Logo
Logo
×

ডাক্তার আছেন

পাত্র 'বৃটিশ সিটিজেন' শুনলেই যারা মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে যান!

Icon

ডা. সাঈদ এনাম 

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:০৭ পিএম

পাত্র 'বৃটিশ সিটিজেন' শুনলেই যারা মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে যান!

সুচনা (ছদ্মনাম) একজন এসেছেন ডিপ্রেশন  নিয়ে। বেশ কদিন ধরে সব সময় তার মন খুব খারাপ থাকে। তিনি কোন কিছুতেই আর আনন্দ বা আগ্রহ বোধ করেন না। নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বেঁচে থাকতে তার আর ইচ্ছে হয় না। তার ডিপ্রেশনের কারণ হিসেবে যা বোঝা গেল তিনি স্বামীর চরম নির্যাতন ও নিগ্রহের শিকার। তার স্বামী একজন 'স্যাক্সুয়াল সেডিজম ডিসওর্ডার' এর পেশেন্ট। 

সুচনার স্বামী যে মানসিক রোগ 'স্যাক্সুয়াল স্যাডিসম ডিসওর্ডার' এটি তিনি আজই প্রথম জানলেন। রোগটা কী এ সম্পর্কে তিনি সম্যক ধারণাও পেলেন। 

‘সেক্সুয়াল সেডিজম ডিসওর্ডার’ রোগী 'স্যাক্সুয়াল' একটিভিটির পূর্বে তার বেড পার্টনারকে বেধড়ক পেটাতে থাকে, গালি গালাজ করতে থাকে, সেই সঙ্গে চলে তাকে নিয়ে নানান অপমানসূচক কথাবার্তা এবং সন্দেহমূলক অসভ্য কথাবার্তা। এতে রোগী সেক্সুয়াল আনন্দ পান। এটা একটা পৈশাচিক মূহুর্ত।

যাহোক, সুচনা বিগত ১৭ বছর এসব সহ্য করতে করতে এখন আর পারছেন না। এখন তিনি এতোটাই হতাশাগ্রস্ত এবং বিরক্ত ও যে তিনি স্বামীকে এবার তালাক দেবেনই। আর পারছেন না, বরং একাই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবেন। মাঝেমধ্যে তিনি ভাবেন সুইসাইড করতে। তার যাবার জায়গা নেই। 

স্যাডিস্ট লোকটা তাকে বিয়ে করেছে অনেকটা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে। লন্ডন থেকে প্রথমে সে সুচনাকে রং নাম্বার হিসেবে ফোন দেয়। সুন্দর সুন্দর কথা বলে রঙিন স্বপ্ন দেখায়। কলেজ পড়ুয়া সুচনা ফাঁদ বোঝে না। অবশেষে পালিয়েই বিয়ে করে। যার ফলে পরিবার থেকে বিচ্যুত। তাই তার ফিরে যাবার পথ ছিল না।

তার বিয়ের ১৭ বছর চলছে। সন্তান আছে একটি। সন্তানকে ইংল্যান্ড নিয়ে গেছে স্যাডিস্ট বাবা। 'স্যাডিস্ট' সন্তান কে নিয়েছে কিন্তু 'স্ত্রী' কে নেয়নি, এবং সে নিতে চায়ও না। কারণ স্যাডিস্টটা প্রায়ই বলে, ‘তোকে ইংল্যান্ড নিলে তুই আমাকে ছেড়ে চলে যাবি, আমার নামে বদনাম করবি’।

সুচনা (ছদ্মনাম)  জানালেন তার গায়ে এমন কোন জায়গা নেই যে মারা বা কাটার  দাগ নেই। আর অপমান সূচক কথাবার্তা গুলো এতোটাই নীচ প্রকৃতির যে তিনি উচ্চারণই করতে পারলেন না, কেবল কাঁদতে থাকলেন। 

