পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞদের ১০ সুপারিশ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৫৫ পিএম
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যুগান্তরের গোলটেবিলে দশ সুপারিশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে-ভোক্তা বা সমন্বয় মন্ত্রণালয় গঠন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় আলাদা ভোক্তা বিভাগ গঠন এবং অসাধু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অন্যতম।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার যুগান্তর আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব সুপারিশ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন এবং বিশেষ অতিথি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু)।
যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, গুটি কয়েক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে সাধারণ মানুষ জিম্মি। অসাধু সিন্ডিকেট বন্ধ করতে হবে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সমন্বয়ের যথেষ্ট ঘাটতি আছে। আর সমন্বয়ের জন্য আমাদের পাশ্ববর্তী দেশে কনজ্যুমারস অ্যাফেয়ার্স ফুড অ্যান্ড পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন নামে একটি মন্ত্রণালয় আছে। আমাদের দেশেও একটা থাকা উচিত। আমি জোর দিয়ে বলছি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুটি ডিভিশন থাকা উচিত। একটি হলো-ভোক্তাবিষয়ক আরেকটি বাণিজ্যবিষয়ক বিভাগ।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে তথ্য-উপাত্তের বড় গরমিল আছে। এটি দূর করা জরুরি। যতদিন পর্যন্ত না এই তথ্যের গরমিল দূর করা যাবে ততদিন পর্যন্ত নীতিমালায় সামঞ্জস্য আনা যাবে না। ফলে নীতিনির্ধারণও সঠিক হবে না। এক্ষেত্রে আমদানি, উৎপাদন, চাহিদা, রপ্তানি ও মজুতসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সঠিক তথ্য দরকার।
তিনি আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক আছে সেটিকে কাজে লাগিয়ে হঠাৎ রপ্তানি বাতিল বা পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি চুক্তি করা যেতে পারে। সেপা’র (কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট) মাধ্যমে এ চুক্তি হলে তারা হঠাৎ বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি বন্ধ বা দাম বেঁধে দিতে পারবে না।
এছাড়া রাজস্বনীতি ও মুদ্রানীতির মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে হবে। সেই সঙ্গে কমুডিটি এক্সচেঞ্জ চালু এবং ফিউচার্স মার্কেট চালু করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক এমকে মুজেরি বলেন, যে কোনো পণ্যের মূল্য শৃঙ্খল বা ভ্যালু চেইন রয়েছে। এই মূল্য শৃঙ্খল প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে। তাহলে দুরভিসন্ধি থাকলেও কেউ তা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। আমাদের দেশে চালের মূল্য শৃঙ্খল প্রতিযোগিতামূলক নয়। এক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) রিসার্স ফেলো ড. বদরুন নেছা আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এর মধ্যে অন্যতম হলো অসাধু সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ। এ ছাড়াও চাঁদাবাজি বন্ধ এবং শুল্ক ছাড় দেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশ কাঁচামাল
আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ এমরান মাস্টার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে অধিক পরিমাণে ভোগ্যপণ্য উৎপাদনে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে সরবরাহ এবং বণ্টনের সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও নিশ্চিত এবং কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ জরুরি।
পচনশীল ভোগ্যপণ্যের অপচয় বা নষ্ট রোধে আড়ত বা পাইকারি বাজারসমূহের পাশে কোল্ডস্টোরেজ স্থাপন করতে হবে। কোনো দ্রব্যের উৎপাদন-সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিলে বা ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিলে অধিক পরিমাণ আমদানিতে উৎসাহিত করা উচিত।
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, যারা সততা ও সুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ব্যবসা করতে চান তাদের কোনো সমস্যা নেই। আর যারা অন্য কিছু চিন্তা করে তাদের বিরুদ্ধে ডাক, কুরিয়ার, সরাসরি বা যেকোনো মাধ্যমে আমাদের কাছে অভিযোগ করা যেতে পারে।