স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের কারণে রপ্তানি খাতে পর্যায়ক্রমে প্রণোদনা বা ভর্তুকির হার কমানো হচ্ছে। গড়ে সর্বনিম্ন দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে।
নতুন প্রণোদনার হার গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে যেসব পণ্য জাহাজীকরণ করা হয়েছে এবং আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত যেসব পণ্য জাহাজীকরণ করা হবে সেগুলোর ক্ষেত্রে কার্যকর হবে।
এ বিষয়ে সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়, বাংলাদেশ আগামী ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটবে। এরপর থেকে রপ্তানি খাতে আর কোনো প্রণোদনা বা ভর্তুকি দেওয়া যাবে না। বর্তমানে ৪৩টি খাতে সরকার রপ্তানিতে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ থেকে সর্বনিম্ন ১ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে। এসব প্রণোদনা এক সঙ্গে ২০২৬ সালে তুলে নেওয়া হলে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
এ কারণে এসব প্রণোদনা পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসাবে চলতি অর্থবছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত রপ্তানির জন্য যেসব পণ্য জাহাজীকরণ করা হবে সেগুলোতে প্রণোদনার হার কমবে।
এর আগে চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত যেসব পণ্য জাহাজীকরণ করা হয়েছে সেগুলোর বিপরীতে আগের ঘোষিত হারে প্রণোদনা বা ভর্তুকি পাওয়া যাবে। প্রায় সব খাতেই প্রণোদনার হার কমানো হয়েছে। খাত ভেদে সর্বনিম্ন দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা কমেছে।
প্রণোদনার বিষয়ে গত ৩০ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক অপর এক সার্কুলার জারি করে বলেছিল ১ জানুয়ারি থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত যেসব পণ্য রপ্তানির জন্য জাহাজীকরণ হবে সেগুলোর বিপরীতে নতুন হারে প্রণোদনা দেওয়া হবে।
সোমবারের সার্কুলারের মাধ্যমে ৩০ জানুয়ারির সার্কুলারটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নতুন প্রণোদনা পাওয়ার সময় এক মাস পেছানো হয়েছে।
রপ্তানিমুখী দেশীয় বস্ত্র খাতের শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ প্রণোদনা মিলবে। ইউরো অঞ্চলে বস্ত্র খাতের রপ্তানিকারকরা আগে নিয়মিত প্রণোদনার অতিরিক্ত আরও ২ শতাংশ পেতেন। এখন থেকে তা কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের বস্ত্রশিল্পের উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা ৪ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। নতুন বাজারে রপ্তানি প্রণোদনা ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। তৈরি পোশাক খাতে অতিরিক্ত নগদ সহায়তা ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।
পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা আগে পাওয়া যেত সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ। এখন তা কমিয়ে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ করা হয়েছে, এ খাতে সর্বনিম্ন প্রণোদনা ৭ থেকে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। চামড়া খাতে ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ১২ শতাংশ, কৃষিপণ্যে ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
হিমায়িত চিংড়ি খাতে আগে বিভিন্ন স্তরে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ প্রণোদনা পাওয়া যেত। এখন তা কমিয়ে ৯ শতাংশ করা হয়েছে। এ খাতের সর্বনিæ প্রণোদনা ২ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে মধ্যবর্তী স্তরগুলোতে প্রণোদনার হার কমেছে।
আলু রপ্তানিতে প্রণোদনা ২০ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ, হালকা প্রকৌশল শিল্প খাতে ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ১২ শতাংশ, হালাল মাংস রপ্তানিতে ২০ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
ফার্নিচার রপ্তানিতে প্রণোদনা ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ, জাহাজ রপ্তানিতে ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। কাগজ রপ্তানিতে ১০ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ, আগর রপ্তানিতে ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ, ওষুধ রপ্তানিতে ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ, ব্যাটারি খাতে ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশ, সিনথেটিক জুতা ও ব্যাগে ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ, মোটরসাইকেলে ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে।
সিরামিক পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ, টুপি রপ্তানিতে ১০ শতাংশের পরিবর্তে ৯ শতাংশ, সফটওয়ারে ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে।
এছাড়া আরও কিছু খাতে রপ্তানিতে ভর্তুকি বা প্রণোদনার হার কমানো হয়েছে।