বয়ঃসন্ধিকালের পুষ্টিকর খাবার
নাজিয়া আফরিন
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বয়ঃসন্ধিকালের পুষ্টিকর খাবার
কিশোরকালীন ছেলেমেয়েদের পুষ্টির প্রয়োজন খুব বেশি। এ সময়ে তারা হঠাৎ বেড়ে ওঠে এবং তাদের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বৃদ্ধি পায়। সেজন্য তাদের প্রতিদিনই যথাযথ পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি। ৬টি খাদ্য উপাদানসমৃদ্ধ খাদ্যের প্রয়োজনীয় পরিমাণের সমাহারকে সুষম খাদ্য বলে। বয়সভেদে এ ‘প্রয়োজনীয় পরিমাণের’ তারতম্য হতে পারে। যেমন-১৩/১৪ বছর বয়সের কোনো কিশোর বা কিশোরীর পুষ্টির প্রয়োজন একটি ৮-৯ বছরের শিশুর চেয়ে বেশি। একই বয়সের মেয়ে শিশু ও ছেলে শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীর পুষ্টির প্রয়োজনে কোনো তারতম্য নেই। কিন্তু দৈহিকগঠন ও কাজের ধরনভেদে পুষ্টির প্রয়োজনীয়তার তারতম্য হয়। কারণ খাদ্যের ৬টি উপাদানের প্রতিটিই বয়ঃসন্ধিকালের ছেলেমেয়েদের দৈহিক বৃদ্ধি ও সুস্থতার জন্য খুব প্রয়োজন। এগুলো দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায়। অন্যথায় যথাযথ পুষ্টির অভাবে দৈহিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়।
বয়ঃসন্ধিকালে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে ছেলেমেয়েরা নানা রোগে আক্রান্ত হয়। এ সময়টায় হরমোনের কারণে দেহে পরিবর্তন আসে বলে কারও ওজন কমে যায় বা বেড়ে যায়। কারও রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়, কারও চেহারায় কমনীয়তা কমে যায়। কারও মেজাজ রুক্ষ হয়ে যায়। এ জন্য তাদের খাবারে থাকতে হবে কলিজা, ডিম, বাদাম, খেজুর, কিশমিশ, কচুশাক, ছোট মাছ, বেদানা, সফেদা, পেয়ারা, আপেল, আমলকী, লিচু ইত্যাদি। যেগুলো রক্তস্বল্পতা রোধ করবে। দেহের বৃদ্ধি ও হাড় মজবুতের জন্য ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। এজন্য খেতে হবে দুধ, দুধজাতীয় খাবার, দই, পনির, সমুদ্রের মাছ, সবজি, ডিম, পোস্তদানা, সয়াবিন, মাখন, ঘি, মাছ ইত্যাদি। ভিটামিন সি-এর জন্য পেয়ারা, আমলকী, আমড়া, জাম্বুরা, কমলা, মাল্টা, লেবু খেতে হবে। প্রতিদিন এক গ্লাস লেবুর শরবত পান করা খুবই উপকারী। জিংক ও ফলিক অ্যাসিডের জন্য খেতে হবে সমুদ্রের মাছ, গরুর মাংস, ব্রকলি, লেটুসপাতা, পানি, ডাল, পাতাজাতীয় সবজি ইত্যাদি।
কিশোর-কিশোরীদের পুষ্টি ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তা জানার জন্য মাঝেমধ্যে তাদের ওজন উচ্চতা মাপতে হবে। তারা ক্লান্ত, অবসাদগ্রস্ত ও পড়াশোনায় অমনোযোগী হলে বুঝতে হবে, তাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনের অভাব হচ্ছে। ওজন কমানোর জন্য কখনই তাদের ডায়েট করা উচিত নয়। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়াসহ নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেবে। সুষম ও পরিমিত খাবার এবং ব্যায়ামই পারে ওজন আদর্শ ও পরিমাপে রাখতে।
লেখক : স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ, নারী মৈত্র।