দেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এবিএম আবদুল্লাহ ব্লাডপ্রেসারে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। তার সেই আলোচনার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
আমার দুই একজন রোগী আছেন, যাদের অতিরিক্ত ব্লাডপ্রেসার; কিন্তু ওনাদের ওষুধ দিলে খাবেন না। তারা বিখ্যাত লোক, নাম বলতে চাই না। নাম বললে সবাই চিনবেন। তারা ওষুধ খেতে আগ্রহী না।
তারা আমাকে বলেন- ‘আমি ওষুধ খাই না। তবে একটা জিনিস খাই, যেটা খেলে আমি ভালো হয়ে যাই। জিনিসটা হলো প্রতিদিন হাইকোর্টের মাজারে গিয়ে দুই টান মারি।’ কী টান, মারেন তাতো সবাই বুঝেন! টান মারলেই নাকি উনি খুব ভালো থাকেন। প্রেসার ভালো, ঘুম সুন্দর হয়। কোনো দুশ্চিন্তা থাকে না। এভাবেই তার বছরের পর বছর কাটছে। উনি অবশ্য এখন আর বেঁচে নেই। ওনার বদনাম করার জন্য বলছি না। একটা ধারণা নেওয়ার জন্য বলছি।
পাঁচ মিনিটের ব্যায়ামে ঠিক হতে পারে রক্তচাপ
আপনারা জানেন না, হাইকোর্টের মাজারে আগে নুরা পাগলা নামে একজন থাকত। সে মনে হয় এখন আর বেঁচে নেই। সে আবার পাগলার মুরিদ ছিল। তার ধারণা ছিল রক্তচাপ হলে ওষুধ লাগবে না। দুই টান খাইলেই চলবে!
আরেকজন অবশ্য বেঁচে আছেন। ওনারও হাইপ্রেসার। ওষুধ খাবেন না। সেও বিখ্যাত লোক। তাকে যদি বলি ওষুধ খান। সে একটা ভালো জিনিস খায়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও পড়ে। রাতে এশার নামাজ শেষে, বেশি খায় না। শুধু এক বোতল হুইস্কি খায়। এটা খেলে নাকি ওনার ঘুম ভালো হয়। টেনশন থাকে না। তার প্রেসার ভালো থাকে। সে বলছে- ‘এক বোতল হুইস্কি খাইলে তার সব ঠিক।’ এটাই নাকি তার ব্লাডপ্রেসারের সবচেয়ে ভালো ওষুধ।
আমি তাকে বললাম, এটাতো খাওয়া ঠিক হবে না। ধর্মীয় দিক থেকে হারাম। উনি বললেন, ‘হারাম-টারাম বুঝিনা ভাই। আমি ওষুধ হিসেবে খাই।’ উনি হয়তো নিজের মতো করে একটা ফতুয়া বানিয়ে নিয়েছেন। দেখলাম ওনার সঙ্গে আর্গুমেন্ট করে কোনো লাভ নেই। উনি এখনো বেঁচে আছেন। এভাবেই ওনার দিনকাল চলছে। ওনার সঙ্গে দীর্ঘদিন আমার যোগাযোগ নেই।
এ কথাগুলো বললাম এজন্য যে, মানুষের কিছু ভুল ধারণা আছে। এমন কিছু উদারহরণও আছে। যেমন ধরেন- ব্লাডপ্রেসার হলে অনেকে পানিতে গুলিয়ে তেঁতুল খান। আমার চেম্বারে অনেকে এসে এমন কথা বলেন। আমি তখন তাদের বলি এত ওষুধপত্র ফার্মেসির কী দরকার, আপনারা সকলে তেঁতুলের গাছ লাগান, প্রেসার হলে তেঁতুল খান! এই যে একটা ভুল ধারণা, তেঁতুল খাইলে বা তেঁতুলের রস খাইলে সে ভালো হয়ে যাবে। এ ধরনের অনেক ভুল বোঝাবুঝি আমাদের মধ্যে রয়ে গেছে। এগুলোর কোনো অবকাশ নেই।
এই রোগটা (ব্লাডপ্রেসার) আল্লাহ দিয়েছেন, এই রোগ হলে ভালো হবে না এমন কোনো কথা নেই! এটা কিউরেবল না, তবে কন্ট্রোলঅ্যাবল। আর কন্ট্রোল না করলে আপনার শরীরের ৪টি ভাইটাল জিনিস নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ব্রেন নষ্ট হতে পারে, হার্ড নষ্ট হতে পারে। কিডনি নষ্ট হতে পারে, চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কোনো একটা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় তখন ভালো করা কঠিন হয়ে যাবে। সেজন্যই ব্লাডপ্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এবং নিয়ন্ত্রণ যোগ্য। সেজন্য অনেক মেডিসিন আছে। এগুলো ওষুধ ছাড়া কন্ট্রোল করা কঠিন। সব সময় যে ওষুধ খেতে হবে তাও না।
আপনার ওষুধ ছাড়াও কিন্তু সমস্যার সমাধাণ করা সম্ভব। সেটা আপনাকে ডাক্তার বলবে- ওজন কমানো, লবণ কম খাওয়া, টেনশন না করা। এগুলো কন্ট্রোল করলে ওষুধ ছাড়াও কন্ট্রোল হতে পারে। এটা আমাদের বুঝতে হবে। আমরা যারা ডাক্তার আমাদেরও রোগীদের বুঝাতে হবে। আমরা হয়তো রোগীকে সেভাবে সময় দেই না, বুঝাতে চাই না।