
প্রিন্ট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৩৮ এএম
রোজাদারের প্রয়োজন সঠিক ডায়েট

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ
প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
রমজান মাস এলেই খাওয়া-দাওয়ার ধুম পড়ে। প্রতিদিনের খাবারের মেন্যুতে আসে ভিন্নতা, তার সঙ্গে সময়ের ব্যবধান তো রয়েছেই। অনেকেই মনে করেন, রোজায় ১৪-১৫ ঘণ্টা না খেয়ে থেকে স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে; তাই ইফতারে বেশি বেশি খাওয়া ভালো। রোজায় খাবারের বিরতি কম হওয়ায় প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাওয়া হয়ে যায়। আবার অনেকেই বলেন, রোজায় খাবারের হিসাব নেই। তাই রকমারি খাবারের আয়োজন বেড়ে যায়, যা স্বাস্থ্য উপযোগী নয়। তবে দৈনিক চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখেই খাদ্য নির্বাচন করা দরকার। বিভিন্ন দেশে ও সংস্কৃতি ভেদে রমজান মাসে সেহরি ও ইফতারের খাবারের ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে। অস্বাস্থ্যকর ইফতার ও সেহরি নানা রোগ-ব্যাধির ঝুঁকি বাড়ায়। দিনভর রোজা রেখে শরীরে যে শক্তি ও পুষ্টির চাহিদা থাকে, তা পূরণে সেহরি ও ইফতারের খাবার এমন খেতে হবে যেগুলোতে পর্যাপ্ত প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ থাকে।
* ইফতারে কী খাবেন
রমজান মাসে বিকাল থেকেই ইফতারের জন্য নানা খাবার তৈরি ও বিক্রির হিড়িক পড়ে। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে ছোলা, মুড়ি, পিঁয়াজি, বেগুনি, ডালবড়া, সবজিবড়া, আলুর চপ, খেজুর, হালিম, জালি কাবাব, জিলাপি, বুন্দিয়া ইত্যাদি। আরও রয়েছে বিভিন্ন ফল ও ফলের রস, আখের গুড়ের শরবত, নানা রং মিশ্রিত বাহারি শরবত। এ ছাড়া বিরিয়ানি ও তেহারি তো আছেই।
প্রশ্ন হলো-এসব মুখরোচক খাবার স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি করা হয়েছে কি না। ভেজাল তেল ও কৃত্রিম রং মেশানো হয়েছে কি না, সেদিকে নজর দেওয়া উচিত। যে তেলে ভাজা হয়, সেটা একবারের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ, একই তেল বারবার আগুনে পোড়ানো হলে কয়েক ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য তৈরি হয়, যেমন-পলি নিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বন, যার মধ্যে বেনজা পাইরিন নামে এমন পদার্থের মাত্রা বেশি থাকে যা ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। তা ছাড়া অপরিষ্কারভাবে ইফতারি তৈরি করলে পেটে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
সুস্থভাবে বাঁচার জন্য যত্রতত্র খোলা খাবার না খাওয়াই উচিত। খুব কম ফলই পাওয়া যাবে যা ভেজালমুক্ত। শরবতের কথা তো বলাই বাহুল্য। রাস্তা-ঘাটে, হাট-বাজারে রকমারি শরবত তৈরি করা হয়। এসব শরবত যে পানি দিয়ে বানান হয়, সে পানি বিশুদ্ধ কি না। তা ছাড়া ইফতারের জন্য তৈরি প্রায় সব খাবার তেলও উচ্চ চর্বিযুক্ত। সাধারণত এসব খাবার মানসম্মত তেলে এবং সঠিক নিয়মে ভাজা হয় না, তাই এসব স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
একজন রোজাদার ইফতারে কী খাবেন তা নির্ভর করবে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা ও বয়সের ওপর। দোকানের তৈরি ইফতার ও সেহরি না খাওয়াই ভালো। সুস্থ, স্বাস্থ্যবান রোজাদারের জন্য ইফতারে খেজুর, ঘরের তৈরি বিশুদ্ধ শরবত, কচি শসা, ঘরে বানানো পেঁয়াজু ও বুট, মৌসুমি ফল থাকা ভালো। ফলমূল খেলে ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং সহজে তা হজম হয়। রুচি অনুযায়ী বাসার রান্না করা নুডলসও খেতে পারেন। বেশি ভাজা-ভুনা, তেহারি, হালিম না খাওয়াই ভালো। কারণ এতে বদহজম হতে পারে। রুচি পরিবর্তনের জন্য দু-একটি জিলাপি খেতে পারেন। তা ছাড়া গ্রীষ্মকালীন রমজানে পরিমাণমতো বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। এশা ও তারাবির নামাজের পর অভ্যাস অনুযায়ী পরিমাণমতো ভাত, মাছ অথবা মুরগির মাংস, ডাল ও সবজি খাবেন। ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি ও পানিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিত।
* রাতের খাবার
এ সময়ের খাবার হালকা হতে হবে। ভাত বা রুটি সঙ্গে মুরগি, মাছ শাকসবজি পরিমাণমতো খাওয়া উচিত।
* সেহরিতে কী খাবেন
রোজার প্রধান খাবারই হচ্ছে সেহরি। সারা দিন অনাহারে থেকে রোজা পালন করতে হয় সেহরি খেয়েই। সেহরিতে সুষম পুষ্টিকর খাবার না হলে রোজা রাখা কষ্টদায়ক হতে পারে। ইফতারের মতো খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলো সেহরির খাবার, তবে খুব বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো। রমজানে স্বাভাবিক নিয়ম পরিবর্তন করে সুবহে সাদিকের আগে ঘুম থেকে উঠে খাওয়া-দাওয়া সেরে নিতে হয়। সকালের নাশতার পরিবর্তে খুব ভোরে সারাদিনের উপবাসের সময় চলার মতো খাবারের প্রয়োজন হয়। শরীরটাকে সুস্থ রাখার জন্য সেহরি খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, সেহরির খাবার মুখরোচক, সহজপাচ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া প্রয়োজন। অধিক তেল, অধিক ঝাল, অধিক চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া একদম উচিত নয়।
ভাতের সঙ্গে মিশ্র সবজি, মাছ অথবা মাংস খাবেন। অনেকেই মনে করেন, যেহেতু সারা দিন না খেয়ে থাকতে হবে, তাই সেহরির সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত বেশি বেশি খাবার খেতে হবে, তা মোটেই ঠিক নয়। কারণ, চার-পাঁচ ঘণ্টা পার হলেই খাদ্যগুলো পাকস্থলি থেকে অন্ত্রে গিয়ে হজম হয়ে যায়। তাই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি না খাওয়াই ভালো, বরং মাত্রাতিরিক্ত খেলে ক্ষতির শঙ্কাই বেশি।
পিপাসা নিবারণ হয়, সে পরিমাণ পানি নিজের অভ্যাস অনুযায়ী পান করতে হবে। দীর্ঘসময় অভুক্ত থাকার কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এর ফলে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। তাই ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে অন্তত দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করবেন। অনেকে পানির পরিবর্তে লেমন অথবা রোজ ওয়াটার, ফ্রুট ওয়াটার, বিভিন্ন রকম শরবত, ভিটামিন ওয়াটারসহ নানা ধরনের প্রক্রিয়াজাত পানীয় পান করেন। এগুলো পরিহার করা ভালো। রোজাদারদের শুধু বিশুদ্ধ পানি পান করাই ভালো। প্রচুর সবুজ শাকসবজি, ফলমূল আহার করা উচিত।
লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক