এস আলমের ৩৬৮ কোটি টাকা মূল্যের জমি জব্দের আদেশ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম এবং তার পরিবারের নামে থাকা ১৭৫ বিঘা সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর মূল্য ৩৬৮ কোটি ২৫ লাখ ৬৩ হাজার পাঁচশ টাকা। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
জব্দ হওয়া সম্পদ হলো-চট্টগ্রামের ১৮ নং ওয়ার্ড এলাকায় দশমিক ১৬৩৭ একর জমি; যার বাজারমূল্য ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। একই ওয়ার্ডে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের দশমিক ১৩৫০ একর জমি। চট্টগ্রামের ১ নং পাথরঘাটা ইউনিয়নে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি; যার বাজারমূল্য ৩ কোটি ৫৪ লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ টাকা। একই ইউনিয়নের দশমিক ৯০ একর জমি; যার মূল্য ৩৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা এবং ৬০ লাখ টাকা মূল্যের ১ দশমিক ২০ একর জমি। এস আলম কোল্ড স্টিল লিমিটেডের নামে ৩০ হাজার টাকা মূল্যে পটিয়া উপজেলায় দশমিক শূন্য ৬ একর জমি। পটিয়ার শিকলবাহা ইউনিয়নে ২১ লাখ টাকা মূল্যের জমি। একই এলাকায় ১৪ লাখ টাকা মূল্যের দশমিক ২৮ একর, ২১ লাখ টাকা মূল্যের দশমিক ৪১৫০ একর, ১৩ লাখ টাকা মূল্যের দশমিক ২৬ একর, ১৬ লাখ টাকা মূল্যের দশমিক ৩২ একর, ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের দশমিক ৮০ একর, ৮০ হাজার টাকা মূল্যের দশমিক ১৪ একর, ৩০ হাজার টাকা মূল্যের শূন্য দশমিক ৬ একর, ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের দশমিক ১৮৫০ একর, তিন লাখ টাকা মূল্যের দশমিক শূন্য ৬ একর, ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের দশমিক ১৫ একর, ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের দশমিক ৫৭৫০ একর, ৬০ হাজার টাকা মূল্যের দশমিক ১২ একর এবং ১২ হাজার টাকা মূল্যের দশমিক শূন্য ৫ একর জমি। নারায়ণগঞ্জে স্যাভোলা অয়েল লিমিটেডের এক দশমিক ৩৮৫০ একর জমি ও দুই হাজার বর্গফুটের সেমিপাকা ঘর; যার মূল্য ১২ কোটি ১৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা। একই প্রতিষ্ঠানের দুই একর জমি; যার মূল্য ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এছাড়া এক কোটি ২১ লাখ ১৯ হাজার টাকা মূল্যের দশমিক ৩৬৩৬ একর জমি, এক কোটি ১৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা মূল্যের দশমিক ৩৪৬৯ একর জমি, ৬ কোটি ৮ লাখ ৯ হাজার টাকা মূল্যের ১ দশমিক ৮২৪৩ একর জমি। ১২ কোটি ৭৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা মূল্যের ৩ দশমিক ৮২৬৪ একর জমি। ৭ কোটি ২৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকা মূল্যের ২ দশমিক ১৮৮৯ একর জমি। ডেলটা অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের ১ দশমিক ২১৫০ একর এবং ১৫শ বর্গফুটের পাকা গৃহ; যার মূল্য ৭ কোটি ২৯ লাখ ৬৩ হাজার। ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের দশমিক ১৭ একর জমি ও পাঁচশ বর্গফুটের সেমি পাকা গৃহ। ৭৩ লাখ টাকা মূল্যের দশমিক ৩৬৫০ একর জমি। ৬ কোটি ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের এক দশমিক ৬৩৫০ একর জমি। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কেশবপুরে ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা মূল্যের এক দশমিক ৮৯ একর জমি; ২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা মূল্যের এক দশমিক ৪৬ একর জমি। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার শিকলবাহা এলাকার ৯ দশমিক ৪৩ একর জমি; যার মূল্য ১৫৩ কোটি ৬৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। একই এলাকায় ৮২ কোটি ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের ৯ দশমিক ৪৩ একর জমি। সাইফুল আলমের নিজ নামে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার শিকলবাহা এলাকায় ৫ লাখ টাকা মূল্যের ৪ দশমিক ৭০৭ একর জমি। গুলশানের ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ১০ কাঠা জমি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তেজতুরি বাজারে ৫৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা মূল্যের ৯০ দশমিক ৮৮ শতাংশ জমি ও তিন হাজার বর্গফুটের একতলা দালান। আর রাজধানীর ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় ১ বিঘা জমি।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর এস আলম ও স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ তার পরিবারের ১২ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। অন্যরা হলেন-সাইফুল আলমের ছেলে আশরাফুল আলম ও আহসানুল আলম; ভাই মোরশেদুল আলম, সহিদুল আলম, রাশেদুল আলম, আবদুস সামাদ, আবদুস সামাদের স্ত্রী শাহানা ফেরদৌস, ভাই ওসমান গণি, ওসমান গণির স্ত্রী ফারজানা বেগম, ভাই মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসান ও অজ্ঞাত মিশকাত আহমেদ।
এস আলম গ্রুপ চেয়ারম্যানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন নাজমে নওরোজ নামে এক নারী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওসমান গনি।
মামলায় অন্য আসামিরা হলেন-সাইফুল আলমের মাসুদের শ্বশুর আলী জহুর, শ্যালিকা জেসমিন আরশেদ, ব্যক্তিগত সহকারী আকিজ উদ্দিন এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক প্রবর্তক মোড় শাখার সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. জাকারিয়া। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালত সূত্র জানয়, ২০১৩ সাল থেকে নওরোজ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন বাদী। সেই সুবাদে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের শ্বশুর আলী জহুর ও তার মেয়ে জেসমিন আরশেদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আর তাদের মাধ্যমে সাইফুল আলম মাসুদের সঙ্গে বাদীর পরিচয় হয়। সাইফুল ইসলামের নির্দেশে বাদী তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ৪৫ শতাংশ শেয়ার জেসমিন আরশেদকে ও ৪০ শতাংশ শেয়ার তার আলী জহুরকে দিয়ে নিজে ১৫ শতাংশ নিয়ে প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব নেন। পরে সাইফুল ইসলাম মাসুদের নির্দেশে বাদীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধক রেখে আলী জহুর ও তার মেয়ে জেসমিন আরশেদ ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, প্রবর্তক মোড় শাখা থেকে ৪৭ কোটি টাকা ঋণ নেন; যার মধ্যে মাত্র ১৫ কোটি টাকা বাদীকে দেওয়া হয়। বাকি টাকা তারা আত্তসাৎ করেন। এভাবে বিভিন্ন সময়ে ওই শাখা থেকে প্রতিষ্ঠান বন্ধক রেখে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন তারা।