এই গরমে স্বস্তি পেতে হলে আমরা পুষ্টিবিদরা সাধারণত অতিরিক্ত ঝাল তেল মসলাযুক্ত খাবার না খেয়ে অল্প মসলাযুক্ত কিংবা অল্প তেলে বা ঝোল জাতীয় খাবার খেতে বলে থাকি।
তীব্র গরমের সময় আমাদের অতিরিক্ত ঘাম হয় এবং এর ফলে আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়। ডিহাইড্রেট হতে পারে মনে হলে অর্থাৎ শরীর পানি শূন্য হয়ে গেলে নানান ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
তাই এই গরমের সময় শরীর যাতে পানি শূন্য না হয়ে যায়, সেজন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যেন অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া কিংবা ভুনা জাতীয় তরকারি না খেয়ে, একটু পাতলা ঝোল বা পানি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া দরকার।
এই সময়ে পানীয় জাতীয় যে সমস্ত সবজি আছে, যেমন- লাউ, কাঁচা পেঁপে, ঝিঙা, চাল কুমড়া, চিচিঙ্গা, পটল, শশা। গরম কালে সুস্থ থাকতে চাইলে এই জাতীয় সবজির তরকারির বিকল্প হতেই পারে না।
আজ বলব ঝিঙার পুষ্টিগুণ নিয়ে কিছু কথা:
১) তীব্র গরমে শরীরকে পানি শূন্যতা থেকে রক্ষা করতে ঝিঙা হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ সবজি। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি বা জলীয় অংশ। প্রচুর পরিমাণে জলীয় অংশ থাকার কারণে গরমকালে ঝিঙার তরকারি বা ঝিঙা দিয়ে কোনো রেসিপি করে খেলে, শরীরে পানিশূন্যতা দূর করা যাবে খুব সহজে।
২) ঝিঙাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ লবণ থাকার কারণে এটি মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে এই গরম সময়ও অতিরিক্ত সর্দি, ঠাণ্ডা, কাশি কিংবা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো শারীরিক সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৩) ঝিঙা মানুষের দেহে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ঝিঙা এমন একটি সবজি, যার বেশিরভাগ অংশই পানি। বাকি অংশটুকুতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং মিনারেল। শর্করা কিংবা ক্যালরি এতে না-ই বলা চলে। যার ফলে এই গরমের সময় যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, বা যাদের ব্লাড সুগার বেশি, তারা যদি প্রতিদিন ঝিঙার তরকারি, ঝিঙা ও মাছ দিয়ে ঝোল করে খেতে পারেন কিংবা ঝিঙা ভাজি করে খেতে পারেন, সেক্ষেত্রে কিন্তু ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বিন্দুমাত্র নেই।
৪) ঝিঙাতে উচ্চমাত্রায় ফাইবার থাকায় হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এই সবজি গ্রহণের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর হয় অনায়াসে।
৫) ঝিঙা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এই সবজিতে ক্যালোরির পরিমাণ কম এবং ফাইবার বেশি থাকায় ওজন নিয়ন্ত্রণে যারা ডায়েট করছেন বা যারা ওজন কমাতে চাচ্ছেন, প্রতিদিন ঝিঙার তরকারি খেতে পারেন অনায়াসে।
৬) ঝিঙাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম, যা হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
৭) ঝিঙা এবং এই জাতীয় সবজি রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাই যারা হৃদরোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন কিংবা যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, তারা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ঝিঙার তরকারি কিংবা নানান রেসিপি রাখতে পারেন।
৮) যেহেতু ঝিঙাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ লবণ থাকে, যা আমাদের ত্বকের যত্ন নিতে সাহায্য করে। তেমনি এই সবজিটি চুলের গোড়া শক্ত করে, ত্বকে সহজে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। অর্থাৎ ফ্রি রেডিকেলস থেকে আমাদের ত্বককে মুক্ত রাখতে সাহায্য করে এই পানি জাতীয় সবজিটি।
৯) ঝিঙাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন। তাই এই সবজি খেলে আমাদের দৃষ্টি শক্তি সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
১০) আজকাল বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই সবজিটি ক্যান্সার প্রতিরোধেও যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে।
এছাড়াও এসব পানীয় জাতীয় সবজিতে রয়েছে আরও নানান ধরনের জানা-অজানা পুষ্টিগুণ। তাই এই গরমে তুষ্টি পেতে হলে বা গরমে সুস্থ থাকতে চাইলে প্রয়োজন ঝিঙা এবং ঝিঙ্গা জাতীয় অন্য সব পানীয় জাতীয় সবজির বিভিন্ন ধরনের রেসিপি দৈনিক খাদ্য তালিকায় রাখা।
লেখক: পুষ্টিবিদ, ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট অ্যান্ড ডায়েটিশিয়ান, উত্তরা ক্রিসেন্ট হসপিটাল, উত্তরা, ঢাকা।