মানুষের শরীরে স্বাভাবিক রক্তচাপ থাকে। তবে সিস্টোলিক ব্লাড প্রেশার ১৪০ মি.মি মার্কারির উপরে এবং ডায়াস্টলিক ব্লাড প্রেশার ৯০ মি.মি মার্কারি বেশি হলে, সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ বলে।
উচ্চ রক্তচাপের বেশ কিছু কারণ আছে। এর মধ্যে প্রাইমারি বা এসেন্সিয়াল হাইপারটেনশন একটি। তবে এ প্রাইমারি উচ্চ রক্তচাপ কি কারণে হয়, তা পুরোপুরি জানা যায় না। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে বিভিন্ন ভুল ধারণা। যেমন-
১। রক্তচাপ বাড়লে ঘাড়ব্যথা হয়: ঘাড়ে ব্যথা হলে কেউ কেউ মনে করেন, নিশ্চয়ই রক্তচাপ বেড়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রক্তচাপ বৃদ্ধির কোনো উপসর্গ বোঝা যায় না। সাধারণত হাড়ের জোড়া বা সন্ধির সমস্যায় ঘাড়ব্যথা হয়ে থাকে।
২। রক্তচাপ বেশি থাকলে দুধ-ডিম নিষেধ। দুধ-ডিম-মাংস খেলে রক্তচাপ বাড়ে এ ধারণা ভুল। রক্তচাপ বাড়তি দেখলে কেউ কেউ দুধ-ডিম খাওয়া ছেড়ে দেন। আসলে ঝুঁকি এড়াতে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিকে তেল-চর্বিযুক্ত খাবার (দুধের সর, চর্বিযুক্ত মাংস ইত্যাদি) ও লবণ খেতে নিষেধ করা হয়।
৩। টক খেলে রক্তচাপ কমে- এই ধারণাও ভুল। রক্তচাপের পরিমাণ বেশি দেখলে কেউ কেউ তেঁতুলের পানি বা টক খান। লবণ মিশিয়ে এসব খেলে রক্তচাপ আরও বাড়তে পারে।
৪। লবণ ভেজে খাওযা যাবে। উচ্চ রক্তচাপের জন্য কাঁচালবণ খেতে নিষেধ করায় অনেকে লবণ হালকা ভেজে খান বা রান্নায় লবণের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। লবণ যেভাবেই খান না কেন, তা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেবেই।
৫। রক্তচাপ কমে গেলে ওষুধ নয়। উচ্চ রক্তচাপের অনেক রোগী রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকলে ওষুধ সেবন বন্ধ করে দেন, যা একেবারেই ঠিক নয়। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ হঠাৎ বন্ধ করলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, এমনকি জীবনের ঝুঁকিও থাকে।
৬। সমস্যা নেই ওষুধ নেই- রক্তচাপ বাড়তি থাকলেও শরীরে কোনো সমস্যা হচ্ছে না, এমন অজুহাতে কেউ কেউ ওষুধ খাওয়া বন্ধ করতে চান। আসলে উচ্চ রক্তচাপে তেমন কোনো উপসর্গ না থাকলেও এটি ধীরে ধীরে হৃদরোগ, পক্ষাঘাত, দৃষ্টিহীনতা ও কিডনি অকার্যকারিতার ঝুঁকি বাড়াবে। দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা এড়াতেই আপনাকে ওষুধ দেওয়া হয়। অনেকে বলেন, এ ওষুধ শুরু করলে সারা জীবন খেতে হবে, তাই শুরু না করাই ভালো। এটাও বিপজ্জনক চিন্তা।
৭। রক্তচাপ বৃদ্ধির কারণ টেনশন- মানসিক চাপ, উদ্বেগ ইত্যাদি কিছুটা দায়ী বটে। তবে শুধু মানসিক উৎকণ্ঠা উচ্চ রক্তচাপের একমাত্র কারণ নয়। অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন, ওজানাধিক্য, ধূমপান, মদ্যপান, তেল-চর্বি জাতীয় খাবার, অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ প্রভৃতি উচ্চ রক্তচাপের প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। জীবনাচরণ পরিবর্তণ করে রক্তচাপ বাড়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমাতে পারবেন।
৮। অন্যের ওষুধে ভালো কাজ হয়- উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে আপনার বয়স, উচ্চ রক্তচাপের তীব্রতা, আনুষঙ্গিক অন্য রোগ (যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, হার্টঅ্যাটাকের ইতিহাস, হাঁপানি, প্রোস্টেটের সমস্যা, গর্ভাবস্থা ইত্যাদি) অনেক বিষয় বিবেচনা করেই রক্তচাপ কমানোর ওষুধ দেওয়া হয়। কোনো ওষুধ কারও জন্য প্রয়োজনীয়, আবার একই ওষুধ অন্য কারও জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাই যে ওষুধে অন্যের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এসেছে, সেটা আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়ার চিন্তা করা ঠিক নয়।
লেখক: অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা