পিআরআইয়ের জরিপ
উপশহরগুলোতে বাড়ছে ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৩, ১১:২২ পিএম
ফাইল ছবি
দেশের গ্রাম ও শহরের তুলনায় উপশহরগুলোতে বাড়ছে ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তি। এভাবে ভবিষ্যতে সারাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়লে গ্রামে ক্ষুদ্র ঋণের বাজার সংকুচিত হয়ে পড়তে পারে। যদিও সুদের হার বেশি হওয়া সত্ত্বেও এখনো ঋণ গ্রহীতাদের কাছে বেশি পছন্দ হচ্ছে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান। কেননা এখান থেকে ঋণ নিতে ঝামেলা নেই বললেই চলে। এছাড়া যখন প্রয়োজন তখনই অর্থ পাওয়া যায়।
‘ইউস অব ডিএফএস অ্যামং হাউজহোল্ডস এন্ড ফার্মস’ শীর্ষক এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এটি করেছে পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউট (পিআরআই)।
অপর এক উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, গ্রামের মানুষের মধ্যে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়িয়েছে এজেন্ট ব্যাংকিং। কেননা এই ব্যাংকিংয়ে বর্তমান প্রথাগত ব্যাংকিং এর তুলনায় ৮৬ শতাংশ খরচ কম। তবে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক বিকাশ, উৎপদনশীলতা বৃদ্ধি এবং মানুষের আয় বাড়াতে এ খাতে ব্যাংকগুলোর আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবাার এক প্রশিক্ষণ সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। রাজধানীর বনানীর পিআরআই কার্যালয়ে এটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পিআরআইর চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার।
‘এজেন্ট ব্যাংকিং এন্ড ফাইনান্সিয়াল ডিপেনিং’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। এছাড়া ‘ইউস অব ডিএফএস অ্যামং হাউজহোল্ডস এন্ড ফার্মস’ শীর্ষক জরিপের ফল তুলে ধরেন ড. বজলুল এইচ খন্দকার।
জাইদী সাত্তার বলেন, আগামী ১/২ বছরে দেশে ডিজিটাল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটবে। সব কিছু ডিজিটাল হয়ে গেলে আগামী ৫ বছরে ক্যাশলেস সোসাইটি হবে বাংলাদেশ। চীনে যেখানে এখন ৮০ ভাগই ক্যাশলেস হয়েছে। এর ফলে দুনীতি কমে আসবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক কখনো বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিংবা মাথাপিছু আয় হিসাব করে না। কারণ বিবিএসের মতো এত সক্ষমতা তাদের নেই। তারা সব সময় প্রক্ষেপণ দেয়। বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ একেবারেই হচ্ছে না, সেটি ঠিক নয়। মোট অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ ভালো হচ্ছে।
তবে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি চাইলে বিনিয়োগ ৩০ শতাংশ হতে হবে। এছাড়া ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি চাইলে ৩৩ শতাংশ বিনিয়োগ দরকার। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ৬/৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অনেক ভালো।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সবচেয়ে বড় অরিজিন হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি। মানুষের বড় অংশই থাকে সেখানে। গ্রামীণ অর্থনীতি এবং সামাজিক অগ্রগতি ভালো হয়েছে।
গ্রামে অকৃষিজ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়ছে। রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে। ফলে গ্রামে বিনিয়োগ হচ্ছে। গ্রাম উন্নয়ন সরকার ও এনজিও ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। তবে আর্থিক অর্ন্তভূক্তির ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো পিছিয়ে ছিল। কেননা তাদের শাখা খুলে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানো লাভজনক ছিল না।
কিন্তু এজেন্ট ব্যাংকিং এই অবস্থার পরিবর্তন এনেছে। গ্রামের মানুষকে স্বল্প খরচে ব্যাংকিং চ্যানেলে যুক্ত করেছে। তবে এখনও এজেন্ট ব্যাংকিং এ ঋণ বিতরণ বাড়েনি। সেটি আগামীতে বাড়াতে হবে। ব্যাংকের অনুপস্থিতিতে গ্রামীন অর্থনীতিতে জায়গা দখল করেছিল ক্ষুদ্র ঋণ। ২৩/২৪ শতাংশ সুদ দিয়ে সেখান থেকে মনুষ ঋণ নিচ্ছে।
কিন্তু এজেন্ট ব্যাংকিং এর সুদের হার এখন ৯ শতাংশ। দিন দিন এজেন্ট ব্যাংকিং জনপ্রিয়তার পাচ্ছে। সারাদেশে প্রায় ২১ হাজার এজেন্ট ব্যাংক আছে। ৩১টি ব্যাংক এ কাজ করছে। সবোর্চ ৫টি ব্যাংক করছে মোট এজেন্ট ব্যাংকিং এর ৭০ শতাংশ। এগুলো হলো, ব্যাংক এশিয়া, ইসলামি ব্যাংক, ডাচ বাংলা, সিটি এবং ব্র্যাক ব্যাংক। কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও এজেন্ট ব্যাংকিং এর সম্ভাবনা ব্যাপক রয়েছে, যা এখনো কাজে লাগানো যায়নি।
বজলুল এইচ. খন্দকার বলেন, সম্প্রতি এক হাজার জনের ওপর একটি জরিপ করা হয়েছিল। এছাড়া ৪০০ কটেজ, মাইক্রো এবং ছোট প্রতিষ্ঠান ছিল এই জরিপের অর্ন্তগত। জরিপের ফলাফল থেকে দেখা যায়, গ্রামীণ পরিবার এবং কুটির, মাইক্রো এবং ছোট সংস্থাগুলি বেশিরভাগই ক্ষুদ্রঋণ ঋণের উপর নির্ভরশীল। যেখান থেকে খুব বেশি ঝামেলা ছাড়াই খুব উচ্চ সুদে ঋণ পেতে পারে। সুদের হার প্রায় ২৩-২৪ শতাংশ বা তার উপরে।
অন্যদিকে, অন্যান্য আনুষ্ঠানিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাঙ্ক, ব্যাংক বর্হিভূত আথিক প্রতিষ্ঠান এবং সম্প্রতি কিছু মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারীরা অনেক কম সুদে ঋণ দিচ্ছে। এ কারণে গ্রামীণ অর্থনীতিতে অর্থায়নের উৎস হিসেবে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের স্থলে ডিজিটাল আর্থিক পরিষেবার ব্যাপক সম্ভাবনা আছে।
জরিপে অংশ নেওয়া উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৯১ শতাংশই বলেছেন তারা ব্যবসা শুরু করেছেন নিজস্ব অর্থায়নে। আরও বলা হয়েছে ৭৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ পরিবার প্রধানের নিজস্ব মোবাইল ফোন আছে। ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ মোবাইল ফোন পরিবারের অন্য সদস্যের সঙ্গে শেয়ার করেন। ১৬ দশমিক ২৩ শতাংশ বলেছেন তারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না।
এছাড়া স্মার্টফোন ব্যবহার করে মাত্র ২৬ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ। তবে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে ২৪ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ৭৫ দশমিক ৩০ শতাংশ করেনা। সব কিছুতে মহিলারা রয়েছে পিছিয়ে।
তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়লে ক্ষুদ্র ঋণদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে হয় সুদের হার কমাতে হবে, না হলে বাজার থেকে ব্যবসা বাদ দিয়ে চলে যেতে হবে।