বিআইডিএসের তথ্য
দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ১০:৩১ পিএম
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি অর্থাৎ বর্তমানে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে ‘বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সংস্থার একটি জরিপের তথ্য উল্লেখ করে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
বইটি লিখেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এমএ মান্নান।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসাবে ছিলেন গবেষণা ও নীতিসহায়ক সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ও বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে. মুজেরি, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) চেয়ারম্যান ও পিআরআইয়ের পরিচালক বজলুল হক খন্দকার। আরও ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান এবং বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসেন।
ড. বিনায়ক সেন বলেন, বাড়তি এ মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ অসুবিধায় রয়েছে। ‘সম্প্রতি বিআইডিএসের পক্ষ থেকে দেশের সব জেলা থেকে তথ্য নিয়েছি। এরপর একটি পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতি হিসাব করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১৫ শতাংশ।’
সূত্র জানায়, সাধারণ মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএস। তবে বিআইডিএস পৃথক পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতি হিসাব করেছে। বিবিএসের সবশেষ হিসাবে, গত মার্চ মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। মার্চ মাসে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উভয় মূল্যস্ফীতিই বেড়েছে। মার্চে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
ড. বিনায়ক সেন জানান, প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে মাছের দাম। গত এক বছরে মাছের দাম ২০ শতাংশের ওপর বেড়েছে। এরপর রয়েছে পোলট্রি মুরগির দাম। গত দুই বছরে আমদানি করা এসব খাবারের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে, যা শেষ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘খেলাপি ঋণ কমাতে, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন আনতে বহুদিন ধরে ব্যাংকিং কমিশন করার কথা বলা হচ্ছে। এখানে কেউ হাত দিচ্ছি না। ব্যাংকিং কমিশন না করলে অন্তত ব্যাংকিং কমিটি গঠন করা হোক।’ এ
কবারে মার্কিন ডলারের দাম ১১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৭ টাকা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের এমন দাম বাড়ার পর রপ্তানি খাতে আর প্রণোদনা দেওয়ার যৌক্তিকতা নেই।
অনুষ্ঠানে ডাকাতকে কেন ডাকাত বলেন না-এমন প্রশ্ন করে এমএ মান্নান বলেন, ‘আপনারা সব সময় নরম ভাষায় কথা বলেন। এটা ভালো। কিন্তু যারা ঋণ খেলাপি হচ্ছে, দিনদুপুরে ব্যাংক থেকে অর্থ সরিয়ে নিচ্ছে, তাদের কেন সরাসরি ডাকাত বলেন না। ডাকাতদের তো ডাকাতই বলতে হবে।’
ব্যাংক কমিশন গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের অবস্থা হয়েছে, চুন খেয়ে গাল পোড়ে, দই দেখে ভয় করে। খুঁজে খুঁজে বুড়ো লোকদের, অবসরপ্রাপ্ত সচিবদের পদপদবি দিয়ে বসানো হয়, বড় ভবনে জায়গা দেওয়া হয়। কিন্তু ফল কী হয়? সুতরাং কমিশন নয়, সরাসরি সিদ্ধান্ত নিয়ে তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।’
পিআরআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ বলেন, ‘খেলাপি ঋণের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলো। এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং এতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছিল। তাই খেলাপি ঋণের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কোনো সমাধানই কাজে আসবে না।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে তিনি বলেন, আমদানির কারণে আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়েনি। এর প্রধান কারণ ছিল করোনাকালীন সরকারের পক্ষ থেকে প্রদান করা বিভিন্ন প্যাকেজ। এসব প্যাকেজের কারণে বাজারে ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত তারল্য প্রবাহ বেড়ে গিয়েছিল।
রপ্তানি প্রণোদনার বিষয়ে মসিউর রহমান বলেন, রপ্তানি প্রণোদনা বন্ধ করা হবে কি না, সেটা সরকার ভেবে দেখতে পারে। যদি এ প্রণোদনা বহাল রাখা হয়, সে ক্ষেত্রে রপ্তানি খাতে ওই পণ্যের অবদান যাচাইয়ের ভিত্তিতে তা দেওয়া যেতে পারে।
এম কে মুজেরী বলেন, কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তা যেন কয়েকটা গ্রুপের জন্য না হয়। ব্যাংকি খাত দিনকে দিন রুগ্ন হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। ড. জায়েদি সাত্তার বলেন, রাজস্ব বাড়ার ঘটনায় এনবিআর একক কোন কৃতিত্ব নেই। ৩০ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে টাকার। কাজেই আয় বেড়েছে।