ভদ্র মহিলার সঙ্গে আলাপে আরো বোঝা গেল সেই স্যাডিস্ট লোকটা আবার ইরেকটাইল ডিসফাংশন যেমন আছে তেমনি আছে তার প্রিম্যাচ্যুর ইজাকুলেশন। মারামারি ও গালিগালাজের সময়ই তার অর্গাজম হয়ে যায়। অর্গাজম হলে সে তাৎক্ষণিক কিছুটা নরম মেজাজের  হতে থাকে। নির্যাতন বন্ধ করে। তবে তার ভয়ানক আচরণ নিয়ে কখনোই সে অনুতপ্ত হয় না। রাত হলে আবার শুরু হয় একই কায়দায় পৈশাচিক নির্যাতন। 

এখানে একটা কথা বলে রাখি সেক্সুয়াল সেডিজম ডিসঅর্ডার রোগের সঙ্গে অনেক সময় এন্টি সোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারও থাকে। এতে ঘটে যায় মারাত্মক দুর্ঘটনা ও হত্যাকাণ্ড। এ এক ভয়ানক পরিস্থিতি। 

এটা স্যাডিস্টের ২য় বিয়ে। তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন বাংলাদেশ বংশদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক। তিনি ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছেন বিয়ের এক বছরের মাথায়ই।  
 
আর সুচনা দ্বিতীয় বউ। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবারের সহজ সরল পরিবারের অল্প বয়সি মেধাবী ও পরমা সুন্দরী কলেজ ছাত্রী। । 

তিনি ১৭ বছর মুখ বুজে সব সহ্য করেছিলেন। একটি আশায়, হয়তো লোকটা ভালো হয়ে যাবে অথবা তিনি লন্ডন গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সে স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যায়। তার আর লন্ডন যাওয়া হয়নি। এখন নাকি সেই স্যাডিস্ট আবারো তার নাম পরিচয় গোপন করে বিভিন্ন কলেজ পড়ুয়া কম বয়সি নিম্নবিত্ত মেয়েদের মোবাইল ফোনে ফোন করে প্রেমের অভিনয় করে।

সুচনার বলতে কেউ নেই। ডিপ্রেশনের চিকিৎসা করাতে এসে এবারই প্রথম সব তার জীবনের মর্মান্তিক কাহিনী বললেন একজন সাইকিয়াট্রিস্টকে। এর আগে তিনি মাঝেমধ্যে  ফ্লুপেনটিক্সল ম্যালিট্রাসিন নামক ওষুধ সেবন করতেন। তবে দীর্ঘদিন এটা সেবনে অনেক সময় সুইসাইডল থিংক চলে আসে। যেটা তার হয়েছে।

উল্লেখ্য যে স্যাক্সুয়াল সেডিজম ডিসঅর্ডার রোগে ভোগা তার স্বামী বাংলাদেশ বংশদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক। প্রতিবছর নভেম্বর ডিসেম্বর এ সে দেশে আসে। এবার আসবে, কিন্তু সুচনা এবার ডিভোর্স দেবে।

সেক্সুয়াল সেডিজম ডিসঅর্ডার সাইকোথেরাপি, কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি এবং এন্টিডিপ্রেসেন্ট বা অনেক ক্ষেত্রে এন্টিসাইকোটিক দিয়ে অত্যন্ত সফলভাবে চিকিৎসা করা যায়।

সুচনা তার স্বামীর চিকিৎসা করাতে চান না। তার জীবন শেষ হয়ে গেছে আঘাতে আঘাতে, অপমানে, অপদস্তে। লোকটার ভয়ংকর চেহারা তার চোখে ভাসলেই সে ভয়ে কাঁপতে থাকে।

লেখক: ডা. সাঈদ এনাম 
এমবিবিএস ডিএমসি, কে-৫২, 
বিসিএস -২৪
সহকারী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি। 
সিলেট মেডিকেল কলেজ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম