেই বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে আমদানির প্রস্তুতি সবসময় থাকতে হবে। 
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম