Logo
Logo
×

অর্থনীতি

তারল্য সংকটে ৫২ টেক্সটাইল মিল

এলসির ৪৪২ কোটি টাকা ব্যাংকে আটকা

গভর্নরের সহায়তা চেয়েছে বিটিএমএ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৪, ১১:০৪ পিএম

এলসির ৪৪২ কোটি টাকা ব্যাংকে আটকা

ফাইল ছবি

ব্যাক-টু-ব্যাংক এলসির বিপরীতে সুতা ও কাপড় সরবরাহের পরও ব্যাংকগুলো ৫২টি টেক্সটাইল মিলের ৪৪২ কোটি টাকা পরিশোধ করছে না। সময় পেরিয়ে গেলেও এলসির টাকা পরিশোধ না করায় ইতোমধ্যে টেক্সটাইল মিলগুলোতে তীব্র তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। এ কারণে বড় মিলও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে ১১ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) নেতারা। 

১৩ জুন বিটিএমএ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির বিপরীতে চাহিদামতো পণ্য সরবরাহ করার পর বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে পেমেন্টের জন্য তারিখ দেওয়া হলেও কিছু কিছু ব্যাংক বিলের অর্থ যথাসময়ে পরিশোধ করছে না। কখনও বিভিন্ন অজুহাতে  পরিশোধ করা থেকে বিরত থাকছে। অথচ বস্ত্রকল মালিকরা এজন্য দায়ী নন। বিটিএমএর সদস্যভুক্ত ৫২টি মিলের ৩৫ লাখ ৮৫৮ হাজার ডলার (৪৪২ কোটি টাকা) অপরিশোধিত থাকায় মিলগুলো তারল্য সংকটের মধ্যে পড়েছে। মিলগুলো সংকটে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।    

‘যুক্তরাষ্ট্রই এখন পাশে থাকার আগ্রহ দেখাচ্ছে’

এ বিষয়ে বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন যুগান্তরকে বলেন, পণ্য সরবরাহের পরও ব্যাংকগুলো এলসির অর্থ পরিশোধ করছে না। এক্ষেত্রে এলসির শর্ত ভঙ্গ করছে ব্যাংকগুলো। ম্যাচুরিটি ডেটের ৫-৮ মাস অতিক্রম করলেও স্থানীয় মিল মালিকদের টাকা নানা অজুহাতে দিচ্ছে না। অথচ অন্য দেশ থেকে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির বিপরীতে কাঁচামাল আনা হলে ডেলিভারির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংক টাকা দিয়ে দিত। টাকা না দিলে দূতাবাসের লোকজন ব্যাংকে গিয়ে বসে থাকে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কোন ব্যাংকে, কার (মিলের), কত টাকা অপরিশোধিত আছে সেই তালিকা চেয়েছেন। বিটিএমএ থেকে ৫২টি মিলের তালিকাও দেওয়া হয়েছে। এখন অপেক্ষার পালা।

খোকন আরও বলেন, ব্যাংকগুলোতে স্বেচ্ছাচারিতা চরমে উঠেছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ব্যাংকগুলো নিজেদের ইচ্ছেমতো ডকুমেন্টেশন ফি, এলসির চার্জ আদায় করছে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে না আনলে শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হতে পারে।   

একজন রপ্তানিকারক বিদেশে পণ্য সরবরাহের অর্ডারের বিপরীতে একটি ঋণপত্র (এলসি) গ্রহণ করেন, যেটি মাস্টার এলসি নামে পরিচিত। এই মাস্টার এলসির বিপরীতে ক্রেডিট দিয়ে স্থানীয় বাজার থেকে পণ্য ক্রয় করতে পারেন। এই প্রক্রিয়াটি ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি নামে পরিচিত। স্থানীয় কাঁচামাল সরবরাহকারীরা স্থানীয় ক্রেতার কাছ থেকে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি গ্রহণ করার পর ৯০-১২০ দিনের মধ্যে ব্যাংক থেকে অর্থ পাওয়ার কথা। এই সময়কালটি ম্যাচুরিটি ডেট বা পরিপক্বতার তারিখ হিসাবে পরিচিত। এই সময়সীমা অতিক্রম করা হলে, এটি ওভারডিউ হিসাবে বিবেচিত হয়। বর্তমানে কিছু ক্ষেত্রে ম্যাচুরিটি ডেটের এক থেকে দেড় বছরের বেশি সময় অতিক্রম করলেও অনেক ব্যাংক এলসির শর্ত অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ করছে না।

একাধিক টেক্সটাইল মিল মালিক জানান, পণ্য সরবরাহের পর পাওনা টাকা ঝুঁকি কমানোর জন্য ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি করা হয়। বিশ্বব্যাপী এটি স্বীকৃত পদ্ধতি। অথচ ব্যাংকগুলোই এখন টেক্সটাইল মিল মালিকদের টাকা আটকে রেখেছে। যদি ব্যাংকগুলো সময়মতো অর্থ প্রদান করতে না পারে, তাহলে কেন এলসি ইস্যু করবে এবং কমিশন চার্জ করবে? মালিকরা নিজেরাই তো ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অথবা বাকিতে সরাসরি পণ্য সরবরাহ করতে পারেন। কিন্তু বাকিতে দিলে টাকা পাওয়ার অনিশ্চয়তা থাকায় ব্যাক টু ব্যাক এলসি করা হয়। এখন সেখানে সবচেয়ে বেশি অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। 

তারা বলেন, টেক্সটাইল শিল্প চতুর্মুখী সংকটে আছে। গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের শর্তে গ্যাসের দাম ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু পেট্রোবাংলা এখন গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না। উৎপাদন সক্ষমতা ৫০ শতাংশের নিচে কারখানা চলছে। দিনের অধিকাংশ সময় গ্যাস থাকছে না।

তারপরও উদ্যোক্তাদের বাতাসের দাম দিতে হচ্ছে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার লাফিয়ে বাড়ছে। ক্রলিং পেগের মাধ্যমে ডলারের দাম কিছু বাড়ানো হলেও এখনো অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে এলসি করতে হচ্ছে। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের আকার হ্রাস করে ২০ মিলিয়ন ডলার করা হয়েছে। সেই ঋণের সুদ এক দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে।

আবার নগদ সহায়তা সার্কুলারে যে কয়টি পণ্যকে প্রণোদনার বাইরে রাখা হয়েছে, তার সবকটি টেক্সটাইল শিল্পের। সবকিছু মিলিয়ে টেক্সটাইল শিল্প ভালো নেই। সময়মতো সঠিক পলিসি দিতে পারলে টেক্সটাইল শিল্প সোনালি আঁশ পাটের মতো হারিয়ে যেতে পারে। কারণ দেশি-বিদেশি অনেক চক্র এ সেক্টরটি ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ অবস্থায় ব্যাংক থেকে অনাদায়ি অর্থ প্রদানের সঙ্গে ঈদের আগে কর্মচারীদের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম