এবারও শর্তসাপেক্ষে করপোরেট কর কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে ঢালাওভাবে সব খাতে নয়, আগের মতো উৎপাদনশীল খাতের সঙ্গে জড়িত পুঁজিবাজারে তালিকাবহির্ভূত শিল্পের কর কমানো হচ্ছে। এ জাতীয় কোম্পানির কর সাড়ে ২৭.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। বাকি সব খাতের কর অপরিবর্তিত থাকছে।
তবে, খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শর্তের বেড়াজালে বন্দি থাকায় করপোরেট কর কমানোর সুবিধা শিল্প খাত ভোগ করতে পারবে না। শিল্পের জন্য প্রয়োজন শর্তহীন কর হ্রাসের সুবিধা।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রতিবছর এনবিআর চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আয়কর নীতি, ভ্যাট নীতি ও শুল্ক নীতির শাখার সদস্যরা অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সচিবালয়ে বা বাসভবনে বাজেট প্রস্তাব পর্যালোচনা করতে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে সরকারের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার দর্শনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অর্থমন্ত্রী জনগুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। এবারই প্রথম রোববার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এনবিআরে এসে কর্মকর্তাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকে পর্যায়ক্রমে ৩ শাখার কর্মকর্তারা বেসরকারি খাতের প্রস্তাবগুলো এবং এনবিআরের প্রাথমিক সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। অর্থমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনার আলোকে বাজেট চূড়ান্ত করতে আগামীকাল চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবে এনবিআরের প্রতিনিধি দল। সেই বৈঠকেই বাজেট চূড়ান্ত হবে।
বর্তমানের করপোরেট কর ছাড়ের সুবিধা পেতে দুটি শর্ত মানতে হয়। প্রথমত; সব ধরনের আয় ও প্রাপ্তি এবং ৫ লাখ টাকার বেশি একক লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দ্বিতীয়ত; বছরে ৩৬ লাখ টাকার বেশি ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ শর্ত পরিপালনে ব্যর্থ কোম্পানির কর ৩০ শতাংশ। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ শর্ত ঠিক রেখে কর হার আড়াই শতাংশ কমানো হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এ বিষয়ে সায় দিয়েছেন।
গত কয়েক অর্থবছরের বাজেটে করপোরেট কর কমানো হচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে করপোরেট কর ছিল ৩৫ শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থবছরে এটি কমিয়ে ৩২.৫ শতাংশ, ২০২১-২২-এ ৩০ শতাংশ এবং সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শর্তসাপেক্ষে করপোরেট কর ২৭.৫ শতাংশ করা হয়।
শিল্প মালিকরা বলছেন, করপোরেট কর কমানোর হলেও শিল্প সেই সুফল ভোগ করতে পারবে না। কারণ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে অনানুষ্ঠানিক খাতের (ইনফরমাল ইকোনমি) প্রভাব বেশি। বহুজাতিক কমপ্লায়েন্স প্রতিষ্ঠানও এনবিআরের শর্ত পূরণ করতে পারবে না। তাই কর হ্রাসের সুবিধা শিল্প ভোগ করতে পারবে না। শিল্পকে সহায়তা করতে চাইলে শর্তহীনভাবে কর কমাতে হবে। তাছাড়া বাংলাদেশের কোন কোম্পানির পক্ষে বর্তমান শর্ত পূরণ করার মাধ্যমে কর হ্রাসের সুবিধা নেওয়া সম্ভব নয়।
সূত্রগুলো বলছে, আগামী বাজেটে ব্যক্তি-শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হচ্ছে না। তবে কর আদায় বাড়াতে বিত্তশালীদের ওপর কর ভার বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে ব্যক্তি-শ্রেণির করদাতাদের সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ আছে। এটি বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে। আগামী বছর থেকে বছরে সাড়ে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয় রয়েছে, এমন করদাতাদের ২৫ শতাংশের পরিবর্তে ৩০ শতাংশ কর দিতে হবে। এ ছাড়া করদাতাদের হয়রানি কমাতে সব শ্রেণির করদাতাদের স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। অন্যদিকে আইটি খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কর অবকাশ সুবিধা মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এমপিদের গাড়িতে শুল্ক বসছে : সংসদ-সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুবিধা বাতিল করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কর ছাড় কমিয়ে আনার শর্ত পূরণ করতে এ উদ্যোগ থাকছে বাজেটে। বর্তমানে সংসদ-সদস্যরা শপথ গ্রহণের পর সর্বোচ্চ ৪৫০০ সিসির ইঞ্জিন ক্ষমতাসম্পন্ন গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করতে পারেন। এ ধরনের গাড়ির আমদানিতে সর্বোচ্চ ৮২৬ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। আগামী বাজেটে গাড়ি আমদানি করতে এমপিদের ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। অর্থমন্ত্রী এনবিআরের এই প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন। আগামীকালের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সবুজ সংকেত দিলে এ প্রস্তাবটি বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।