Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার আধুনিক পদ্ধতি প্রিসিসন মেডিসিন

Icon

সরকার এম শাহীন

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার আধুনিক পদ্ধতি প্রিসিসন মেডিসিন

মানবদেহের বংশগতির বাহক জিন। জিন হলো মানবদেহের কোষে অবস্থিত ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড বা ডিএনএর সমন্বয়ে গঠিত উপাদান, যা বাবা-মায়ের মাধ্যমে সন্তানদের মাঝে প্রবাহিত হয় এবং পরে বংশ পরম্পরায় এ ধারা অক্ষুণ্ন রাখে, যেটা সৃষ্টি লগ্ন থেকেই চলে আসছে। জিন মানুষের নিজস্ব গতি, প্রকৃতি, শারীরিক গঠন, বেড়ে ওঠা, উচ্চতা, চোখের রং এমনকি রোগ-বালাইসহ যাবতীয় তথ্য বহনকারী উপাদান হিসাবে কাজ করে থাকে। মানবদেহে জিন প্রবাহের এ পদ্ধতি কিন্তু ১০০ ভাগ সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে না। পদ্ধতিগত এ ত্রুটিকে ডিএনএ ভ্যারিয়েসন/মিউটেশন বা পরিবর্তন বলা হয়। ডিএনএ মিউটেশনের এ হার ০.০১ শতাংশ এবং বাকি ৯৯.৯৯ শতাংশ থাকে অপরিবর্তিত। একজন মানুষের সঙ্গে অপর একজন মানুষের ডিএনএ-এর ০.০১ শতাংশ মিউটেশন বা পরিবর্তনের জন্যই এ জগতের প্রতিটি মানুষই আলাদা এবং সে তার একান্ত নিজস্ব ইউনিক বৈশিষ্ট্য বহন করে। এমনকি সেটা রোগের ধরন, গতি-প্রকৃতিসহ সব ক্ষেত্রেই। জিনের সমন্বয়ে কোনো ব্যক্তির সঠিক ওষুধ নিরূপণের প্রক্রিয়াকে প্রিসিসন মেডিসিন বা পার্সোনালাইজ মেডিসিন বলা হয়। এটি নির্ভুল চিকিৎসা এবং ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি এড়িয়ে চিকিৎসা প্রদানের অভিনব পদ্ধতি।

প্রিসিসন মেডিসিনের মূল লক্ষ্য হলো, বর্তমান প্রথাগত ওষুধ প্রদান প্রক্রিয়ার পরিবর্তে একজন ব্যক্তির নিজস্ব ইউনিক জেনেটিক মেকআপ, মলিকুলার প্রোফাইল এবং মানুষটির ব্যক্তিগত তথ্য বিবেচনা করে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা পরিকল্পনার অভিনব একটি পদ্ধতি। বর্তমান প্রথাগত প্রক্রিয়ায় ‘One-Size Fits all’ approach বা সবার জন্য একই নিয়ম পদ্ধতিটি প্রচলিত, যা সাধারণত ওষুধের নির্দেশিকা এবং অন্যান্য রোগীর চিকিৎসাতত্ত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত। রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে একজন মানুষের নিজস্ব জেনেটিক্স, বিপাক এবং অন্যান্য পার্থক্যের কারণে এ ট্রায়াল অ্যান্ড ইরর অ্যাপ্রোচ সবার জন্য কার্যকর নাও হতে পারে। প্রিসিসন মেডিসিনের মাধ্যমে একজন রোগী নির্ভুল (প্রিসিসন মেডিসিন) ওষুধের সুপারিশ, সঠিক মাত্রা, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ পরিহার, চিকিৎসা ব্যয় কমানসহ পার্শ্ব পতিক্রিয়ার ঝুঁকি এড়িয়ে একান্তই তার নিজস্ব চিকিৎসা নির্দেশিকা পেতে পারে-যে কারণেই পদ্ধতিটিকে প্রিসিসন বা পার্সোনালাইজড মেডিসিন বলা হয়। বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশেই প্রিসিসন মেডিসিন পদ্ধতিটি দারুণ সফল এবং অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে প্রসার লাভ করছে। বিশেষ করে জটিল রোগগুলো, যেমন- নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিস-অর্ডার; অটিজম, অ্যাংজাইটি, ক্যানসার এবং হৃদরোগের মতো রোগগুলোর প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং নির্দেশনায় পদ্ধতিটির ভূমিকা প্রসংসনিয়।

লেখক : গবেষক, নিউরোজেনেটিক্স রিসার্চ, ডিপার্টমেন্ট অব সাইকাইয়াট্রি অ্যান্ড মেডিকেল জেনেটিক্স, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালগেরি, কানাডা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম