এবার ইউসিবির সঙ্গে একীভূত হতে পারে ন্যাশনাল ব্যাংক
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১০ পিএম
ফাইল ছবি
পদ্মা, বেসিক, বিডিবিএল, রাকাবের পর এবার ইউসিবির সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার ইউসিবি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ডেকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে ইউসিবি ব্যাংকের পর্ষদের একজন সদস্য ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রটি জানায়, বৈঠকে ন্যাশনাল ব্যাংকের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তাদের অনুপস্থিতিতেই ইউসিবিকে ব্যাংকটি একীভূত করার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। ন্যাশনাল ব্যাংককে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এখনো কিছু জানানো না হলেও ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদে এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছিল বেশ কিছুদিন ধরে। ব্যাংকটিতে নিযুক্ত স্বতন্ত্র পরিচালকরা চান, এটিকে অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করতে। তবে শেয়ারধারী পরিচালকরা আরও কিছু সময় অপেক্ষা করে আর্থিক অবস্থার উন্নতি করা যায় কিনা, তা দেখতে চান। এ নিয়ে ব্যাংকটির পর্ষদ দ্বিধাবিভক্ত।
একীভূত হওয়া নিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ দ্বিধাবিভক্ত হলেও সরকার চাচ্ছে এটিকে একীভূত করতে। এজন্য ইউসিবি ব্যাংককে এগিয়ে আসার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে কোনো পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে ইউসিবি ব্যাংকের মালিকানার সঙ্গে যুক্ত একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ইউসিবিকে প্রস্তাব করা হয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংককে একীভূত করার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে। এ বিষয়ে কী করা যায়, সেটি দেখব। ন্যাশনাল ব্যাংকের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে ইউসিবির পর্ষদ এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’
এ নিয়ে গত এক মাসে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৫টি ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সর্বশেষ ইউসিবি ও ন্যাশনাল ব্যাংকের একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে গত সোমবার বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। ওইদিন সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিকে ডেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। ওই বৈঠকেও বেসিক ব্যাংকের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।
গত ডিসেম্বরে আর্থিক নানা অনিয়মের কারণে সংকটে পড়া সিকদার গ্র“পের নিয়ন্ত্রণে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার আদেশে ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়।
গভর্নরের আদেশে বলা হয়েছিল, ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ঋণের নিয়ম ও বিধিবিধান লঙ্ঘন করে ঋণ অনুমোদন, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় অনাকাক্সিক্ষত হস্তক্ষেপ, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাংকের শেয়ার একই পরিবারে কেন্দ্রীভূত করা, পরিচালক নির্বাচন বা পুনর্নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি, পর্ষদের গোচরে আর্থিক অনিয়ম সংঘটন, পর্ষদের নীতিনির্ধারণী দুর্বলতার কারণে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতি, ব্যাংকিং সুশাসন ও শৃঙ্খলা বিঘœ করার মাধ্যমে ব্যাংক-কোম্পানি ও আমানতকারীদের স্বার্থের পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে পর্ষদের সম্পৃক্ত থাকার ঘটনা ঘটেছে। এজন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সুপারিশে আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষা ও জনস্বার্থে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হলো।
ব্যাংকটির পর্ষদ থেকে মনোয়ারা সিকদার, রন হক সিকদার, রিক হক সিকদার, নাইমুজ্জামান ভূঁইয়া ও মুরশিদ কুলি খানকে বাদ দেওয়া হয়। তাদের বদলে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ও সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেনকে। এর বাইরে শেয়ারধারীদের মধ্য থেকে পরিচালক করা হয় পারভীন হক সিকদার, উদ্যোক্তা পরিচালক খলিলুর রহমান, সিকদার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পক্ষে প্রতিনিধি পরিচালক মো. সফিকুর রহমান ও উদ্যোক্তা শেয়ারধারী পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ১১ হাজার ৭২০ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের প্রায় ২৯ শতাংশ। আর গত বছর শেষে ব্যাংকটির নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিং ঘাটতি ছিল প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। একই সময়ে বেসরকারি খাতের ইউসিবির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির বিতরণ করা মোট ঋণের ৫ শতাংশ।
এদিকে এখন পর্যন্ত যে ৫টি ব্যাংকের একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার মধ্যে ৩টি সরকারি ব্যাংক ও ২টি বেসরকারি ব্যাংক। সরকারি যে ৩টি ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক।
এর মধ্যে সোনালীর সঙ্গে বিডিবিএল, কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাব এবং সিটির সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর বেসরকারি যে ২টি ব্যাংকের একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে তার মধ্যে এক্সিমের সঙ্গে পদ্মা ও ইউসিবির সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক যুগান্তরকে বলেন, ব্যাংক একীভূতকরণের যে পাঁচটি প্রস্তাব পাওয়া গেছে এর বাইরে আপাতত নতুন কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে না। এসব ব্যাংকের একীভূতকরণ সম্পন্ন হওয়ার পর অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন করে প্রস্তাব নেওয়া হবে।