অতিরিক্ত ওজন কমাবেন কীভাবে
নাজিয়া আফরিন
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
শরীরের ওজন বেড়ে গেলে নানা ধরনের রোগব্যাধি হতে পারে, তাই সঠিক ওজন বজায় রাখা জরুরি। যদি কোনো ব্যক্তি ওজন কমাতে চায়, তাহলে তার ডায়েটের ধরন হবে নরম বা তরল, উচ্চ প্রোটিন, কম শর্করা এবং কম চর্বিযুক্ত।
* নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়াম
ওজন কমানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হলো হাঁটা। টানা ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট হাঁটলে রক্তে চলমান চর্বি নিঃশেষ হয়। তারপর শরীরে সঞ্চিত চর্বি খরচ হতে থাকে। ভারি ব্যায়ামের বিকল্প হিসাবে হাঁটাকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাই বাড়ি ফেরার জন্য যানবাহন ব্যবহার না করে হাঁটা উচিত। এছাড়া অফিস কিংবা বাড়িতে লিফটে না উঠে সিঁড়ি ব্যবহার করতে হবে। দ্রুত ওজন কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি উপায় হচ্ছে ব্যায়াম। ব্যায়াম শরীরকে যেমন ফিট রাখে, ঠিক তেমনি ওজন কমাতেও সাহায্য করে। হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা ও সাইকেল চালানো আদর্শ ব্যায়াম।
* সুষম খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা
খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, শাকসবজি, ফলমূল এবং হোল গ্রেইন যোগ করতে হবে। প্রোটিন ওজন কমানোর ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এটি ক্ষুধা কমায় এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরাট রাখতে সহায়তা করে। প্রোটিনের ভালো উৎস হতে পারে মুরগির মাংস, ডিম, মাছ, ডাল, ছোলা ইত্যাদি।
* ডিটক্স ওয়াটার
একটি শসা, এক ইঞ্চি আদা ও খোসা ছাড়ানো অর্ধেক লেবু এক মগ পানিতে ব্লেন্ড করে নিয়ে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এ ডিটক্স ওয়াটার খেতে হবে। এছাড়া কালিজিরা, জিরা, মেথি, জৈন, চিয়াসিড (প্রতিটি এক চা চামচ করে) একমগ পানিতে আগের রাতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সে পানি সিদ্ধ করে লেবু দিয়ে খালি পেটে পান করতে হবে। এছাড়া সবুজ চা পান করুন। এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা মেটাবলিজম বাড়ায় এবং ফ্যাট বার্ন করতে সহায়ক।
* পর্যাপ্ত পানি পান করা
প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে পানি পান করলে ক্ষুধা কমে যায় এবং অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ বন্ধ হয়।
* নিয়মিত ঘুম
নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। ঘুমের অভাবে মেটাবলিজম কমে যায় ও ক্ষুধা বৃদ্ধির হরমোন বেড়ে যায় যা বেশি খাওয়ার প্রবণতা তৈরি করে।
* চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় পরিহার করা
কোমল পানীয়, মিষ্টি, ক্যান্ডি ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। এগুলো উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত এবং শরীরের চর্বি জমার হার বাড়িয়ে দেয়।
* হোল গ্রেইন খাবার গ্রহণ
ব্রাউন রাইস, ওটমিল, এবং সম্পূর্ণ গমের রুটি ওজন কমাতে সহায়ক। এগুলোতে ফাইবার থাকে যা হজম প্রক্রিয়া ধীর করে এবং ক্ষুধা কম লাগে।
* স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট
স্ট্রেস ওজন বাড়ার একটি অন্যতম কারণ স্ট্রেস। এ থেকে মুক্তি পেতে ধ্যান, যোগ ব্যায়াম, নামাজ এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা উচিত।
* খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ
খাওয়ার সময় ছোট প্লেট ব্যবহার, খাবার খাওয়ার সময় মনোযোগ দিয়ে খাওয়া, যাতে খাবারের স্বাদ পুরোপুরি উপভোগ করা যায় এবং এতে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
* স্বাস্থ্যকর নাশতা গ্রহণ
নাশতা খাওয়ার সময় স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন-বাদাম, ফল এবং দই বেছে নেওয়া। এগুলো কম ক্যালরি যুক্ত এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ।
* বাইরের খাবার বর্জন
বাইরের খাবার যেমন-ভাজাপোড়া ও ফাস্টফুডের পরিবর্তে খাদ্যতালিকায় নিয়মিত দুধ, ডিম ও কলা রাখা।
মনে রাখতে হবে-নারী-পুরুষ ভেদে, বিএমআই, শরীরের ওজন, বয়স, উচ্চতা অনুযায়ী প্রতিবার খাবারের পরিমাণ, ধরন ও সময় অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
লেখক : স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ, নারী মৈত্রী।