শৈশব থেকেই মৌমাছির প্রতি আকর্ষণ, সেই থেকে ভালোবাসা। বর্তমানে মৌমাছি ও মধুকেই পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন তরুণ আলেম অলিউল্লাহ আল মাহমুদ।
মাত্র দুই হাজার টাকায় শুরু করা তার ব্যবসা ১০ বছরের ব্যবধানে এখন ২০ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। খুলনায় ‘আফীফ মৌ খামার’ এবং ‘আফীফ এন্টারপ্রাইজ’ নামে মাওলানা অলিউল্লাহর দুটি প্রতিষ্ঠান মধু উৎপাদন, মৌমাছি পালন নিয়ে কাজ করছে।
মধু নিয়ে গবেষণা, মানুষকে খাঁটি মধু চেনানো, ভেজাল মধু সম্পর্কে সচেতন করা, মধু নিয়ে মানুষের ভ্রান্তি দূর করা এগুলো এখন তার পেশা ও নেশা। কোন ধরনের মধুর কী বৈশিষ্ট্য এসব নিয়ে জানাশোনায় তার কৌতুহলের শেষ নেই।
পূর্ব বানিয়া খামার, লোহারগেট খুলনা সদরের আমীর হোসাইনের ছেলে তরুণ উদ্যোক্তা মাওলানা অলিউল্লাহ বলেন, বাজারে দুই ধরনের ভেজাল মধু পাওয়া যায়। একটিতে মধুর কোনো অংশই নেই। চিনির সিরা, পটাশিয়াম ও হানি এসেন্স তথা রাসায়নিক উপাদান মিশিয়ে এই নকল মধু তৈরি করা হয়। আবার অল্প পরিমাণ ভালো মধুর সঙ্গে নকল মধু মিশিয়ে আরেক ধরনের ভেজাল মধু তৈরি করা হচ্ছে। আবার দামি মধুর সঙ্গে কম দামি মধু মিস্ণ করে ভেজাল করা হয়।
তিনি আরো বলেন, ভেজাল ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের ঠকানোর জন্য এই মধু আগুনে জ্বেলে এবং পানিতে ঢেলে পরীক্ষা করে দেখান। ক্রেতারা এতে বিভ্রান্ত হন। কিন্তু এগুলো নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা নয়। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় বড় হাড়ি নিয়ে মৌচাক নিয়ে ফেরি করে মধু বিক্রি করা হয়। এগুলোর কোনটিই বিশুদ্ধ মধু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ মধু ভাঙার সাথে সাথে যদি ভালো মধু হয় ওখানেই স্থানীয়রা কেনে নেয়।
বিশুদ্ধ ও ভেজাল মধু কীভাবে চেনা যাবে জানতে চাইলে মাওলানা অলিউল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, নকল মধু একই রকম রাসায়নিক উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। সব ঋতুতে এর স্বাদ ও ঘ্রাণ প্রায় একই রকম থাকে। নকল মধুতে পরাগের উপস্থিতি পাওয়া যায় না। কিন্তু ফুলভেদে আসল মধুতে স্বাদ ও ঘ্রাণের মধ্যে বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়, পরাগ ও থাকে।
‘মুখতালিফুন আলওয়ানুহু’ কুরআনে এই বাক্য দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে যে মধু বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। বিভিন্ন রঙেরও হতে পারে। কালো, হলুদ, সাদা, হলদে এবং লালচে। কোনোটা জমাট বাধা, কোনোটা পাতলা আবার কোনোটা ঘণ।
মাওলানা অলিউল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশের অধিকাংশ লোক মনে করে মধু মানেই এক ধরনের হলুদ বা লালচে কোনো ঘণ পদার্থ। যা আদৌ সঠিক নয়। মধু অনেক ভেরিয়েশন থাকে।
তিনি বলেন, আগুন, পানি, পিপড়া, ভিনেগার, চুন, ফ্রিজিং এগুলো দিয়ে কখনো সঠিক মধু চেনা যায় না। একেক মধুর ধরণ একেক রকম। একমাত্র অভিজ্ঞতা আর ল্যাবটেস্ট ছাড়া ১০০% মধু চেনার তেমন কোনো নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি আমাদের দেশে নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
মধু ও মৌমাছিকে একটি সম্ভাবনাময় শিল্প উল্লেখ করে তরুণ এই উদ্যোক্তা বলেন, সরকার সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প ও অর্থ মন্ত্রণালয়, বন মন্ত্রণালয় যদি মধু ব্যবসায়ী মৌ খামারী, ও সুন্দরবন কেন্দ্রিক মৌয়ালদের প্রতি সুনজর দেয় এবং বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে তাহলে এই শিল্প আর্থিক খাতে বহু দূর এগিয়ে যাবে। সরকার পাবে বড় অংকের রাজস্ব।