Logo
Logo
×

শেষ পাতা

মূল্য নিয়ন্ত্রণে পাঁচ শতাংশও প্রত্যাহার হচ্ছে

দেশে শুল্কমুক্ত পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ

অর্থ উপদেষ্টা এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন * এতে রাজস্ব কমবে ৫৯ কোটি টাকা * চাল, চিনি ও তেলের শুল্ক আগে কমলেও মূল্য কমেনি

মিজান চৌধুরী

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দেশে শুল্কমুক্ত পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ

ছবি: সংগৃহীত

৫৯ কোটি টাকা রাজস্ব লোকসান দিয়ে পেঁয়াজের ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ আমদানি শুল্কও প্রত্যাহার হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে আমদানি শুল্ক হার নেমে আসবে শূন্যের কোঠায়। অর্থাৎ দেশে শুল্কমুক্ত পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বাজারে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা কমিয়ে এনে ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। যা প্রজ্ঞাপন আকারে শিগগির জারি করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এটি প্রক্রিয়াধীন আছে বলে নিশ্চিত করেছে এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্র।

বর্তমানে পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক অবশিষ্ট আছে। গত বৃহস্পতিবার পেঁয়াজের ওপর থেকে এই ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমানোর সুপারিশ করে এনবিআরের কাছে প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। যা পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিকে দফায় দফায় রাজস্ব প্রত্যাহার করেও বাগে আনতে পারছে না নিত্যপণ্যের বাজার। সর্বশেষ মূল্য কমাতে চালের ওপর দুদফায় ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে শূন্য শতাংশ করা হয়। এছাড়া চিনির ওপর ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ এবং ভোজ্যতেল ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। গত সেপ্টেম্বরে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ প্রত্যাহার করা হয়েছিল পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও। এখন বাকিটাও তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

কিন্তু একাধিক পণ্যের ওপর যে লক্ষ্যে শুল্ক হ্রাস ও প্রত্যাহার করা হচ্ছে বাস্তবে সুফল মিলছে না। কোনো ক্ষেত্রে আগের তুলনায় দাম আরও বেড়েছে। বিশেষ করে পাম অয়েলের ক্ষেত্রে সেটি ঘটেছে।

গত সেপ্টেম্বরে বাজারে আমদানিকৃত এক কেজি পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা এবং দেশি ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হয়। দাম কমানোর জন্য আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামানো হয়। মঙ্গলবার ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে দেখা গেছে, এর কোনো সুফল মেলেনি। সেদিন এক কেজি পেঁয়াজের খুচরা মূল্য (আমদানিকৃত) ১২০ টাকা এবং দেশি ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে আমদানিকৃত পেঁয়াজে ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং দেশির ক্ষেত্রে ২৭ দশমিক ২৭ শতাংশ মূল্য বেড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী শুল্ক প্রত্যাহারের পর দাম কমার কথা থাকলেও দেখা গেছে সেটি আরও বেড়েছে।

এ অবস্থায় পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আবারও আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমছে এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজের বাড়তি দামের কারণে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ছে। এছাড়া কৃষকের ঘরে পেঁয়াজের মজুত এখন শেষের দিকে। অন্যদিকে অতিবৃষ্টির কারণে মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষাবাদ ব্যাহত হয়। চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৬-২৭ লাখ মেট্রিক টন। স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে এ চাহিদার ৭৫-৮০ শতাংশ পূরণ সম্ভব হয়। বাকিটা পূরণ করতে হয় আমদানির মাধ্যমে। এ পণ্যের আমদানির অন্যতম উৎস হচ্ছে ভারত। কিন্তু সেখানে উৎপাদন কম হওয়ায় পেঁয়াজ রপ্তানি নিরুৎসাহিত করেছিল। সম্প্রতি ভারত পণ্যটি রপ্তানির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করলেও এখনো ২০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক বহাল আছে। ফলে বেশি দামে পেঁয়াজ আমদানির কারণে দেশেও পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এ অবস্থায় চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি নিরসন ও পেঁয়াজের ঊর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আমদানিকৃত পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ানো ও আমদানি ব্যয় কমানো প্রয়োজন।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের’ ৩০ অক্টোবর আন্তর্জাতিক বাজারের তথ্যমতে, এক কেজি পেঁয়াজের মূল্য ৬২ টাকা এবং এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬০ টাকা। বিশ্ববাজারেও মূল্য এক ধরনের ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতি দেখা গেছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে একই সময়ে দেশের বাজারে এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৪০ টাকা এবং এক সপ্তাহে আগে ছিল ১২২ টাকা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার রাজস্ব লোকসান দিয়ে বিভিন্ন পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করছে। এটি সুফল আনবে যখন ভোক্তা কম মূল্যে এসব পণ্য কিনতে পারবে। সেটি নিশ্চিত করতে শুল্ক হার তুলে নেওয়ার পর বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে কিনা মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে জানান, শুল্ক হ্রাস করা হচ্ছে মূল্য কমানোর কয়েকটি পদক্ষেপের মধ্যে একটি। সঙ্গে কঠোর বাজার মনিটরিং করতে হবে। না হলে এ সুবিধা চলে যাবে আমদানিকারকদের পকেটে।

এদিকে গত অক্টোবরে মূল্য কমাতে চিনির ওপর ৩০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ এবং ভোজ্যতেলের শুল্ক হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। শুল্ক প্রত্যাহারের আগে বাজারে এক কেজি চিনি বিক্রি হয় ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। শুল্ক তুলে নেওয়ার পরও কোনো মূল্য না কমে মঙ্গলবার একই দামে বিক্রি হয়েছে চিনি। এছাড়া শুল্ক তুলে নেওয়ার আগে এক লিটার সয়াবিন ১৬৫-১৭০ টাকা এবং এক লিটার পাম অয়েল ১৪৫-১৪৬ টাকায় বিক্রি হয়। অক্টোবরে ৫ শতাংশ শুল্ক তুলে নেওয়ার পর মঙ্গলবার বাজারে উলটো পাম অয়েল বেশি দামে বিক্রি হয়। প্রতি লিটার পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ১৫৪-১৫৫ টাকা এবং সয়াবিন ১৬২-১৬৩ টাকা।

ঘটনাপ্রবাহ: বাজার দর


আরও পড়ুন

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম