আধুনিক ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বিদ্যমান কোম্পানি আইনটি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এছাড়া আইনটিতে জটিলতা রয়েছে, যা কোম্পানি গঠন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্তরায়। তাই নতুন কোম্পানি আইন প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি। আইন প্রণয়নে যত দেরি হবে, বাংলাদেশ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আর্কষণে ততই পিছিয়ে পড়বে।
শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর সংস্কার’ বিষয়ক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তারের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম।
স্বাগত বক্তব্যে সামীর সাত্তার বলেন, দেশে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি করপোরেট খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কোম্পানি আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বর্তমানে আইনটি পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলা ও বেসরকারি খাতের সক্ষমতা বাড়াতে যথেষ্ট নয়। তাই ব্যবসায়ী সমাজের আস্থা বৃদ্ধি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কোম্পানি আইনের সংস্কার এবং বাস্তবায়ন সময়ের দাবি।
মূল প্রবন্ধে ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, বর্তমান আইনে কোম্পানি বিলুপ্তির প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ ও ব্যয়সাপেক্ষ। তাই নতুন আইনে বিষয়টি সহজ করতে প্রয়োজনীয় সংশোধন প্রয়োজন। এছাড়াও খসড়া আইনে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর), ‘মধ্যস্থতা’কে বাধ্যতামূলক করা এবং পাবলিক লিস্টেড কোম্পানি নয়- এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে আরও স্বচ্ছতা আনতে ‘স্বতন্ত্র পরিচালক’ বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান তিনি।
রাশনা ইমাম আরও বলেন, কোম্পানি আইনে ‘মার্জার’ এবং ‘অ্যাকুইজেশন’কে অন্তর্ভুক্তির বিকল্প নেই। এছাড়া সব কোম্পানির ক্ষেত্রে ‘কোম্পানি সচিব’ নিয়োগ, কাজের পরিধি নির্ণয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা একান্ত অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আইন মন্ত্রণালয় খসড়া কোম্পানি আইনের ওপর বেশকিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সেগুলো নিয়ে কাজ করছে। কোম্পানি আইনে বেশি মাত্রায় ক্ষমতা আরোপ ও শাস্তি দেওয়ার বিধান না থাকা ভালো। কারণ এতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তিনি আরও বলেন, আরজেএসসি’র কার্যক্রমে আরও অটোমেশন আনয়নে বর্তমানে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন কার্যক্রম সম্পন্ন হলে সেবা প্রাপ্তির লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন করে আরজেএসসি’র শাখা অফিস স্থাপনের প্রয়োজন হবে না বলে মনে করেন তিনি।
সেমিনারে নির্ধারিত আলোচনায় অংশ নেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সভাপতি আব্দুর রহমান খান, জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসিস)-এর রেজিস্ট্রার (যুগ্ম সচিব) আব্দুস সামাদ আল আজাদ, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) বাংলাদেশ’র কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হল্টম্যান, দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)-এর সাবেক সভাপতি শাহাদত হোসেন, ইউনিলিভার বাংলাদেশ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার প্রমুখ।
মার্টিন হল্টম্যান বলেন, আধুনিক আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে বিদ্যমান কোম্পানি আইনটি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ঝুঁকি হ্রাস, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের অনানুষ্ঠানিক খাতের ভূমিকাকে কাঠামোবদ্ধ করার জন্য একটি যুগোপযোগী কোম্পানি আইন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের সংস্কার সম্ভব হলে দেশের বেসরকারি খাতের আত্মবিশ্বাস বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।